×

অর্থনীতি

দাতাদের অর্থ ফেরত যাচ্ছে বাড়ছে সরকারি বরাদ্দ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:৩০ পিএম

দাতাদের অর্থ ফেরত যাচ্ছে বাড়ছে সরকারি বরাদ্দ
বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) অর্থ ব্যবহার করতে না পারায় ৯ হাজার কোটি টাকার বিদেশি ঋণ সহায়তা ফিরিয়ে দিয়ে সরকারের তহবিল থেকে ২২ হাজার কোটি টাকারও বেশি নতুন বরাদ্দ নিচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। নতুন বরাদ্দের অধিকাংশই অনুমোদনহীন প্রকল্পে যাচ্ছে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে (আরএডিপি) সে সব অনুমোদনহীন নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক চাপে রয়েছে পরিকল্পনা কমিশন (পিসি)। কমিশন সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কয়েকশ অননুমোদিত নতুন প্রকল্প আরএডিপিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে পিসির ওপর। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বরাদ্দ ছাড়া নতুন প্রকল্প গ্রহণ টেকসই উন্নয়নের যাত্রা ব্যাহত করতে পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যাচাই-বাছাই করে চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে আরএডিপি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এডিপির সংশোধন চ‚ড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এতে সংশোধিত এডিপির মোট আকার দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। কমিশন সূত্রে জানা যায়, অর্থবছরের মাঝে এসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তাদের বরাদ্দ প্রকল্প ভেদে কমবেশি করে। অনেক সময় বেশি বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্পের কাজের গতি থাকে না। আবার অনেক প্রয়োজনীয় প্রকল্পে বরাদ্দ থাকে না। যার কারণে এই সময়ে এসে পর্যালোচনা করে বরাদ্দ বাড়ানো-কমানো হয়। এবারো অনেক প্রকল্পের বিদেশি ঋণের টাকা ব্যবহার না করতে পারায় সেগুলো ফেরত দিতে হয়েছে। আবার অনেক নতুন প্রকল্পে দেশীয় উৎস থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ও বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের বরাদ্দের বিষয়টি পরিকল্পনা কমিশন চ‚ড়ান্ত করে না। এ জন্য স্থানীয় সরকার ও বৈদেশিক অংশের বরাদ্দ চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশি অংশে বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হচ্ছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে বরাদ্দ বাড়ছে ২২ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অংশে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৫১ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে বরাদ্দ কমছে ৯ হাজার কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব খলিলুর রহমান বলেন, এ মাসের শেষের দিকে এনইসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সেখানে সংশোধিত এডিপি চ‚ড়ান্ত করা হবে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদার ভিত্তিতেই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোর সামর্থ্য ও সক্ষমতা বিবেচনা করে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, বাড়তি বরাদ্দের মধ্যে সড়ক ও মহাসড়ক খাতে বাড়ছে ৫ হাজার ৭৯৭ কোটি, বিদ্যুৎ খাতে ৪ হাজার কোটি, গৃহায়ন খাতে ২ হাজার ২৯৫ কোটি, স্থানীয় সরকারে ৪ হাজার ৭০ কোটি, নৌপরিবহনে ১ হাজার ৬০০ কোটি, শিক্ষা খাতে ১ হাজার ৬০০ কোটি, তথ্য মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ১০০ কোটি, নির্বাচন কমিশনে ২ হাজার ৪০০ কোটি, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে ২০০ কোটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ৩৭২ কোটি টাকা। অন্যদিকে বরাদ্দ কমছে কয়েকটি খাতে। এর মধ্যে রয়েছে সেতু বিভাগে আড়াই হাজার কোটি, রেল বিভাগে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এডিপি সংশোধনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ৬ মাসের বাস্তবায়নের চিত্র দেখা হয়। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম সাত মাসে এডিপি বরাদ্দ থেকে প্রায় ৫৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এ ব্যয় মোট বরাদ্দের ৩৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে সরকার এডিপি বরাদ্দের মাত্র ৩৯ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছিল, যা ছিল ওই বছরের মোট বরাদ্দের ৩২ দশমিক ৪১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুনে গঠিত বর্তমান এডিপিতে এক হাজার ২৪২টি উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি তহবিল বরাদ্দ ছাড়া এক হাজার ২২২টি অনুমোদনহীন প্রকল্পও অন্তর্ভুক্ত ছিল। উন্নয়ন বিশ্লেষকরা বলেন, আরএডিপিতে তহবিল বরাদ্দ ছাড়া বিপুলসংখ্যক অননুমোদিত প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা, বাংলাদেশের মতো অর্থনীতির জন্য খারাপ। জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. এম এ তসলিম বলেন, সরকার যদি আরএডিপিতে বিপুলসংখ্যক নতুন প্রকল্প বিবেচনা করে তবে তা ঋণের বোঝা আরো বাড়িয়ে দেবে। কারণ রাজস্ব আদায় এখনো সন্তোষজনক নয়। পাশাপাশি যদি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে তাহলে প্রকল্পগুলোর গুণগত মান গুরুতরভাবে প্রভাবিত হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য বলেন, মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ ও শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতাদের চাপের কারণে প্রতি বছর এডিপিতে শত শত অননুমোদিত প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা ছাড়া তাদের কাছে কোনো বিকল্প নেই। তবে এই প্রকল্পের বেশিরভাগই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয় না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App