×

বিনোদন

বিষাদগ্রস্ত থাকলেও আমি আশাবাদী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:২১ পিএম

বিষাদগ্রস্ত থাকলেও আমি আশাবাদী

বছরখানেক ছিলেন গানের বাইরে। নেই নাটক-সিনেমাতেও। সম্পৃক্ত হয়েছেন রাজনীতিতে। আগামী সপ্তাহেই ফিরবেন নতুন গান নিয়ে। বলছি সঙ্গীতশিল্পী খান আসিফুর রহমান আগুনের কথা। সমসাময়িক নানান বিষয় নিয়ে সম্প্রতি ভোরের কাগজের মুখোমুখি হয়েছিলেন বহুমুখী প্রতিভার এই শিল্পী। সঙ্গে ছিলেন রাব্বানি রাব্বী

প্রশ্ন : অনেকদিন আপনাকে গানে কিংবা সিনেমায় পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন গান কবে পাব? আগুন : খুব শিগগিরই জি-সিরিজ থেকে একটা গান আসছে। এক সপ্তাহ পরই হয়তো তা ইউটিউবে পাওয়া যাবে। এখন থেকে ঠিক করেছি, প্রতি মাসে একটা করে গান অনলাইনে রিলিজ দিব। আর এই গানটা বাবা-মাকে নিয়ে লেখা। জুলফিকার জাহেদীর কথায় সুর করেছেন খায়েম আহমেদ। ভিডিও পরিচালনা করেছেন মঞ্জু। আপাতত নাটক-সিনেমা হাতে নেই। প্রশ্ন : বর্তমানে গান বা সিনেমা রিলিজ হচ্ছে অনলাইনে; এক সময় সিডি কিংবা ক্যাসেট আকারে পাওয়া যেত। এই পরিবর্তনকে আপনি কীভাবে দেখেন? আগুন : অবশ্যই তা ইতিবাচক। কারণ প্রযুক্তির এই যুগে যে কোনো কিছু শ্রোতাদের কাছে সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে তা আমি ভালো চোখে দেখি। কিন্তু শিল্পের সঙ্গে শিল্পী কিংবা দর্শকের যে আবেগ কাজ করে সেই জায়গাটা একটু নষ্ট হয়েছে এবং তা আরো নষ্ট হবে। ভালো কিছু কাজ দর্শকের কাছে না পৌঁছানোরও একটা সম্ভাবনা থাকে। কারণ সস্তা জনপ্রিয়তা দিয়ে ঢেকে আছে আমাদের চারপাশ। প্রশ্ন : কী রকম? তার জন্য কি প্রযুক্তি বা অনলাইনের কোনো ভ‚মিকা আছে বলে মনে করেন? আগুন : সহজ করে বলতে গেলে তা হলো, ইউটিউব বা অনলাইনে হাজার হাজার লিংক রয়েছে। হাত বাড়ালেই হাজার রকম অখাদ্য বা না দেখার মতো জিনিস আসছে। বর্তমান প্রজন্ম এসব মুখরোচক শিল্প নিয়েই মেতে আছে। একদিকে ওদেরও কোনো দোষ নেই। ওদের যে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে এমন লোক কোথায়? বলবে যে, এটা দেখছিস ঠিক আছে কিন্তু এই দরজাটা খুলেও একটু দেখ শিল্প কী, নাটক-সিনেমা-গান কাকে বলে! আসলে অনলাইনে ইতিবাচক-নেতিবাচক দুদিকই আছে। আর ইতিবাচক দিকটা একমাত্র তারাই বহন করছে যারা ন্যূনতম শিক্ষিত। এই শিক্ষা শুধু একাডেমিক শিক্ষা নয়। যাদের মানবতা বোধ রয়েছে তারাই তা ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করছে। প্রশ্ন : তার মানে আপনি ক্লাসিক শিল্পের দিকে ইঙ্গিত করছেন? আগুন : হ্যাঁ, বর্তমানে আমরা একই গতানুগতিক ধারায়ই পথ চলছি। ক্লাসিক কাজ হচ্ছে; তবে তা খুব বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন রাঁধুনী যেমন প্রতিদিন একই পদ দিয়ে রান্না করে; তার বাহিরে আরো কিছু পদ বা উপকরণ দিয়েও রান্না করা যায় তা ভুলে যাচ্ছে। শিল্পী বাজারের খোঁজ নিয়ে শিল্প তৈরি করে যাচ্ছে, তা কেন? আমি মনে করি একজন শিল্পীর বাজার বা বর্তমান ট্রেন্ড সম্পর্কে জানার দরকার নেই; বাজারের খোঁজ রাখবেন ব্যবসায়ী। কিন্তু যেসব শিল্পোত্তীর্ণ কাজ হচ্ছে তা যদি সঠিকভাবে সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় তবে অডিও বাজারে আবারো আশি দশকের মতো বিপ্লব নেমে আসবে। প্রশ্ন : গত শতাব্দীর আশি থেকে নব্বই দশকের সময়টাতে আমাদের দেশে ব্যান্ড সঙ্গীতের উত্থান হয়েছে বলে ধরা হয়। সঙ্গীতের সেই সোনালি দিন নিয়ে কিছু বলুন... আগুন : আশি-নব্বই দশক ছিল ব্যান্ড সঙ্গীতের সোনালি সময়। এমন সুন্দর সময় আমার জীবনে আমি আর দেখিনি। বিশেষ করে আজম খান, লাকী ভাই থেকে যাত্রা শুরু করে, তারপর সোলস তাকে একটা ফর্মে নিয়ে আসে। ফিডব্যাক, এলআরবি, ওয়ারফেজ তাদের অনেক ঝড়, কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। আমরা তাদের তৈরি গ্রাউন্ডে এসেই ব্যান্ড করেছি। ১৯৮৮ তে ‘সাডেন’ গঠন করেছিলাম। একটা অ্যালবাম (অচেনা) রিলিজের পর তা ভেঙে যায়। তারপর এককভাবে গান করতে শুরু করি। প্রশ্ন : তাহলে বলা যায় আপনি আশাবাদী? কিন্তু আপনার প্রায় গানে একধরনের হতাশার ঘোর লক্ষ করা যায়! আগুন : গানে আমি হতাশা, বিষণ্ণতার কথা লিখতে পছন্দ করি। বেদনার গান গাইতে ভালোবাসি। দুঃখবোধ আমাকে প্রবল ভাবে নাড়া দেই। বিষাদগ্রস্ত থাকলেও আমি আশাবাদী, সামনে সুসময় আসছে। বর্তমান প্রজন্ম নিয়েও আমি সমানভাবে আশাবাদী। কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া ছাত্র আন্দোলনগুলো আমাকে আশার আলো দেখায়। তাদের আপাতদৃষ্টে স্রোতে গা ভাসানো মনে হলেও তারা কিন্তু আদর্শচ্যুত নয়। এখন হয়তো সবকিছু গিলছে, কিন্তু এমন সময় আসবে যেদিন তারা সবকিছু বমি করে ফেলে দিবে। প্রশ্ন : অনেকদিন পর তো আপনার গান আসছে? আগুন : ঠিক অনেকদিন না, এক-দেড় বছর হবে! এমন বিরতি মাঝে মধ্যে হয়। এর আগেও ‘আমার স্বপ্নগুলো’ অ্যালবাম মুক্তি পাওয়ার আগে একটা বিরতি দিয়েছিলাম। প্রশ্ন : ছেলেবেলায় কী ধরনের গান পছন্দ করতেন? কাদের গান শুনতেন? আগুন : ছেলেবেলা নিয়ে কী বলবো! আমার জীবনই কেটেছে দুই হিরো-হিরোইন, বাবা-মা কে দেখতে দেখতে। তবে ওই সময় মান্না দে, কিশোর কুমার, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় শুনতাম। লেপ বা কাঁথা মুড়ি দিয়ে। কিন্তু তাদের লাইনে আমি যাইনি, আমি আমার মতো গান-বাজনা করেছি। রক বা পপ মিউজিক করেছি। তবে গানের যে ব্যাকরণ তা তাদের কাছ থেকে শিখেছি। একটু বড় হয়ে মার্ক নফলার; গিটার ওরিয়েন্টেড গান শুনেছি। প্রশ্ন : পাঠ্যপুস্তকের বাইরে গল্প-সাহিত্যের বই পড়া হয়? আগুন : উপন্যাস তেমন পড়া হয় না, তবে কবিতা পড়ি। গান লিখতে লিখতে কোথাও ঠেকে গেলে ওই কবিতাই আমার আশ্রয়। রবীন্দ্রনাথের গীতবিতান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা সুকান্তর কবিতা খুব ভালো লাগে। একসময় নিজেও কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি। একটা বইও বের করেছিলাম; তা এখন অতীত। প্রশ্ন : শুনেছি আপনি রাজনীতিতে আগ্রহী; কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কি আপনি যুক্ত? আগুন : না, তেমনভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। তবে আমি মেয়র নির্বাচন করতে ভীষণ ইচ্ছুক। আমি মনে করি বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম একজন সৎ এবং ক্ষ্যাপাটে নেতৃত্ব চায়; যার সঙ্গে সবাই মিলে এ সমাজ ব্যবস্থায় একটা ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাবে। যে কিনা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। তরুণ প্রজন্ম এমন পরিবর্তন চায়। মানুষ এমন নেতৃত্ব চায় যার পেছনে সে দাঁড়াতে পারবে। আমাদের এই বর্তমান সময়ে এমন নেতৃত্বের বড় অভাব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App