‘র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলেই বহিষ্কার, র‌্যাগিং বিরোধী সচেতনতামূলক র‌্যালি, শিক্ষকদের নিয়ে ভিজিলেন্স টিম গঠন, আবাসিক শিক্ষকদের পালাক্রমে হলে অবস্থান ও পর্যবেক্ষণ, প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা দিবা-রাত্রি মোবাইল ডিউটি পালন, রাত ১০টার পরে জয় বাংলা গেট ব্যতীত সকল গেট বন্ধ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন শিক্ষার্থীদেরকে পূর্ববর্তী সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং সিনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও কাউন্সেলিং করাসহ নানামুখি প্রদক্ষেপ গ্রহন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের নির্দেশে র‌্যাগিং এরমত সামাজিক অপরাধ রুখতে বদ্ধ পরিকর জাবি প্রশাসন। এ লক্ষ্যে গতকাল রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে এগারোটায় ব্যাগিং এর বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক বিশাল র‌্যালির আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রধান অতিথি হিসাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, এম.পি এ র‌্যালির উদ্বোধন করেন। ‘র‌্যাগিং মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়বো, সকলে মিলে সৌন্দর্য্যপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করবো’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে র‌্যাগিং বিরোধী র‌্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। ‘ফাপড় আর ইন্টিমেসি-এক সঙ্গে হয় না’, ‘ভয় দেখিয়ে ভাই ডাকিয়ে, ভাই হওয়া যায় না’, ‘যে সিনিয়র ম্যানারস শেখায়, সেই সিনিয়র ভালোবাসে না’, ‘র‌্যাগিং এর মধ্যে নয়, এসো ভাই- বোনের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করি’- ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড নিয়ে র‌্যাগিং বিরোধী র‌্যালি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। দুই দিনব্যাপী র‌্যালির প্রথমদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম (শিক্ষা), কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, ছাত্র-কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, প্রক্টরসহ প্রায় দেড় হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। র‌্যালির শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান (এম.পি) বলেন, ‘র‌্যাগিং একটি জঘন্য সামাজিক অপরাধ, র‌্যাগিং একটি অপসংস্কৃতি। এটা শিক্ষার্থীদের মেধা-মনন বিকাশে বাঁধা প্রদান করে। শিক্ষার্থীদের এই অপরাধ থেকে রেব হয়ে সুস্থ-সুন্দর ক্যাম্পাস গড়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, র‌্যাগিং একটি নেতিবাচক সামাজিক ব্যধি। এটি নবীন শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনকে বাধাগ্রস্থ করছে। ক্যাম্পাসকে র‌্যাগিংমুক্ত করতে এবং সবাইকে সচেতন করতে আমাদের এই আয়োজন। র‌্যাগিং বন্ধে ইতোপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। র‌্যাগিংয়ের বিষয়ে প্রমাণ পেলেই বহিষ্কার করা হবে। নবীনদের ভালবেসে কাছে ডাকলে সম্পর্ক গভীর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় র‌্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস গড়া সম্ভব।’ এছাড়া র‌্যাগিং প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি বিজ্ঞপ্তিতে কিছু নির্দেশনা প্রদান করেছে। এগুলো হল- শিক্ষক ক্লাসে প্রবেশের পূর্বে শ্রেণীকক্ষের দরজা বন্ধ করা যাবে না, হলে যাতে র‌্যাগিং না হয় সেজন্য ছাত্রনেতা/নেত্রীদের দায়িত্ব নিতে হবে, ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরকে দুর্গম-লোক চলাচল কম-নির্জন স্থানে নেওয়া যাবে না, শিক্ষার্থীদেরকে সার্বক্ষণিক আইডি কার্ড/লাইব্রেরি কার্ড/ বিভাগের কার্ড সাথে রাখতে হবে, রাত ১০টার পরে জয় বাংলা গেট ব্যতীত সকল গেট বন্ধ থাকবে, ব্যাচ দিবস পালন করা যাবে না এবং রাত ১২টার পরে বটতলা সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও খাবার দোকান খোলা রাখা যাবে না।