×

মুক্তচিন্তা

এম কবির উদ্দিন আহমদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:১১ পিএম

এম কবির উদ্দিন আহমদ

এম কবির উদ্দিন আহমদ

এম কবির উদ্দিন আহমদ ১৯৩৪ সালের ৩১ মার্চ আসামের করিমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো. আজগর ও মাতা উমিরুন্নেসা চৌধুরীর আদি নিবাস ছিল ভারতবর্ষের আসাম রাজ্যে। ভারত বিভক্তির আগে মো. আজগর সিলেট জেলার ম্যাজিস্ট্রেট পদে সরকারি চাকরিতে বহাল ছিলেন।

১৯৩৯ সালে রানী এলিজাবেথ তার সিলভার জুবিলিতে আজগর সাহেবকে রুপার মেডেল দিয়ে পুরস্কৃত করেন। তিনি এক সময় ন্যাশনাল টি-বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। কবির উদ্দিন আহমদের শৈশব ও প্রাথমিক শিক্ষা জীবন কাটে সিলেটে।

১৯৪৮ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্টার মার্কসহ প্রথম বিভাগের ম্যাট্রিক, ১৯৫০ সালে মেধা বৃত্তিসহ সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। ১৯৫৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে এনাটমি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেই সঙ্গে হোস্টেল সুপারিনটেনডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬০-৬৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৩ সালের মার্চ মাসে সরকারি বৃত্তি নিয়ে প্রথমে ডাবলনি ও পরবর্তী সময় লন্ডনে রয়েল কলেজ অব সার্জন থেকে এফআরসিএস পড়াশোনা করেন ও সেইসঙ্গে গ্রেইজ হাসপাতালে সার্জারি প্রশিক্ষণ নেন।

১৯৬৬ সালে রয়েল কলেজ অব সার্জন থেকে এফআরসিএস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে যুক্তরাজ্য থেকে তিনি সাফল্যের সঙ্গে জেনারেল সার্জারি, গ্যাস্ট্রোএন্ডোলজি, অর্থপেডিক, থরাসিস সার্জারির ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে দেশে ফিরে অধ্যাপকের চাকরি না পাওয়ায় মিটফোর্ড হাসপাতালে সুপি ডিউটিতে ছিলেন।

১৯৬৮ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২-১৯৮১ পর্যন্ত সিলেট মেডিকেল কলেজে সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। ১৯৮২-৮৬ পর্যন্ত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রফেসর অব সার্জারি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

১৯৯০-৯১ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের ৩০ মার্চ প্রিন্সিপাল পদে বহাল থাকা অবস্থায় সরকারি চাকরি থেকে অবসর পান। অবসর নেয়ার পর বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। হলি ফ্যামেলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ডাইরেক্টর পদে নিযুক্ত ছিলেন।

কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুরে অবস্থিত জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগে মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে কলেজের প্রতিষ্ঠার সময়ে অনবদ্য ভূমিকা পালন। উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজের ভিজিটিং প্রফেসর, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রে (সাভার) প্রফেসর ও সার্জারি পদে ছিলেন।

এম কবির উদ্দিন আহমদ বহু গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি ১৯৫৩ সালে হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদিত একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম সংকলনে প্রবন্ধ লিখেন যা স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র ষোলো খ-ে প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি তখন ঢাকা মেডিকেল তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

১৯৫২ সালের একুশের আন্দোলনের তিনি একজন সংগঠক। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে স্থাপিত প্রথম শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের অন্যতম সহযোগী ছিলেন তিনি। ১৯৫৫ সালে তিনি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে তিনি দুঃসাহসিক ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭১ সালে তিনি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেননি। তবে অস্ত্রের মুখে নিজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একমাত্র সিনিয়র সার্জন যিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নয় মাস একাধারে ইপিআর বাঙালি, বিহারি জানা-অজানা মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান মানুষের সেবা করে গেছেন।

১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে তার অবদান স্মরণীয়, ১৯৯০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল পদে থাকাকালে ডা. মিলন হত্যাকে কেন্দ্র করে এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি প্রথম চাকরি থেকে পদত্যাগের ষোষণা দেন যা বিবিসির খবরে প্রচারিত হয়। ১৯৯৭ সালে নারী ও শিশুদের উন্নয়নে প্রতিষ্ঠা করেন বেগম রোকেয়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়ন সংস্থা।

এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণের ক্ষেত্রে ছিলেন অন্যতম কারিগর।

১৯৫৪-৫৫ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। এই মহান শল্যচিকিৎসক ও ভাষাসৈনিক ১৯৯৮ সালের ১০ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।

এম আর মাহবুব ও সালেক নাছির উদ্দিন : লেখকদ্বয় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস গবেষক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App