×

জাতীয়

স্বস্তি ফেরেনি টেকনাফে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:১৫ পিএম

স্বস্তি ফেরেনি টেকনাফে
শত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন টেকনাফের ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শুধু এই উপজেলাতেই কমপক্ষে ৩৫ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। কিন্তু এরপরও বন্ধ হয়নি ইয়াবার পাচার। আগের মতোই প্রতিনিয়ত আসছে ইয়াবা। তাই এখনো অস্বস্তি কাটেনি এলাকাবাসীর। তারা বলছেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একাংশ আত্মসমর্পণ করলেও অধিকাংশই রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তালিকার শীর্ষস্থানীয় অনেক গডফাদার এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের থামানো না গেলে টেকনাফ ইয়াবা মুক্ত হবে না। এলাকাবাসীর এই বক্তব্যের সত্যতা মিলছে র‌্যাব-বিজিবির জব্দ তালিকাতেও। টেকনাফ বিজিবি-২ এর তথ্যানুসারে, চলতি মাসের ১৮ দিনেই জব্দ করা হয়েছে ৩ লাখ ৪১ হাজার ৩৯৪ পিস ইয়াবা। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে টেকনাফের নাজিরপাড়া এলাকা থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বিজিবি। অন্যদিকে এই ১৮ দিনে টেকনাফ থেকে ১৬ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এ ছাড়া পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানেও উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু ইয়াবা। অথচ এ সময় পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজতে ছিলেন আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। এতেই বোঝা যায়, ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ঠিকই তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে টেকনাফের সচেতন মহলের দাবি, ইয়াবার বদনাম ঘোচাতে দ্রুতই তালিকার সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হলে ইয়াবার চালান আনা সম্ভব হবে না। এ জন্য বিজিবি ও কোস্ট গার্ডকে আরো সতর্ক হতে হবে। এ ছাড়াও টেকনাফের প্রতিটি এলাকায় মাদকবিরোধী কমিটি গঠন ও স্কুল-মাদ্রাসায় সচেনতনতা বৃদ্ধির প্রতি জোর দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকা অনুযায়ী, টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের শীর্ষে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির নাম। পরিবারের ১২ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। এমনকি তার আরেক ভাই তালিকাভুক্ত গডফাদার মুজিবর রহমানও রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদের ছেলে দিদার আত্মসমর্পণ করলেও তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়াও টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দিন, বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিনসহ ওই তালিকায় নাম থাকা বেশিরভাগ প্রভাবশালী এখনো আত্মসমর্পণ করেননি বা গ্রেপ্তার হননি। এলাকাবাসীর দাবি, তালিকায় নাম থাকার পরও যারা গ্রেপ্তার হয়নি তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে ইয়াবা ব্যবসা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা ভোরের কাগজকে বলেন, ইয়াবা ব্যবসা করে রাতারাতি ধনী হওয়ার আশায় টেকনাফের বেশিরভাগ লোক এ ব্যবসায় নাম লেখায়। বর্তমানে এটি অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী মহল ঠিকই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে টেকনাফের যে দুর্নাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়িয়েছে সেটি থেকে আমরা বের হতে পারছি না। কোথাও গিয়ে টেকনাফের পরিচয় দিতে মন চায় না। একমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলেই এই সমস্যা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে। আত্মসমর্পণের বিষয়ে তারা বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদের আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু তারা বের হয়ে আর ইয়াবা ব্যবসা করবে না এর গ্যারান্টি কে দেবে। আর তাদের সিন্ডিকেটগুলোই বা কোথায়? তাদেরও আইনের আওতায় এনে টেকনাফকে ইয়াবামুক্ত ঘোষণা করা হোক। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী ভোরের কাগজকে বলেন, আত্মসমর্পণ ইয়াবা পাচারের বন্ধের শেষ বিষয় বা সমাধান নয়। ইয়াবা পাচার বন্ধ করতে হলে সীমান্তে ও জলপথে নিশ্ছিদ্র টহল ও কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। অন্যথায় কখনো ইয়াবা পাচার বন্ধ হবে না। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, বড় বড় ইয়াবা কারবারি গা-ঢাকা দিলেও যাদের ন্যূনতম আইন সম্পর্কে ধারণা নেই; তারাই মূলত এখনো ইয়াবা পাচার অব্যাহত রেখেছে। সে ক্ষেত্রে তাদের মোটিভেশনের প্রয়োজন রয়েছে। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে নুর হোসেন বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০ থেকে ৫৫ জন সচেতন নাগরিককে নিয়ে মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে এর সঙ্গে জড়িত করা হবে। টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মুন্না বলেন, আত্মসমর্পণকে সবাই ভালো চোখেই দেখছে। কিন্তু তাদের ছাড় দেয়া যাবে না। কারণ তাদের ছাড় দিলে এই আশায় এলাকায় নতুন নতুন ব্যবসায়ীর জন্ম হতে পারে। ইয়াবা ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, টেকনাফের কোনো ইয়াবা ব্যবসায়ীকেই ছাড় দেয়া হবে না। আগের তুলনায় টেকনাফে ৭০ শতাংশ চালান কমে গেছে। পর্যায়ক্রমে আরো কমে আসবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App