×

জাতীয়

পুরান ঢাকা ‘মৃত্যুফাঁদ’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:৪৭ এএম

পুরান ঢাকা ‘মৃত্যুফাঁদ’
পুরান ঢাকার চকবাজার চুড়িহাট্টায় মর্মস্পশী ও হৃদয়বিদারক অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জনের প্রাণহাণির ৩ দিন পরও অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত স্পষ্ট হয়নি। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ার বেশ কয়েকটি কারণ সামনে আসলেও কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা নিয়ে রয়েছে ধোয়াশা। কারণ অনুসন্ধানে শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গঠিত ৬টি তদন্ত কমিটি পৃথকভাবে কাজ করছে। তবে পুরান ঢাকায় ছোট বড় ১০ সহস্রাধিক কেমিক্যাল কারখানার মধ্যে প্রায় দুই হাজারের ট্রেড লাইসেন্স থাকলেও নেই বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র। ৮ সহস্রাধিকের কোনো ধরনের অনুমোদনই নেই। আবার পরিদপ্তরের অধিভুক্ত ২৯ ধরনের কেমিক্যাল থাকলেও সেখানে মজুদ রয়েছে প্রায় ৮০০ ধরনের কেমিক্যাল। স্থানীয়রা জ্ঞাতভাবে এসব ‘মৃত্যুফাঁদ’ পাতলেও ভ্রুক্ষেপ নেই কারো। নিমতলীর ঘটনার পর হৈ চৈ পড়লেও অবস্থা যা ছিল তাই রয়েছে। গতকাল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহম্মদ খান গতকাল শনিবার বিকেলে ভোরের কাগজকে বলেন, চকবাজারের চুড়িহাট্টার আগুনের তীব্রতা নানা কারণে ছড়িয়েছে। আগুনের উৎস এখনো স্পষ্ট না হলেও অনেকগুলো কারণ সামনে রেখে তদন্ত চলছে। এরমধ্যে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও বেশকিছু আলামত পাওয়া গেছে। সেগুলো তদন্তে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। তিনি বলেন, পুরান ঢাকা থেকে সব ধরনের কেমিক্যাল কারখানা ও গুদাম এখনই সরাতে হবে। আবাসিক এলাকায় কোনোভাবেই কেমিক্যাল কারখানা রাখা যাবে না। রং, সলিউশন, টিনার, নেলপলিশসহ অনেক ধরনের দাহ্য পদার্থ রয়েছে সেখানে। তিনি বলেন, সরকার কেমিক্যাল পল্লী করতে চায়। এজন্য তারা আন্তরিক। এরইমধ্যে আধুনিক ঢাকা গড়ার অংশ হিসেবে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ঠিক রেখে যানজট কমানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সরু রাস্তা বড় করে ডিশের লাইন মাটির নিচ দিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের পরিচালক শামসুল আলম বলেন, পুরান ঢাকায় কোনো ধরনের কেমিক্যাল কারখানা বা গুদামের ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। পরিদপ্তরের অধিভুক্ত ২৯ ধরনের কেমিক্যাল থাকলেও সেখানে রয়েছে ৮’শর অধিক ধরনের কেমিক্যাল। তিনি বলেন, পুরান ঢাকা থেকে সব ধরনের কেমিক্যাল কারখানা ও গুদাম বুড়িগঙ্গার পাড়ে বা ঢাকার বাইরে এখনই সরাতে হবে। সরকার কেমিক্যাল পল্লীর কাজ শুরু করেছে। চুড়িহাট্টার সেই ওয়াহেদ ম্যানশনের বেইজম্যান্টে থাকা ১১ ধরনের কেমিক্যালের মধ্যে আয়রন অক্সাইড, আয়েনিক ইয়েলো, আয়েনিক ব্লু, আয়েনিক রেড, অয়েল রেড, এসিড গ্রিন, রেড কালার পিগমেন্ট, ব্লু কালার পিগমেন্ট, ইয়েলো কালার পিগমেন্ট, কার্বন ইনজেনিরিয়াড রয়েছে। গুদামে আয়ন অক্সাইডের ছোট ছোট অনেকগুলো ড্রাম রয়েছে। বিভিন্ন রংয়ের কাজে ব্যবহার করা এগুলোর বেশিরভাগই কাগজের মোড়কে মোড়ানো। যার মধ্যে অধিকাংশই অদাহ্য পদার্থ। তবে কার্বন ইনজেনিরিয়াড ও রেড কালার পিগমেন্ট মৃদু দাহ্য পদার্থ। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে তারা মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করেন। গত সোমবার নতুন করে অভিযান শুরু কলেও এরমধ্যে বুধবার রাতে ঘটে যায় লোমহর্ষক ঘটনা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লে. কর্নেল জুলফিকার রহমান জানান, রাসায়নিক পদার্থ থাকার কারণে আগুন বেশ দ্রুত ছড়িয়েছে। এ ছাড়া আগুনের তীব্রতাও ছিল বেশি। ঘটনাস্থলে পারফিউম ও লাইটার রিফিল করার হাজার হাজার ক্যান ছিল। ইনস্যুলেশন টেপও ছিল। এসব কেমিকেল দ্রুত আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, অতিমাত্রায় দাহ্য, কত মাত্রায় দাহ্য ও অদাহ্য এমন তিন ধরনের পদার্থ রয়েছে পুরান ঢাকায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল কৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া বলেন, রাসায়নিক দ্রব্য বা দাহ্য পদার্থ ঝুঁকিপূর্ণ বলেই আগুন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আবাসিক এলাকায় কোনোভাবেই এসব থাকতে পারে না। নিমতলীর ঘটনার পর কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হলে চুড়িহাট্টার ঘটনা ঘটত না। এখানে সিটি করপোরেশন, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ অনেক সংস্থার উদাসীনতা রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবছর তিন’শ ত্রিশ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি টাকার কেমিক্যাল আমদানি করা হয়। এ জন্য সমন্বিত কমিটি করা প্রয়োজন। যার উদ্যোগ এখনই নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App