×

জাতীয়

অগ্নিকাণ্ডে ধারাবাহিক প্রাণহানি মামলা হলেও বিচার হয় না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৪৫ এএম

অগ্নিকাণ্ডে ধারাবাহিক প্রাণহানি মামলা হলেও বিচার হয় না
একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির পর অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা হলেও বিচার হয় না। আবার অনেক ঘটনার মামলাই হয় না। ফলে যাদের কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে বরাবরই। আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টসে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ১১২ জন নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও বিচার হয়নি ৬ বছরেও। পুরান ঢাকার নিমতলীতে কেমিক্যালের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড শিশুসহ ১২৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রায় ৯ বছর পরও কোনো মামলা দায়ের হয়নি। ২০১০ সালের ৩ জুন ওই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ঢাকার মিরপুরে টিআরএস গার্মেন্টস, টুং হাই গার্মেন্টস, কার্ডিয়াল ডিজাইন, পিয়ারলেস নিটওয়্যার, গুলশান ডিসিসি মার্কেট, কারওয়ানবাজার বিসিআইসি ভবন, তেজগাঁও এবং মোহাম্মদপুরে একাধিক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারে মর্মস্পর্শী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭০ জনের প্রাণহানির পর অবহেলাজনিত মৃত্যুর মামলা ও বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সূত্রমতে, ২০১৭ সালের ৩ জুলাই গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে বয়লার বিস্ফোরণে ৫ জন নিহত হয়। ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর টঙ্গীতে ট্যাম্পকো ফয়েলস প্যাকেজিং কারখানায় অগ্নিকাণ্ড নিহত হয় ২৪ জন। এ ছাড়া গাজীপুরের টার্গেট গার্মেন্টস, ইকো গার্মেন্টস, এম এম গ্রুপ পল্লী কনসেশন সোয়েটার লিমিটেড, বিসিক শিল্প নগরীর সিনথেটিকস গার্মেন্টস, যমুনা ফ্যাক্টরিতে ঘটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর আশুলিয়ার জিরাবোর কালার ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এ ঘটনায় পুলিশ মামলা রেকর্ড করেনি। অবশ্য ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের এক হিসাব মতে, গত এক বছরে দেশে ১৬ হাজারের বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর অধিকাংশ ঘটনায় মামলা হয়নি, যেসব ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে তার কোনো সুফল মেলেনি। জানা গেছে, আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারা যুক্ত করা হয়। মামলাটি তদন্তের পর ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পুলিশের ইন্সপেক্টর এ কে এম মহসীনুজ্জামান। মামলার আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আবদুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল। আসামিদের মধ্যে মো. শহিদুজ্জামান দুলাল, মোবারক হোসেন মঞ্জু, মো. রানা ওরফে আনোয়ারুল ও মো. শামিম মিয়া পলাতক রয়েছেন। ভবনটির নকশায় ত্রুটি ও জরুরি নির্গমনের পথ না থাকায় এবং আগুন লাগার পর শ্রমিকরা বাইরে বের হতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মীরা অগ্নিকাণ্ডকে অগ্নিনির্বাপন মহড়া বলে শ্রমিকদের কাজে ফেরত পাঠিয়ে কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। এরপর থেকে আসামিপক্ষের লোকজনের আর্থিক প্রলোভনের কারণে সাক্ষীরা আদালতে হাজির হচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আর সাক্ষীদের মধ্যে দুজন মালিকের পক্ষেই সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ঘটনার ৬ বছর পার হলেও শেষ হয়নি মামলার বিচারকাজ। নিমতলি ট্র্যাজেডির ঘটনায় মামলা দায়ের না হওয়ায় পার পেয়ে গেছে দায়ীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App