×

জাতীয়

টেকনাফ থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ইয়াবা ব্যবসা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:১১ পিএম

টেকনাফ থেকেই নিয়ন্ত্রণ  করা হচ্ছে ইয়াবা ব্যবসা
টেকনাফ ডিগ্রি কলেজের পাশেই সরু গলি। গলি দিয়ে সামনে গেলেই মোড়। মোড়ের ঠিক ডান পাশে একটি আলিশান বাড়ি। বাইরের লাল গেটটি ভেতর থেকে আটকানো। গেটে নক করতেই পাশে এসে দাঁড়ালেন ৩ যুবক। তারা যেন ওই সরু গলিতে প্রস্তুতই ছিলেন। ভেতর থেকে এক যুবক গেটটি খুলে পরিচয় জানতে চাইলেন। পরিচয় দিয়ে সরওয়ার আলমের (৩২) খোঁজ জানতে চাইলে ওই যুবক বলেন, বাসায় কেউ নেই। বাসাটি দেখে মনে হচ্ছে, এখানেই সবাই বসবাস করেন- এ কথা বলার পরই ভেতর থেকে অর্ধ বয়স্ক এক মহিলা এসে বলেন, সরওয়ার বাসায় নেই, যা বলার আমাকে বলেন। এরই মধ্যে সাদা লুঙ্গি পরে দাঁত ব্রাশ করতে করতে সরওয়ার হাজির। সাংবাদিক জানার পর বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলেন। সঙ্গে ওই ৪ যুবকও ঢুকলেন। মনে সংশয় নিয়ে তাদের সঙ্গে ভেতরে গেলাম আমরা। কী করেন আপনি- জানতে চাইলে সরওয়ার বলেন, টাইলসের দোকান আছে। পাশাপাশি একটি মরিচের মিল চালাই। এলাকার সবাই বলে সরওয়ার আলম বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী। আপনিই কি সে? উত্তরে সরওয়ার বলেন, কেউ হয়তো আমার বাড়ি ও ব্যবসা দেখে শত্রুতা করতে পারে।আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই। তার বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রতিবেশীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকার অন্যতম শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সে। তার বাবা একসময় বাসের হেল্পার ছিলেন। সরওয়ারও এক ব্যবসায়ীর অধীনে চাকরি করে কষ্টে দিন কাটাতেন। কিন্তু ৩-৪ বছর আগে ইয়াবা ব্যবসায় নাম লিখিয়ে তার অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে। অন্য ব্যবসা চালুর পাশাপাশি গড়েছেন আলিশান বাড়ি। ক্রসফায়ার-আত্মসমর্পণ এসবের মধ্যেও বহাল তবিয়তে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। শহর ছাড়িয়ে এবার একটু দূরে যাওয়া যাক। হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা হামিদ হোসেন। তার বাবার নাম মৃত শিকদার আলী। তালিকাভুক্ত এই ইয়াবা ব্যবসায়ীরও রয়েছে আলিশান বাড়ি। তবে বাড়িটি এখন বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। প্রতিবেশীরা বলছেন, গা-ঢাকা দেয়ার নাম করে সারা দিন পাশের পাহাড়ে সময় কাটান হামিদ। রাত হলেই ফেরেন আলিশান বাড়িতে। রোহিঙ্গাদের সমন্বয়ে গড়ে তোলা ইয়াবা সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন এই বাড়ি থেকেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু সরওয়ার আলম কিংবা আবদুল হামিদই নন, টেকনাফের প্রায় অর্ধশত ইয়াবা ব্যবসায়ী গা-ঢাকা দেয়ার নাম করে চালিয়ে যাচ্ছেন ইয়াবা ব্যবসা। অজ্ঞাত কারণে তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে না। এমনকি বর্তমানে যারা ইয়াবা ব্যবসা করছেন তাদের প্রাসাদও রয়েছে অক্ষত। তবে পুলিশ বলছে, টেকনাফের শত শত ইয়াবা ব্যবসায়ীর উপর নজরদারি করা সম্ভব নয়। আর প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তারও করা যাচ্ছে না। কিন্তু ইয়াবার তালিকায় যাদের নাম আছে, তাদের ব্যাপারে অভিযোগ পেলেই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। ভোরের কাগজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের জামাল মেম্বার ও তার ছেলে শাহ আজম আত্মসমর্পণ করলেও অপর ছেলে শাহ নেওয়াজ ও তার স্ত্রী বাড়িতে থেকেই আগের মতো চালিয়ে যাচ্ছেন ইয়াবা ব্যবসা। টেকনাফ সদরের আবদুল কাদের উত্তর লম্বরীর এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করে এখনো ইয়াবা ব্যবসা চলমান রেখেছেন। তার রয়েছে আলিশান বাড়ি ও কোটি কোটি টাকার সম্পদ। টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসার অন্যতম হোতা নুরুল হক ভুট্টো গা-ঢাকা দিলেও তার নির্দেশে চলছে আলাদা সিন্ডিকেট। ইয়াবার শুরুর দিকের গডফাদার মৃত আবুল বশারের ছেলে রমজান আলী চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে দীর্ঘদিন ধরে গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও ইয়াবার সিন্ডিকেট বজায় রেখেছেন। টেকনাফের খে খে পাড়ায় তার রয়েছে ৫ তলা আলিশান বাড়ি। সেখানে থাকা স্বজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে তার। কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন নিয়মিত টেকনাফের বাড়িতে যাতায়াত করে ইয়াবার সিন্ডিকেট বজায় রেখেছেন। এ ছাড়া আত্মসমর্পণকারীদের অনেক স্বজন এখনো ইয়াবা ব্যবসা সচল রেখেছেন বলে জানা গেছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, টেকনাফে শত শত ইয়াবা ব্যবসায়ী। এদের আলাদাভাবে নজরদারি করা সম্ভব নয়। যাদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ পাই তাদের বিরুদ্ধেই তদন্ত শুরু করি। ইয়াবা দমনে ইতোমধ্যে পুলিশ অনেক সাফল্য দেখিয়েছে। পুরোপুরি সফল হতে আরো একটু সময় লাগবে। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যেই সব নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App