×

মুক্তচিন্তা

আবদুল মতিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:২৬ পিএম

আবদুল মতিন

আবদুল মতিন

ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার ধুবালীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৪৫ সালে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং পরে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন।

১৯৪৮ সালে পাবনায় এবং পরবর্তীকালে ১৯৫১ সাল থেকে ঢাকায় ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালের পর ভাষা আন্দোলনে ভাটা দেখা দেয়াতে আন্দোলন চাঙ্গা করতে মতিনের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয় এবং তিনি আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।

এই বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বায়ান্নর আন্দোলনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের জন্য যে ক’জনের বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্বদানের দায়ে তাকে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হয়।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে আবদুল মতিনের নামটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হয়ে আছে। তিনি ‘ভাষা মতিন’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। আবদুল মতিন বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বভাবতই তিনি আন্দোলনকে সংগঠিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কর্মতৎপর ছিলেন।

সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের ২০ ফেব্রুয়ারি নবাবপুরের মিটিংয়ে যে চারজন ২১ ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে ভোট দেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ১৯৪৮ সালে কার্জন হলের কনভোকেশন সভায় আবদুল মতিন অন্যদের সঙ্গে জিন্নাহ সাহেবের রাষ্ট্রভাষা উর্দুর সপক্ষে বক্তব্যের পর ‘নো, নো’ বলে প্রতিবাদ করেছিলেন।

১৯৫২ সালে মার্চের প্রথমদিকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য তিনি কারাবরণ করেন। আবদুল মতিন বায়ান্নর মার্চে গ্রেপ্তার হন এবং দীর্ঘ এক বছর পর ১৯৫৩ সালের মার্চে মুক্তি লাভ করেন। ২ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে ২য় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করলে তৎকালীন মুসলিম ছাত্রলীগের পাবনা শাখার নেতা হিসেবে আবদুল মতিন ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ওই সময় পাবনার আঞ্চলিক আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের (১১ মার্চ ১৯৫০) পর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে চাঙ্গা করার জন্য তিনি নানাভাবে তৎপর হন। তারই উদ্যোগে ১৯৫১ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা পতাকা দিবস পালিত হয়। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দীন কর্তৃক ঢাকার পল্টনে এক জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দেয়া হলে প্রতিবাদকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবদুল মতিন।

১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত আন্দোলনকে চাঙ্গা রাখতে আবদুল মতিন অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দীন কর্তৃক ঢাকার পল্টনে এক জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দেয়া হলে প্রতিবাদকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবদুল মতিন।

নাজিমুদ্দীনের একতরফা ঘোষণার প্রতিবাদে ৩০ জানুয়ারি ১৯৫২ তারিখে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ তারিখে সমগ্র তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের সিদ্ধান্ত হয়। আবদুল মতিন ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন।

পরবর্তী দিন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে ৩১ জানুয়ারি ১৯৫২ তারিখে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সময় ২১ ফেব্রুয়ারির ওই কর্মসূচিকে সমর্থন করা হয় এবং আবদুল মতিনকে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদের সদস্যরূপে গ্রহণ করা হয়। ১৯৫২ সালের ২৭ মার্চ পল্টনে খাজা নাজিমুদ্দীনের বক্তৃতায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা করা হয়।

এরই প্রতিবাদে ২১ ফেব্রুয়ারির হরতাল কর্মসূচির ডাক তিনিই দিয়েছিলেন এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ তা সমর্থন করেছিল। বস্তুত অমর ‘একুশ’ সৃষ্টির পথ এভাবেই অগ্রসর হয়েছিল। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আমতলার সভায় মতিনের ১৪৪ ধারা ভাঙার দূরদর্শী ও ঐতিহাসিক ভাষণ ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেছিল। একুশের হত্যাকাণ্ডের পর ডা. গোলাম মাওলার কক্ষে যে সভা আহ্বান করা হয় সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্র হত্যার পর তার স্বাক্ষরে লিফলেট ছাপা হয় এবং তা ছাত্র জনতার মাঝে বিলি করা হয়। পরদিন গায়েবানা জানাজা ও শোক মিছিলে তিনি শরিক হন। ২০১৪ সালে ৮ অক্টোবর এই বীর ভাষাসংগ্রামী মৃত্যুবরণ করেন। অমর একুশের আন্দোলনে আবদুল মতিনের অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App