×

মুক্তচিন্তা

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আবারো প্রশ্নবিদ্ধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৮ পিএম

বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং-৭৩৭ মডেলের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টা ও উদ্ধারের ঘটনা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা নিয়ে। যেসব স্থানে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকে তার মধ্যে অন্যতম বিমানবন্দর।

গত রবিবার সেই নিরাপত্তা বেষ্টনী উপেক্ষা করে দুবাইগামী ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজটি ছিনতাইয়ে চেষ্টা করে এক যুবক। কিন্তু ক্রু এবং পাইলটের দক্ষতায় বিমান ও বিমানযাত্রীরা রক্ষা পেয়েছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানের নতুন উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খী ১৪২ জন আরোহী নিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে যাত্রা করে। আকাশে প্রায় ১৫ হাজার ফুট ওপরে ওঠার পরপরই উড়োজাহাজটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন অস্ত্রধারী যুবক।

ওই যুবক এক ক্রুর কাছে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে পিস্তল ও বোমাসদৃশ বস্তু বের করে বলেন, আমি বিমানটি ছিনতাই করব। এ সময় ককপিটের দরজা না খুললে বিমানটি উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন এবং গুলিও করেন। এর মধ্যে অন্য কেবিন ক্রুরা ককপিটে থাকা পাইলট ও সহকারী পাইলটকে গোপনে সাংকেতিক বার্তায় জানান যে উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা হচ্ছে। পাইলট কৌশলে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর স্পেশাল কমান্ডো ফোর্স বিমানটি চারদিক থেকে ঘিরে রাখে। শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে ময়ূরপঙ্খী জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে। অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন অস্ত্রধারী যুবক। যাত্রী ও ক্রুরা সবাই নিরাপদে বিমান থেকে নেমে আসতে সক্ষম হন। নিহত যুবক ছিনতাইয়ের সময় নিজের নাম মাহাদী বলে দাবি করেন।

এ ঘটনায় আবারো প্রশ্ন উঠেছে হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। দীর্ঘদিন থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা নিরাপত্তা নিয়ে সিভিল এভিয়েশনকে সতর্ক করে আসছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের যন্ত্রপাতি স্থাপন সম্ভব হয়নি। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মানুষের শরীর হাতিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করা হয়।

বিশ্বমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন ছিল তা এখনো করা যায়নি। শুধু শাহজালাল নয়, দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে। এ প্রবণতা রোধ করতে না পারলে তা দেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে এর আগেও নানা প্রশ্ন উঠেছিল। সেই প্রশ্ন যে অমূলক ছিল না, তার প্রমাণ পাওয়া গেল আবারো।

২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা প্রশ্ন তোলায় ইউরোপের দেশগুলোতে কার্গো পণ্য সরাসরি অবতরণ নিষিদ্ধ করা হয়। কয়েকটি রুটে সরাসরি বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেডলাইনকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিভিল এভিয়েশনের কর্মীদের নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও তা কাজে আসেনি। শাহজালাল বিমানবন্দরের দুর্বল ব্যবস্থাপনা শুধু দেশে নয়, বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা চাই সঠিক তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হোক। সর্বোপরি বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে ভাবতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App