×

জাতীয়

হাটহাজারীতে ভেজাল ঘি এর একাধিক কারাখানার সন্ধান!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:২৭ পিএম

হাটহাজারীতে ভেজাল ঘি এর একাধিক কারাখানার সন্ধান!
হাটহাজারীতে বেশ কয়েকটি ভেজাল ঘি কারাখানার সন্ধান পেয়েছে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। একের পর এক ঘি কারখানায় অভিযানে বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। কোন রকম দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য ছাড়াই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রং ও ফ্লেভারসহ নানা উপকরণ মিশিয়ে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি হচ্ছে স্পেশাল ‘ঘি’। হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অব্যাহত রয়েছে এই ‘ঘি’ তৈরির কার্যক্রম। কারিগর, স্থান ও নাম ভিন্ন হলেও একই পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে এই ‘ঘি’। ভেজাল ঘি কারখানায় অভিযানের খবর হাটহাজারী সহ পার্শ্ববর্তী উপজেলায় ছড়িয়ে পড়লে জনমনে নানান প্রশ্নের গুঞ্ছন শুনা যাচ্ছে, তাহলে এত দিন আমরা খেলাম কি? হাটহাজারী চট্টগ্রাম নগরীর পাশের উপজেলা হওয়ায় ঘি মালিকরা আস্তানা গেরেছে এখানে। সম্প্রতি এখানে এমনই পাাচঁটি ভেজাল ঘিয়ের কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার অনুমোদন বা বিএসটিআই এর লাইসেন্স ছাড়াই তৈরি করা হচ্ছে এসব ঘি। প্রশাসন ৫টি কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান ভেজাল ঘি ও ঘি তৈরির নানা উপকরন জব্দ করেছে প্রশাসন।পাশাপাশি প্রত্যকটি কারখানা সিলগালা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এদিকে পাম অয়েল, গরু-মহিষের চর্বি, সুজি, রঙ ও ফেভিকল আঠা- এই পাঁচ মিশালি একত্রে চুলায় জ্বাল দিলেই হয়ে যায় ঘি। তার সঙ্গে একটু ফ্লেভার মিশালেই তা থেকে ছড়ায় ঘ্রাণ। এর নাম দেওয়া হয়েছে 'খাঁটি গাওয়া ঘি'। এরপর ঝকঝকে আকর্ষণীয় কৌটায় ভরার পর বোঝার উপায় থাকে না- ভেতরে থাকা ঘি আসলেই ঘি নাকি কয়েক পদের অখাদ্য দিয়ে বানানো বিষ। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ভেজাল ঘি তৈরি ও বাজারজাত করে আসছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। মানুষ আসল ঘি মনে করে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক এই ভেজাল ঘি কিনে খাচ্ছে। দেখা গেছে বিভিন্ন নামকরা ব্র্যান্ড, কখনওবা নিজেরাই আকর্ষণীয় লেবেল লাগিয়ে ভেজাল ঘি বাজারজাত করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ঘিয়ের কৌটায় থাকে বিএসটিআইর নকল সিল। লেবেলে লেখা থাকে '১০০% খাঁটি ঘি'। গোয়ালা প্লাস পিউর ঘি, রাজা, জব্বার, গোল্ডেন- এমন সব আকর্ষণীয় নাম দিয়ে আবার কখনও পিওর, রয়েল, রাজরানী, রাজবাড়ী এমন হরেক নামে লেবেল লাগিয়ে বাজারে ছাড়া হয় বিষাক্ত ঘি। স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব ঘি কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাটহাজারীর প্রত্যান্ত অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিয়ে, মেজবান বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপক আয়োজন করা হয়। শীত মৌসুমে এটা আরও বাড়ে। এসব অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের জন্য কোরমা, পোলাও, বিরিয়ানিতে ঘিয়ের ব্যবহার হয়ে থাকে। ফলে এই মৌসুমকে নিজেদের মৌসুম করে নেয় ভেজাল কারবারিরা। ভেজাল ঘি কারখানার মালিকদের সঙ্গে বাবুর্চিদের 'বিশেষ সম্পর্ক' থাকায় তারা এসব ঘি কিনতে অনুষ্ঠান আয়োজকদের উদ্বুদ্ধ করেন। আবার দোকান মালিকরা কম দামে পাওয়ায় বেশি লাভের জন্য ক্রেতাদের গছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আবার বাবুচিদের বিভিন্ন রকম পুরস্কার দিয়ে ঘি ব্যবহারে আগ্রহ যোগান দিয়ে থাকেন ঘি মালিকরা । এদিকে ভেজালবিরোধী অভিযানের জন্য যতেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিনের। তবে অভিযান আঁচ করতে পেরে এসব ভেজাল ঘি তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ওই কারখানার প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।তার নেতৃত্বে চালানো অভিযানে হাটহাজারী উপজেলায় মিলেছে পাচঁটি ভেজাল ঘিয়ের কারখানা।তিনি আফসোস করে তিনি বলেন, ১% জনগনও যদি আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে তাহলে অভিযান পরিচালনা করে তাদের নির্মূল করা যেত। কেউ না কেউ অবশ্যই তাদের অবস্থান জানে কিন্তু আমাদের তথ্য দেয় না। তিনি সকলকে ভেজালের বিরুদ্ধে তথ্য দেয়ার অনুরোধ জানান। এর মধ্যে হাটহাজারী পৌর এলাকার নাজিরপাড়ায় দুটি, বুলবুলি পাড়ায় একটি, বুড়িশ্চর ইউনিয়নের মধ্যম বুড়িশ্চর এলাকায় একটি ও ছিপাতলী ইউনিয়নের বোয়ালীয়ার মুখ এলাকায় একটি কারখানার সন্ধান মিলেছে। এসব কারখানায় তিন হাজার ৭০০ লিটার ভেজাল ঘি, ঘি রাখার ১২ হাজার খালি কৌটা, ২০০ কেজি ডালডা, ভেজাল ঘি তৈরির ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ও রঙ জব্দ করে পরে এগুলো ধ্বংস করা হয়। এসব কারখানায় গিয়ে ঘি তৈরির প্রক্রিয়া ও ব্যবহূত সরঞ্জাম দেখে হতবাক হতে হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এর সহকারী পরিচালক ডা: সেখ ফজলে রাব্বী ভোরের কাগজকে জানান, খাদ্যদ্রব্যের মিশ্রণে রঙ ও ফ্লেভার স্বাস্থ্যের জন্য প্রচুর ক্ষতিকর। ভেজাল ঘি খাওয়ায় হৃদরোগের ঝুকিঁ বাড়ায়, লিভারের সমস্যা, ক্যান্সার, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগ হয়। এগুলো থেকে সাবধান থাকতে হবে সকলকে।সাথে সাথে জনগনকে সচেতন হয়ে এদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App