×

পুরনো খবর

আগুনে পোড়া শরীর আপনার করণীয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৫:০৪ পিএম

আগুনে পোড়া শরীর আপনার করণীয়
চকবাজারের চুড়িহাট্টায় বুধবার রাতে বিস্ফোরণ থেকে সংঘটিত আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন ৬৭ জনের বেশি। তাই আবারো জনসম্মুখে চলে এসেছে আগুনে দগ্ধ রোগীদের ভয়াবহতা এবং প্রতিকার নিয়ে করণীয়। আমাদের দেশে সাধারণত শীতকালে আগুনে পোড়া রোগী বেশি দেখা যায়। তবে আগুনজনিত দুর্ঘটনা শীতকাল বাদে বছরের অন্যান্য সময়ও হয়, ঠিক যেমনটি হয়েছে রাজধানীর চকবাজারে। সাধারণত আগুন, গরম পানি, গরম তেল, বিদ্যুৎ, গুদামজাত রাসায়নিক পদার্থ, এসিড, ক্ষার, বোমা বিস্ফোরণ, বিকিরণ ইত্যাদি নানা কারণে পোড়াজনিত আঘাত বা বার্ন ইনজুরি হতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমাদের দেশে আগুন লাগা ও রান্নাঘরের দুর্ঘটনা যেমন গরম পানি, তেল ইত্যাদিতে পোড়ার ঘটনা বেশি। চিকিৎসা সহজলভ্য না হওয়া এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাবে আমাদের দেশে পোড়াজনিত কারণে মৃত্যুর হার বেশি। এই অগ্নিদগ্ধের শিকার হয়ে দেশে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হচ্ছেন। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। অথচ একটু সচেতন হলে বড় বিপদ থেকে নিজেকে এবং আক্রান্তকে রক্ষা করা যায়। পাশাপাশি ব্যাপক গণসচেতনতামূলক প্রচারণা, যথাযথ নিয়মনীতি অনুসরণ করে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে অগ্নিকাণ্ড কমানো যেতে পারে। পোড়ার ধরন : শুধু চামড়ার উপরিভাগ পুড়ে গেলে তাকে প্রাথমিক মাত্রার পোড়া বলা হয়। তবে চামড়া বা ত্বকে দুটি স্তর থাকে। এপিডার্মিস ও ডার্মিস। এ ক্ষেত্রে শুধু এপিডার্মিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ত্বকে পোড়ার গভীরতা ও ভয়াবহতার ওপর ভিত্তি করে পুড়ে যাওয়া অংশকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এর ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। এক ডিগ্রি বার্ন : ত্বকের উপরিভাগের একটি স্তর বা এপিডার্মিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ত্বক লাল হয়ে যায়, সামান্য ফুলে যায় এবং তীব্র জ্বালা করে। আগুনের পাশে কাজ করলে, রান্নার সময় আগুনের আঁচ বেশি লাগলে এ ধরনের বার্ন হয়। দুই ডিগ্রি বার্ন : ত্বকের উপরিভাগের দুটি স্তরের প্রথমটি (এপিডার্মিস) সম্পূর্ণভাবে এবং পরবর্তীটি (ডার্মিস) আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পোড়া স্থান লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, ফোসকা পড়ে এবং প্রচণ্ড ব্যথা হয়। সাধারণত গরম পানি বা গরম তরল দিয়ে, কাপড়ে আগুন লেগে গেলে, আগুনে উত্তপ্ত হাঁড়ি বা কড়াই খালি হাতে ধরলে বা স্পর্শ লাগলে এ ধরনের বার্ন হয়। তিন ডিগ্রি বার্ন : ত্বকের উপরিভাগের দুটি স্তরই সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ত্বকের নিচে থাকা মাংসপেশী, রক্তনালি, স্নায়ু ইত্যাদিও আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত স্থান কালো ও শক্ত হয়ে যায়, স্পর্শ করলেও ব্যথা অনুভ‚ত হয়। সরাসরি আগুনের শিখায় পুড়লে, বিদ্যুতায়িত হলে, ফুটন্ত পানি বা তরল সরাসরি শরীরে পড়লে, গ্যাস সিলিন্ডার বা বোমা বিস্ফোরণে এ ধরনের বার্ন হয়। চিকিৎসার জন্য করণীয় : এক ডিগ্রি পোড়ার ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব ১৫ থেকে ২০ মিনিট পানি ঢালতে হবে, আর তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। দুই ডিগ্রি পোড়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ পানি ঢালতে হবে, ১-২ ঘণ্টা পর্যন্ত। নিজে নিজে ফোসকা গলানোর দরকার নেই। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। তিন ডিগ্রি বার্নের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব আগুন বা গরম পদার্থ থেকে সরিয়ে পুড়ে যাওয়া কাপড় খুলে দিন। ঠাণ্ডা অথবা সাধারণ তাপমাত্রার পানি ঢালতে থাকুন বা ট্যাপের পানির নিচে বসিয়ে দিন। আক্রান্ত অংশ পরিষ্কার কাপড় বা গজ ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে একটু উঁচুতে রাখুন। আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান থাকলে পানিতে একটু লবণ মিশিয়ে শরবত, স্যালাইন বা ডাবের পানি এমনকি সাধারণ পানিও পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করতে দিন। তবে এ ধরনের রোগীদের যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। যা করা যাবে না ১. ডিম, টুথপেস্ট, মাখন এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের মলম ব্যবহার করা যাবে না। ২. ফোসকা হলে তা ফুটো করবেন না। ৩. পোড়া অংশ বরফের পানি, ফ্রিজের পানি বা বরফ দেয়া যাবে না। গরম পানিও ঢালা যাবে না। ৪. পোড়া জায়গায় যেন আঘাত বা ঘষা না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। ৫. তুলা দিয়ে ড্রেসিং করা বা পোড়া অংশ ঢেকে রাখা যাবে না। শুকনো গজ বা ব্যান্ডেজ ব্যবহার করতে হবে। ৬. আগুন লেগে গেলে ছোটাছুটি করবেন না। গুরুতর পুড়ে যাওয়ার চিকিৎসা ১. গুরুতর পুড়ে যাওয়া রোগীর শরীর থেকে যতটা সম্ভব পরিধেয় কাপড় খুলতে হবে। তবে এটা যেন টানা-হ্যাঁচড়া করে না করা হয়। এতে আক্রান্ত স্থান আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ২. আগুনে পোড়ানো রোগীকে ঠাণ্ডা পানিতে ডুবানো উচিত নয়। কারণ শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ কমে গিয়ে বিপদ হতে পারে। ৩. পোড়া রোগীর অনেকের মৃত্যু ঘটে ধোঁয়ার কারণে। ধোঁয়ার মাধ্যমে শ্বাসনালিতে কার্বন মনোক্সাইড প্রবেশ করে। তাই আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ওই স্থান থেকে রোগীকে দূরে নিতে হবে। রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস সঠিক রাখার জন্য শার্টের কলার, টাই, বুকের কাপড় শিথিল করে দিতে হবে। পোড়া রোগীর বিপদ চিহ্ন ১. রোগী অজ্ঞান হওয়া/অতিরিক্ত পানিশূন্য হয়ে শকে চলে যাওয়া ২. বাতাসের বিষাক্ত ধোঁয়া ফুসফুসে গিয়ে শ্বাসতন্ত্র সংক্রমিত হওয়া, শ্বাসনালি ফুলে যাওয়া ও শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ৩. পোড়া অংশে জীবাণুর সংক্রমণের মাধ্যমে ইনফেকশনে বিস্তৃতি লাভ করা ৪. শরীরে পানি ও লবণের অসাম্যতা (ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স) দেখা দেয়া ৫. প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া ৬. শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়া ৭. খিঁচুনি হওয়া ৮. জমাট বাঁধা রক্ত দিয়ে রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। মনে রাখুন * শরীরে আগুন লেগে গেলে ওই স্থান থেকে যত দ্রুত সম্ভব সরে যান, বিশেষ করে গাড়ির ভেতর থেকে দ্রুত বের হতে হবে। আগুনের ধোঁয়া থেকে দূরে যান। * দৌড়াবেন না। এতে আগুন আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে। * শুয়ে পড়ে বারবার মাটিতে গড়াগড়ি দিন। এতে জামা-কাপড়ের আগুন নিভে যাবে এবং আগুনের বিস্তৃতি লাভের ঝুঁকি কমবে। এ সময় দুই হাত দিয়ে মুখ, গলা ঢেকে রাখা উচিত। * মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে, ভয় পাওয়া যাবে না। ভীত হলে মানুষ স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। * হঠাৎ সিদ্ধান্তে উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে না পড়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করুন। আতঙ্কে উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়ে হাত পা ভাঙার মতো বিপদ যেমন ঘটে, তেমনি মৃত্যুও ঘটতে পারে। * বাড়িতে আগুন লাগার উপকরণ গ্যাসের চুলা, ম্যাচ বক্স, ইলেকট্রিক সুইচ সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে ও বাড়িতে আগুন নেভানোর উপকরণ রাখা উচিত। * আগুন লাগলে কী করা উচিত সে বিষয়ে বাড়ির শিশু-বৃদ্ধ সবাইকে প্রাথমিক ধারণা দিন। * চারদিকে আগুন থাকলে মাথা নিচু করে নাক চেপে দ্রুত স্থান ত্যাগ করুন। * আগুনের ওপর ভেজা কম্বল বা কাপড় বা বালু চাপা দিন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App