×

জাতীয়

কত প্রাণ গেলে নিরাপদ হবে পুুরান ঢাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:১৪ পিএম

কত প্রাণ গেলে নিরাপদ  হবে পুুরান ঢাকা

ফাইল ছবি

নিমতলীর ভয়াবহ ট্র্যাজেডির পর গোটা পুরান ঢাকার অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কথা বলা হলেও গত ৯ বছরে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখানকার অলিগলিতে এখনো রয়েছে ভয়াবহ দাহ্য পদার্থের গুদাম, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার। হাজার হাজার শিল্প-কারখানায় ঠাসা এলাকাগুলোতে নেই অগ্নিনির্বাপক গাড়ি প্রবেশের সুবিধাও। কথা ছিল, সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে। কিন্তু আর কত প্রাণ ঝরলে তা করা হবে, চকবাজার ট্র্যাজেডির পর সে প্রশ্ন নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর ঘটনায় ১২৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ পুরান ঢাকা থেকে অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দাহ্য, বিস্ফোরক ও রাসায়নিকের গুদাম স্থানান্তরের সুপারিশ করে। এ ছাড়া জরাজীর্ণ বিদ্যুতের তার, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারহেড ট্রান্সফরমার, ত্রুটিপূর্ণ গ্যাসের সংযোগ, সরু রাস্তাঘাট, যানজট প্রভৃতি বিষয়কে এ সংক্রান্ত ভয়াবহ সমস্যা বলে চিহ্নিত করা হয়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন সে সময় জানান, পুলিশ, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার পর তালিকা করে ৮০০ রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত কাজগুলো আর হয়নি। ২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নিমতলী ট্র্যাজেডি দিবসে যোগ দেন সাঈদ খোকন। সেখানে গিয়ে তিনি ঘোষণা দেন, পুরান ঢাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল গুদাম তুলে দেয়া হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েও একই ঘোষণা দেন তিনি। বলেন, রাজধানীর পুরান ঢাকায় কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যালের গোডাউন থাকবে না, থাকবে না, থাকবে না। তবে এতদিন পর্যন্ত কীভাবে থাকল- এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল অনেকের মনে। পুরান ঢাকা থেকে বিপজ্জনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা গুদাম স্থানান্তর নিয়ে মূলত দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের মধ্যে দোটানা ভাব লক্ষ্য করা গেছে। চকবাজার ট্র্যাজেডির পরও দায়িত্বশীলদের বক্তব্যে সে কথা স্পষ্ট হয়েছে। রাজ্জাক ভবনে রাসায়নিক পদার্থের অবৈধ মজুদ ছিল বলে বিস্ফোরক অধিদপ্তর জানালেও অগ্নিকাণ্ডের জন্য ভিন্ন কারণকে বেশি দায়ী করতে দেখা গেছে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনকে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন দগ্ধদের দেখতে এসে তিনি বলেন, সেখানে কেমিক্যাল নয়, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটেছিল। আর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই ঘটনায় আবারো শিক্ষা পেয়েছেন বলে জানান। বলেন, যেন এমনটি আর না ঘটে সে জন্য ব্যবস্থা নেবেন। আগুনের সূত্রপাত যেখান থেকেই হোক না কেন- দাহ্য পদার্থ, রাসায়নিক, যানজট ও ওভারহেড ট্রান্সফরমারের কারণে যে ভয়াবহ হয়েছে, তা নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন এন্ড মেনটেননেন্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ জানান, তদন্তের পর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার ও বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের কথা জানতে পেরেছেন তারা। পাশের ভবনগুলোতে কেমিক্যাল, প্লাস্টিকের কাঁচামালসহ দাহ্য পদার্থের মজুদ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অত্যন্ত সরু গলি হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে না পারায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে বলে জানান তিনি। পুরান ঢাকার প্রবীণ বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, গত ৯ বছর আগে যেসব কারণে আগুনে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এখনো সে কারণগুলোই আছে। শুধু ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের কিছু অগ্নি নির্বাপণকারী মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, এখানে শত শত বছর ধরে যেভাবে জনসংখ্যা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে, সেভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে পারেনি সরকার। রাস্তাঘাট প্রশস্ত করা, ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা, গুদাম বা গ্যাস-বিদ্যুতের সরঞ্জাম সরাতে কখনো দেখা যায়নি কোনো সংস্থাকে। ফলে আগুনের ঝুঁকির মধ্যেই প্রতিনিয়ত বসবাস করছেন এখানকার মানুষ। আর কত প্রাণ ঝরলে এসব সমস্যার সমাধান হবে, তা জানতে পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলী ট্র্যাজেডি থেকে আমরা কোনো শিক্ষা নেইনি। আর এ কারণেই চকবাজারের ঘটনাটি ঘটল। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে পুরান ঢাকার জন্য আরো ভয়াবহ ঘটনা অপেক্ষা করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App