×

অর্থনীতি

সোয়া ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণার প্রস্তুতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:২৫ পিএম

সোয়া ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণার প্রস্তুতি
নতুন সরকার। নতুন মন্ত্রিসভা। আর তাই আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাজেট প্রণয়নে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে দুই বছরের মধ্যে রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নে। ওই সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্য দূর করে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালন করবে নতুন সরকার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। গত ১০ বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার বাড়ানো হবে। সোয়া ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল সম্প্রতি সচিবালয়ে এক বৈঠকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বাজেট প্রণয়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিগত ১০ বছরের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে বাজেটে। তিনি বলেন, দারিদ্র্যবিমোচন, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। বাজেট প্রণয়নে এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। সরকারের আয় বাড়ানোর জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জনগণকে স্বস্তির মধ্যে রেখেই সরকারের আয় বাড়ানো হবে। এ ক্ষেত্রে কর না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর ওপর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। জানা গেছে, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। পদ্মা সেতুসহ ১০ মেগা প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগের ১০ প্রকল্প এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ জোর দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দ্রুত বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট বাস্তবায়ন শাখা হতে এ ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আগামী বাজেটে দশটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনের কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে দারিদ্র্যবিমোচন এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অবসান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও আইসিটি খাত উন্নয়ন, বৃহৎ প্রকল্প (মেগাপ্রজেক্ট) বাস্তবায়ন, ব্লু -ইকনোমি-সমুদ্র সম্পদভিত্তিক উন্নয়ন, বেসরকারিখাত ও বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা  এবং গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদ ও গণমুখী দক্ষ জনপ্রশাসন নিশ্চিত করা। এর ফলে সর্বস্তরে উন্নয়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলটির সর্বশেষ সম্মেলনের ঘোষণা পত্রেও বলা হয় দেশের সব উন্নয়ন হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অগ্রগতি অব্যাহত রাখা হবে। আমার গ্রাম আমার শহর : আগামী বাজেটে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়ের নাম হচ্ছে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’। এ বিষয়টিকে একটি উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দর্শন বলে আখ্যা দিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান। তার মতে, এই বিষয়টির ফলে কাঁচা রাস্তা পাকা হবে, থাকবে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সুবিধা। এই দর্শনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে। তিনি বলেন, শহরের মতো গ্রামের মানুষ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পাবেন। এটি একটি প্রশংসীয় ও ভালো উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এদিকে, গত বছরের নভেম্বর মাসে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির এক বৈঠকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের একটি রূপরেখা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এতে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বা সাড়ে ১৩ শতাংশ বেশি। জানা গেছে, আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের গ্রাম উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। এজন্য কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ, গ্রামের স্কুল কলেজগুলো আধুনিকায়ন ও শিক্ষারমান উন্নয়ন, কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, কৃষি ভর্তুকি বাড়ানো ও উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যদাম নিশ্চিত করা, ব্যাংকের শাখা বাধ্যতামূলকভাবে গ্রামে চালুকরণ, সহজশর্তে ব্যাংক হিসাব খোলা ও ঋণপ্রাপ্তি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ, স্বল্প খরচে ডিস ও ইন্টারনেট সংযোগ, এলপি গ্যাস সহজলভ্য করা, ভ‚মিহীনকে খাসজমি বরাদ্দ, গৃহহীনকে ঘর দেয়া, আধুনিক বাজার ব্যবস্থা চালুকরণ, সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়িয়ে দারিদ্র্য সম্পূর্ণরূপে দূরীকরণ এবং লাঙল যার জমি তার, জাল যার জল তার নীতি চালুকরণের উদ্যোগ নেয়া হবে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে প্রতিটি গ্রামে। এই দর্শন বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যম্যে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর করা সম্ভব। এর ফলে দেশের ৮৭ হাজার গ্রামে শহরের মতো নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App