×

মুক্তচিন্তা

কাজী এবাদুল হক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪৭ পিএম

কাজী এবাদুল হক

কাজী এবাদুল হক

কাজী এবাদুল হক ১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি ফেনী জেলার বালীগাঁও গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী আবদুল হক ও মাতার নাম হুরেনেছা বেগম। তিনি ১৯৫১ সালে ফেনী হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৩ সালে ফেনী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৫৫ সালে স্নাতক এবং ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।

ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করার পর প্রথমে ৬ মাস ঢাকা কলেজে অধ্যয়ন করেন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের আপ্যায়ন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ঢাকা কলেজ থেকে ফেনী কলেজে আসার পর তিনি ১৯৫২ সালে ফেনী কলেজ ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।

কর্মজীবনের শুরুতে ১৯৫৯ সালে ফেনী মহকুমা আদালতে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা জেলা আদালতে, ১৯৬৬ সালে ঢাকা হাইকোর্টের এডভোকেট এবং ১৯৭২-৮৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট হিসেবে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

১৯৯০ সালে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি পদে আসীন হন। ২০০০ সালে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি পদে উন্নীত হন। ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কাজী এবাদুল হক লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত আছেন।

১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের শুরুতেই কাজী এবাদুল হক ফেনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ফেনী কলেজের তৎকালীন ছাত্রনেতা খলিল উল্লাহ, কোব্বাদ আহম্মদ, এ বি এম মূসা, শান্তিশূর, কুমুদ দত্ত, ছিদ্দিক উল্লাহ প্রমুখের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ফেনীতে ছাত্রদের মিছিলে ও সভায় স্কুলছাত্র হিসেবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রভাষার দাবিতে প্রথম সোচ্চার হয়েছিলেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও কাজী এবাদুল হক একজন সক্রিয় সংগঠক হিসেবে এই আন্দোলনে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। ভাষা আন্দোলন পরিচালনার জন্য ফেনীতে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ওই পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন কাজী এবাদুল হক।

১৯৫২ সালে প্রথমে ফেনীতে জননেতা খাজা আহম্মদের নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলেও ছাত্রদের দাবির মুখে ফেনী কলেজ ছাত্র মজলিশের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন আহমদকে আহ্বায়ক করে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পুনর্গঠিত হলে তিনি কলেজ ছাত্র মজলিশের সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ফেনীতে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং ফেনীসহ নোয়াখালী জেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে সাংগঠনিক তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পরও তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কাজী এবাদুল হক সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকায় গঠিত যুক্তফ্রন্ট কর্মী শিবিরের নির্বাচন পরিচালনার জন্য ফেনীতে গঠিত হয়েছিল ফেনী মহকুমা যুক্তফ্রন্ট কর্মী শিবির।

ওই সংগঠনের আহ্বায়ক ছিলেন কর্নেল শেখ আহমদ আর কাজী এবাদুল হক সহআহ্বায়ক মনোনীত হয়েছিলেন। আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে তিনি বিভিন্ন সময় পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। ভাষা আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়াও তিনি পরবর্তীকালে আন্দোলনের চেতনা বিকাশে ভূমিকা পালন করেন।

১৯৯৮ সালে বিচারপতি কাজী এবাদুল উচ্চ আদালতে বাংলায় নজির সৃষ্টিকারী রায় প্রদান করে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেন। উচ্চ আদালতে নজির সৃষ্টিকারী যে সফল রায় তিনি প্রদান করেছিলেন সেগুলোর মধ্যে ‘নজরুল ইসলাম বনাম রাষ্ট্র’ মামলার রায়টি অন্যতম।

‘১৫ নভেম্বর, ১৯৮৮ তারিখে বিচারপতি এ আর এম আমীরুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৮৬ সালের ৩৪৭নং দেওয়ানি রিভিশন মোকদ্দমায় সর্বপ্রথম বাংলায় রায় প্রদান করেছিলেন। কিন্তু এ রায় কোনো নজির সৃষ্টিকারী সিদ্ধান্ত প্রদান করা না হওয়ায় ওই রায়টি কোনো আইন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি।

এর দীর্ঘদিন পর বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ও বিচারপতি মো. হামিদুল হক সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চের পক্ষে বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ১৯৯৬ সনের ১৪৩নং ফৌজদারি রিভিশন মোকদ্দমায় ও ১৯৯৬ সালের ১৩নং ফৌজদারি বিবিধ মোকদ্দমায় নজির সৃষ্টিকারী যে রায়টি ১৯৯৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রদান করেছিলেন সে রায়টি ৫০ ঢাকা ল’ রিপোর্টার্সের (ডিএলআর) ১০৩ পৃষ্ঠায় সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।’

তিনি ২০১৬ সালে ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য একুশে পদক লাভ করেন।

এম আর মাহবুব ও সালেক নাছির উদ্দিন : লেখকদ্বয় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস গবেষক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App