×

আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেট-এর মহান একুশে উদযাপন

Icon

শামীম আহমেদ

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৭:৩৯ এএম

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেট-এর মহান একুশে উদযাপন
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেট-এর মহান একুশে উদযাপন
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেট-এর মহান একুশে উদযাপন
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেট-এর মহান একুশে উদযাপন
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেছে। এ উপলক্ষ্যে গতকাল বুধবার ২০ ফেব্রুয়ারী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাত ৮টা ৩০ মিনিট থেকে রাতে ১২ টা এক মিনিট প্রথম প্রহর তা অব্যাহত থাকে। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন-এর স্বাগত ভাষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় । এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল এর কনসাল জেনারেল মিজ সাদিয়া ফয়জুননেসা। এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। একুশের কবিতা আবৃত্তি, গান, গানের সাথে একক ও দলীয় নৃত্য এবং সমবেত সঙ্গীত দিয়ে সাজানো সাংস্কৃতিক পর্বটি পরিচালনা করেন নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশের খ্যাতনামা নাট্যশিল্পী টনি ডায়েস এবং নৃত্যশিল্পী প্রিয়া ডায়েস। সাংস্কৃতিক পর্ব শেষে রাত দশটায় শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অতপর দিবসটি উপলক্ষে দেয়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। জাতিসংঘে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) এর বার্ষিক শুনানিতে যোগদান উপলক্ষে নিউইয়র্ক সফররত বাংলাদেশের সংসদ সদস্য ডা. এ এফ এম রুহুল হক, এমপি, এমপি, মো: আবু জাহির, এমপি, বেনজীর আহমেদ, এমপি এবং আহসান আদেলুর রহমান, এমপি অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাঙালির উপস্থিতিতে নিউইয়র্ক সময় ২১শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে মিশনস্থ অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি” গানের সাথে সাথে রাত ১২টা ১মিনিটে মিশনে স্থাপিত শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এর নেতৃত্বে স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ এবং নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল এর কনসাল জেনারেল মিজ সাদিয়া ফয়জুননেসার নেতৃত্বে কনস্যুলেট জেনারেলের কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, যুক্তরাষ্ট্র সেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, যুব লীগ, ছাত্র লীগ, নিউইয়র্ক সিটি আওয়ামী লীগ, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল ও সোনালী এক্সচেঞ্জসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং উপস্থিত প্রবাসী বাঙালিগণ। বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ডা. এ এফ এম রুহুল হক, মো: আবু জহির, বেনজীর আহমেদ এবং আহসান আদেলুর রহমান। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. এ এফ এম রুহুল হক, এমপি বলেন, “জাতির পিতা ভাষা আন্দোলনসহ সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জাতির পিতা না থাকলে আমরা স্বাধীনতা পেতাম না, বাংলাদেশ পেতাম না”। তিনি ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রæয়ারির মিছিল, ভাষার জন্য শহীদ হওয়া, প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণসহ বর্তমান শহীদ মিনার স্থাপনের ইতিহাস তুলে ধরেন। তাঁর বক্তৃতায় উঠে আসে প্রভাত ফেরিসহ একুশে ফেব্রæয়ারির প্রথম প্রহর উদযাপনের ক্রম:ইতিহাস। তিনি বলেন, “বাহান্ন আর একাত্তর আমাদের চেতনা; আমাদের অস্তিত্ব”। প্রবাসী নতুন প্রজন্ম যাতে এই চেতনাতলে থাকতে পারে এবং বাংলা ভাষার চর্চ্চা অব্যাহত রাখে সে বিষয়ে প্রবাসী বাঙালিদের সুদৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান রুহুল হক এমপি। স্বাগত ভাষণে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “বিশ্বসভায় বাঙালি জাতির ভাষা ‘বাংলা’ প্রথম উচ্চারিত হয় ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতির পিতার প্রথম বাংলায় ভাষণের মধ্য দিয়ে”। তিনি আরও বলেন, “জাতির পিতার পথ ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দিয়ে যাচ্ছেন যারফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উচ্চকিত হচ্ছে বাংলা ভাষা”। রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে ২১ শে ফেব্রæয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রæয়ারিতে রাজধানী ঢাকায় ভাষার জন্য শহীদ হওয়ার মতো পৃথিবীর একমাত্র ঘটনা স্বীকৃতি পায় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে”। “ভাষা শহীদদের এই আত্মত্যাগ বিশ্ববাসীকে একটি দিন উপহার উপহার দিতে পেরেছে, এর থেকে গর্বের বিষয় বাঙালিদের জন্য আর কী হতে পারে? বলে মন্তব্য করেন স্থায়ী প্রতিনিধি। প্রবাসী বাঙালিদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, আমরা যেন শুধু একটি দিনের মধ্যেই বাংলাভাষা চর্চ্চাকে সীমিত না রাখি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষা উজ্জ্বীবিত রাখতে পরিবার এবং সমাজে বাংলার শুদ্ধ চর্চা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত মাসুদ। নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের কনসাল জেনারেল মিজ্ সাদিয়া ফয়জুন্নেছা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারায় একুশের চেতনা সম্পৃক্ত করতে কনস্যুলেট জেনারেলের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন 'আগামী ২২শে ফেব্রæয়ারি জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল এবং কুইন্স লাইব্রেরির যৌথ আয়োজনে নিউইয়র্কের ফ্লাশিং-এ বহভাষা ও বহুসংস্কৃতির আবহে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে যা প্রবাসী বাঙালিসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষকে একুশের চেতনাতলে আবদ্ধ করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। জাতির পিতা কারাগারে থেকে কীভাবে ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তা উল্লেখ করেন কনসাল জেনারেল। আরও বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, উপদেষ্টা মাসুদুল হাসান, মুক্তিযোদ্ধা মুকিত চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সেক্রেটারি আবু তালেব চান্দুসহ যুক্তরাষ্ট্র সেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, যুব লীগ, ছাত্র লীগ, নিউইয়র্ক সিটি আওয়ামী লীগ, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ ও সোনালী এক্সচেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্র শাখার প্রতিনিধিসহ প্রবাসী বাঙালি নেতৃবৃন্দ। সংসদ সদস্যসহ সকল বক্তাগণ মহান ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বদ্বু হয়ে অব্যাহতভাবে পরপর তিনবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের হাতকে আরও শক্তিশালী করতে সকল প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান এবং সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বিনির্মাণে স্ব স্ব অবস্থান থেকে অবদান রাখার অনুরোধ জানান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্থায়ী মিশনের হেড অব চেন্সারি নিরুপম দেব নাথ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App