×

জাতীয়

নতুন রুটে আসছে ইয়াবা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:১৩ এএম

নতুন রুটে আসছে ইয়াবা
বাংলাদেশে প্রবেশের প্রধান রুট কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে কমে এসেছে ইয়াবার চালান। কিন্তু তাতেও কোনো ঘাটতি নেই মরণ নেশা ইয়াবার। কারণ আলাদা রুট খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ইয়াবা কারবারিরা। ইতোমধ্যে নতুন নতুন রুট দিয়ে ইয়াবা আসতে শুরু করায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও টেকনাফ দিয়ে প্রচুর ইয়াবা প্রবেশ করত। কিন্তু সম্প্রতি ১০২ গডফাদার পুলিশের সেফ হোমে যাওয়ার পর থেকে নতুন রুট খুঁজতে শুরু করে ইয়াবা কারবারিরা। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় জেলে ও রোহিঙ্গাদের প্রধান বাহক বানিয়ে ইয়াবার চালান আনছে তারা। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর মধ্যে যারা গডফাদার ছিল তাদের বেশির ভাগই পলাতক রয়েছে। সম্প্রতি যারা আত্মসমর্পণ করেছে তারা প্রায় সবাই টেকনাফের ব্যবসায়ী। কিন্তু উখিয়া ও কক্সবাজারের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারাই অর্থলগ্নি করে ইয়াবা ব্যবসা সচল রেখেছে। এ জন্য রোহিঙ্গা ও জেলেদের বেছে নেয়া হচ্ছে। তারাই আয়েশি জীবনের আশায় দেশে ইয়াবা আনছে। ফলে বর্তমানে যারা ইয়াবা ব্যবসা করছে তাদের বেশির ভাগেরই নাম জানে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে আত্মসমর্পণকারীদের স্বীকারোক্তিতে পাওয়া আরো দেড়শজন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা গেলে ইয়াবার দৌরাত্ম্য আরো কমে আসবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। সূত্রমতে, টেকনাফের পর উখিয়া উপজেলার থাইংখালী রহমতের বিল, পালংখালী, বালুখালী এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমরু সীমান্তকে ইয়াবা পাচারের রুট হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া গভীর সমুদ্রপথে জেলেদের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে ইয়াবার চালান। আগে শুধু নাফ নদী বেছে নিলেও বর্তমানে লাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম পাহাড়ি এলাকাসহ ১২ থেকে ১৫টি রুট বেছে নিয়েছে ইয়াবা কারবারিরা। বিজিবির একটি সূত্র জানায়, মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় ৪৯টি ইয়াবার কারখানা রয়েছে। কারখানার মালিকরা ওখানকার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সহযোগিতায় ইয়াবার চালান পৌঁছে দিচ্ছে মাছ ধরার নৌকায়। মূলত গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার আড়ালে অদলবদল হয় ইয়াবা। হোয়াইকং থেকে শেমলাপুর পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার জেলে বাস করে। বর্তমানে এদেরই একটি অংশ বাহক হিসেবে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে ভিড়েছে আশ্রিত রোহিঙ্গারাও। জানতে চাইলে টেকনাফ বিজিবি-২ এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল আছাদুদ-জামান চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, একসময় যে এলাকার বেশির ভাগ মানুষ নিজেদের পেশা হিসেবে ইয়াবাকে বেছে নিয়েছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় টেকনাফে ইয়াবা কমে এসেছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বসে নেই। রুট পাল্টে ইয়াবা আনার চেষ্টা করছে। যেহেতু নানা সীমাবদ্ধতায় গভীর সমুদ্র ও সীমান্তে শতভাগ নজরদারি দেয়া সম্ভব হয় না, সে সুযোগটা তারা নেয়ার চেষ্টা করবেই। তবে আমরাও সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আশা করি ইয়াবা নির্মূল হবেই। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, আগে ঢালাওভাবে ইয়াবা এলেও এখন টেকনাফে ৭০ শতাংশ ইয়াবার চালান কমে গেছে। এখন অন্য রুটগুলোতে নজরদারি বাড়ানো উচিত। এদিকে সম্প্রতি ইয়াবার বড় যে চালানগুলো ধরা পড়েছে সেগুলোর বেশির ভাগই গভীর সমুদ্র দিয়ে আনা হয়েছে বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। পরে সুবিধা বুঝে এগুলো বিভিন্ন পন্থায় সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বশেষ অভিযানগুলোর দিকে তাকালেও স্পষ্ট হয় ইয়াবার রুট পরিবর্তনের চিত্র। প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের কুরুশকুল এলাকায় গভীর সমুদ্রে একটি মাছ ধরার ট্রলারের তল্লাশি করে ১ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র‌্যাব। এ সময় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো উখিয়ার কুতুপালং গ্রামের ছলিমুল্লাহর ছেলে এনায়েত উল্লাহ (২৫), বালুখালীর মো. ইয়াছিনের ছেলে আবদুর হামিদ (২২), একই গ্রামের রশিদ সালামের ছেলে করিমুল্লাহ (২৬) ও টেকনাফের থাইংখালী গ্রামের মৃত নূর আহম্মদের ছেলে মো. রশিদুল্লাহ (২৪)। তারা সমুদ্রপথে বেশ কয়েক চালান আনার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। একই দিন ভোরে বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ির পার্শ্ববর্তী রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের হাজিরপাড়া এলাকার একটি খামারবাড়ী থেকে সাড়ে ৪ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। এর পরদিন রাতে কক্সবাজার লিংক রোড এলাকায় হানিফ পরিবহনের ইজতেমাগামী একটি বাসের ভেতরে রাখা গ্যাস সিলিন্ডার থেকে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে র‌্যাব। এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার বালুখালী পানবাজার এলাকায় ১৪ হাজার ইয়াবাসহ ২ রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকা অনুযায়ী এখনো যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে তাদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নতুন ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি বজায় রাখলে কমে আসবে ইয়াবার চালান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App