×

জাতীয়

কাল কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০২:১৪ পিএম

কাল কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল! আধুনিক-উন্নত দেশে নদীর তলদেশ দিয়ে টানেলের বিষয়টি হয়তো অনেকেই জানি। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি দেশে নদীর নিচ দিয়ে টানেল নির্মাণের কথা ভাবা যায়? হ্যাঁ, তাই ঘটতে চলেছে চট্টগ্রামে। ‘ওয়ান টাউন টু সিটি’ এ ধারণাকে সামনে রেখেই কর্ণফুলী নদীর এপারের শহরের চেয়ে আরো অধিক অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ নগরী হতে যাচ্ছে ওপারের আনোয়ারাসহ আশপাশের এলাকা। বাংলাদেশ শুধু নয়, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যেই প্রথম এমন একটি টানেল নির্মাণ হতে যাচ্ছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। আগামীকাল ২৪ ফেব্রæয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরকালে এই টানেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে এক জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গেলে কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এর পাশাপাশি প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়। আগামীকাল এটির নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পাশাপাশি আনোয়ারাতে চীনা অর্থনৈতিক জোনেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শুধু কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা আনোয়ারায় চীনা অর্থনৈতিক জোনই নয়, বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার উন্নয়নযজ্ঞ চলছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আউটার রিং রোড, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বে টার্মিনাল, মীরসরাইয়ের ইকোনমিক জোন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত বহুল প্রত্যাশিত রেললাইন, নগরীর ভেতরে এবং নগরীর বাইরে দিয়ে যোগাযোগের আধুনিক সুপরিসর সড়ক-ফ্লাইওভারসহ নানা প্রকল্প। পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুক‚লে থাকলে আগামী ৫ থেকে ৮ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল নদীর নিচ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল : চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ২ কিলোমিটার ভাটির দিকে অর্থাৎ নৌবাহিনীর কলেজের কাছ দিয়ে টানেলের প্রবেশ পথ হচ্ছে এবং এটি নদীর তলদেশ দিয়ে গিয়ে অপর পাড়ে সার কারখানার কাছ দিয়ে উঠছে। পূর্ব প্রান্তের ৪ দশমিক ৯৫২ কিলোমিটার এবং পশ্চিম প্রান্তের ৭৪০ মিটার সংযোগ সড়কসহ টানেলের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৯ কিলোমিটারের কিছু বেশি। এ ছাড়া টোল বুথ এবং টোলপ্লাজা নির্মাণ করতে হবে ৭ হাজার ২০০ বর্গমিটার। চার লেনের টানেলে উভয় পাশে দুই লেন করে থাকবে। দুইটি টিউব নির্মিত হবে। প্রতিটি টিউবের ব্যাস হবে ১০ দশমিক ৮ মিটার। টানেলটি কর্ণফুলী নদীর কমপক্ষে ৪২ দশমিক ৮ মিটার গভীর দিয়ে যাবে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ভোরের কাগজকে বলেন, এটি বাস্তবায়িত হলে শুধু চট্টগ্রামই উপকৃত হবে না, পুরো বাংলাদেশই অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হবে। তিনি এই সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি নির্মিত হলে তা এশিয়ান হাইওয়েতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, চট্টগ্রাম নগরীর যানজটও অনেকটা কমে যাবে। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, কর্ণফুলী টানেল বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের চেহারায় আমূল পরিবর্তন আসবে। শুধু যোগাযোগের ক্ষেত্রে নয়, আনোয়ারায় যে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন সরকার গড়তে চাইছে তাতেও চট্টগ্রামবাসী অনেক লাভবান হবে। এতে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানীর মর্যাদায় আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। এই টানেল কর্ণফুলী নদীর উভয় তীর এমনকি সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ভ‚মিকা পালন করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বঙ্গোপসাগরের তীরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আউটার রিং রোড প্রকল্প : চট্টগ্রাম শহর রক্ষায় দীর্ঘদিনের দাবি, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, আবাসন ও পর্যটনের অপার সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে সর্ববৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হচ্ছে আউটার রিং-রোড। প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর সর্বদক্ষিণ-পশ্চিমে পতেঙ্গা থেকে উত্তর-পশ্চিমে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রিং রোডটি শহর রক্ষায় একটি কার্যকর বাঁধের ভ‚মিকা পালন করবে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। নগরীর পশ্চিম ও দক্ষিণ প্রান্তে বিশেষত উপক‚লীয় এলাকায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করে। সেখানে রয়েছে দেশের প্রধান জ্বালানি তেল স্থাপনাসমূহ, চট্টগ্রাম বন্দরের একাংশ, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নৌ ও বিমান ঘাঁটি, দুটি ইপিজেড, ভারী শিল্প, কল-কারখানা, সাইলো ইত্যাদি। বিশাল এলাকাকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসের কবল থেকে সুরক্ষায় এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, আবাসন ও পর্যটন খাত সম্প্রসারণ, প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে হালিশহর, ফৌজদারহাট, সাগরিকা, পতেঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় উপশহর সৃজনের সুযোগ তৈরি হবে। প্রসার ঘটবে পর্যটন শিল্পেরও। এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েসহ চউকের বিভিন্ন বাইপাস সড়ক : চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) আওতাধীন প্রায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের পাশাপাশি পতেঙ্গার টানেলের মুখ থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত চার লেনের ১৭ কিলোমিটার রাস্তা ও বাঁধের নিচে পর্যটনের জন্য ৫ কিলোমিটারের একটি বিশেষ রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে। রাস্তাটি সম্পূর্ণ নির্মিত হলে ফৌজদারহাট থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য গাড়ি আউটার রিং রোড ধরে টানেল হয়ে কক্সবাজার রোডে গিয়ে পৌঁছবে। ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রাম বায়েজিদ বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ছয় কিলোমিটার বাইপাসটি নির্মিত হলে গাড়ি শহরে প্রবেশ না করে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য জেলায় চলাচল করতে পারবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ভোরের কাগজকে বলেন, সবগুলো প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নে কাজ চলছে। তিনি আরো বলেন, এই দেশে ৩ লাখ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট হবে, ৩০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ হবে, ৩২ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট হবে- এটি ১০ বছর আগেও কেউ চিন্তা করতে পারেনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App