×

জাতীয়

বিএনপি কার্যালয়ে রিজভীর এক বছর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:২২ পিএম

বিএনপি কার্যালয়ে রিজভীর এক বছর
ছোট্ট একটা ঘর, ৫ বাই ৩ ফুট। পুরোটা ঘরজুড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার, সূর্যের আলো পৌঁছায় না। বহুদিনের পুরনো একটি খাট ও টেবিল। বাকি জায়গাটুকুজুড়ে স্তূপাকার বই। দড়িতে জামা-কাপড় ঝুলছে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এমন একটি বদ্ধ ঘরেই টানা এক বছর কাটিয়ে দিলেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। এই এক বছরে দলের মুখপাত্র হিসেবে বিভিন্ন ইস্যুতে ৫ শতাধিক ব্রিফিং করেছেন রিজভী কারো কারো মতে, যা সম্ভবত একটি ‘বিশ্ব রেকর্ড’। তবে গ্রেপ্তার এড়াতেই দলীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছাবন্দি হিসেবে অবস্থান করছেন বলে ভোরের কাগজকে জানান রিজভী আহমেদ। রিজভী আরো জানান, তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছেন। তাই গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে না থেকে গত বছরের জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছেন তিনি। এখানে থেকে তিনি দলের কাজকর্ম থেকে শুরু করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ রাখতে পারেন। সংবাদ সম্মেলন করে হুটহাট দলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। তবে সেটা দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা মোতাবেক এবং পরিস্থিতির দাবি মেনে। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তাদের সঙ্গে গল্প করেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করে হাইকমান্ডকে অবহিত করেন। প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করা নিয়ে বিভিন্ন মহলের তির্যক আলোচনা শুনতে খারাপ লাগে কিনা এবং এতে দল ঠিক কতটা লাভবান হয় জানতে চাইলে রিজভী বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করতে গেলে আলোচনা সমালোচনা থাকবেই। আমি মনে করি, রোজকার ব্রিফিং নিয়ে যদি কেউ সমালোচনা করেন সেটা আমার ভালো কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে কেউ করতে পারেন। তিনি আরো বলেন, দলের অন্য নেতারা যখন চুপ থাকেন তখন আমি নিয়ম করে মিডিয়ার সামনে আসি। নেতাকর্মীদের মনের কথা, দলের পরিস্থিতি জানাই। তৃণমূল নেতাকর্মীরা প্রায়ই আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, রিজভী ভাই সংবাদ সম্মেলনে প্রতিদিন আপনার কথা শুনে আমরা উজ্জীবিত হই। মনে সাহস আসে। বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, খোলা কর্মসূচিতে আমি থাকতে পারি না। কারণ, ওই সব কর্মসূচিতে গেলে সরকারের নির্দেশে প্রশাসনের লোকজন টেনে হিঁচড়ে গ্রেপ্তার করবে। তাই ভোরবেলা মাঝে মাঝে রাস্তায় ঝটিকা মিছিল করি। মনে সান্ত¦না লাগে এই ভেবে যে, আর যাই হোক অন্তত দলীয় কর্মসূচিতে মাঠে তো থাকতে পারছি। নিজের পরিবার রেখে কার্যালয়ে একাকী কীভাবে সময় কাটে? জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ভোরে উঠে কবিতা আবৃতি করি, বারান্দায় পায়চারি করি। নাস্তা শেষ করে নেতাকর্মীরা আসেন, তাদের নিয়ে বসি। তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনি। অবসরে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ি। এ ছাড়া দলের দাপ্তরিক সব কাজ করি। অসুস্থ বোধ করলে পরিচিত ডাক্তারকে খবর দেই। এসে চিকিৎসা দিয়ে যান। খাওয়া-দাওয়া নিয়ে খুব একটা সমস্যা হয় না। কার্যালয়ের স্টাফদের জন্য যে রান্না হয়, তা থেকেই খেয়ে নেই। এর বাইরে পছন্দের খাবার নিয়ে দুয়েক দিন পরপরই স্ত্রী আঞ্জুমান আরা আইভী আসেন দেখা করতে। এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিন। স্বেচ্ছাবন্দি আর কতদিন জানতে চাইলে তার জবাব, যতদিন পারা যায়। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমি কার্যালয়ে অবস্থান করছি। তিনি মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান অব্যাহত থাকবে। কার্যালয়ের কর্মচারীদরে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিজভী আহমেদ সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব হলেও একহাতে সামলান দপ্তর। পরপর দুবার এই দায়িত্বে আছেন। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় দিবস, দলের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন, শোকবার্তা সবই তার ড্রাফটে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়। এর বাইরেও রোজ ব্রিফ করেন। লিখিত ব্রিফিংয়ের সেই সফট কপি সংবাদকর্মীদের আগেই সরবরাহ করা হয়। কারণে-অকারণে তার এই ব্রিফিংকে এখন দলের ভেতরে-বাইরের অনেকেই বাঁকা চোখে দেখছেন। অনেক সময় এ নিয়ে সৃষ্টি হয় হাস্যরসের। তারা বলেন, তবে যে যাই বলুক বিএনপির চরম দুঃসময়ে যখন কথা বলার মতো কোনো নেতা খুঁজে পাওয়া যায়নি, তখন রিজভী আহমেদ সরকারবিরোধী নানা ইস্যুতে সরব ছিলেন, আছেন। তারা বলেন, সবকিছুকে উপেক্ষা করে পরিবার-পরিজন ছেড়ে রাজনীতির জন্য এমন ত্যাগ কতজনই পারেন? তবে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, রিজভী কেন প্রতিদিন ব্রিফিং করেন, আমরাও জানি না। অনেকেই ফোন করে জানতে চান এতে দলের কী লাভ হয়? জবাব দিতে পারি না। এমনকি তার হুটহাট ঝটিকা মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগরের বিএনপি নেতাদের মধ্যেও অস্বস্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড দেয়া হলে ওই দিন থেকেই তিনি কারাবন্দি। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর রিজভীকে অন্তত ২০টি মামলায় আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। আগের ৭০টির বেশি মামলার আসামি হিসেবে রয়েছে রুহুল কবির রিজভীর নাম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App