×

বিশেষ সংখ্যা

সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:৫১ পিএম

সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া
দেশের বেশির ভাগ মানুষ চেয়েছিল একাদশ জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসুক। আমরাও চেয়েছি। শুধু আমরা কেন এমন কোনো সংস্থা ছিল না যারা নির্বাচনে শেখ হাসিনার জয়ের জন্য কাজ করেনি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে শেখ হাসিনার জন্য কাজ করেছে। কেউ কেউ একটু বেশি করেছে। ফলে ভোটের ব্যবধানটা একটু বেশি হয়ে গেছে। সে কথা যাক। ও চ্যাপ্টর এখন ক্লোজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের ১৭ কোটি মানুষের এখন একটি দাবি, দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই। সুশাসন চাই। দুর্নীতির শেকড় এত গভীরে প্রথিত যে তা টেনে তোলা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ। টিআইবির রিপোর্ট অনুসারে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত ডিপার্টমেন্ট হলো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। আবার তারা এমন রিপোর্ট দিয়েছে যে, দুর্নীতিতে ভ‚মি মন্ত্রণালয় সবার ঊর্ধ্বে। কোনো প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির ঊর্ধ্বে আর কোনো প্রতিষ্ঠান নিম্নে তা বোধকরি পার্থক্য নির্ণয় করা ভীষণ কঠিন। সবাই সমান তালে পাল্লা দিয়ে দুর্নীতিতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে, তিতাস গ্যাসের একজন মিটার রিডার শত কোটি টাকার মালিক বনেছে। আবার দেখলাম একটি প্রতিষ্ঠানের একজন কোষাধ্যক্ষ হাজার কোটি টাকা আয় করেছেন। দেশবাসী বুঝে নিতে পারে এই টাকা উনি কোন পথে আয় করেছেন। বিষয়টি এই রকম যে, লোম বাছতে কম্বল নাই হয়ে যাবে। উল্টো কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান মনঃক্ষু্ণ্ণ হতে পারে, এই ভেবে যে, বেশি দুর্নীতি করছি আমরা অথচ নাম বলছে অন্যদের। পত্রিকায় দেখলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন কয়েক বছরে। তিনি কেমনতর আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ পেয়ে গেলেন যে রাতারাতি আঙুল ফুলে বটগাছ হয়ে গেলেন। এসব খবর পড়লে সত্যি মন খারাপ হয়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছে দুদকের তদন্ত নামক কারসাজিতে। জাহালম নামের একজন নিরীহ-নিরাপরাধ ব্যক্তিকে তিন বছর কারাবাস করতে হয়েছে। টাঙ্গাইলের সোনালি ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের [দুদক] দায়ের করা মামলায় ভুল আসামি হিসেবে জেল খেটে অবশেষে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। প্রশ্ন হলো, ওই সাড়ে ১৮ কোটি টাকা তাহলে কে বা কারা আত্মসাৎ করল? নিশ্চয়ই কেউ না কেউ ওই টাকা পকেটস্থ করেছে, না হলে ওই টাকা গেল কোথায়? দুদক ভুল লোককে ধরেছে তাহলে আসল লোক ধরার দায়িত্ব কার? এই যে দুদকের ভুলের কারণে একজন নিরাপরাধ ব্যক্তির জীবন থেকে তিন তিনটি বছর কেড়ে নেয়া হলো তার কি কোনো বিচার হবে না? প্রকৃতপক্ষে এই ভুল কাদের এবং সেই ভুল ইচ্ছেকৃত না সাজানো, সেই রহস্য উন্মোচন দেখতে চাই। সর্ষের মধ্যে ভ‚ত রেখে দুর্নীতির জিরো টলারেন্স বলে কোনো লাভ হবে না। আমরা কোনোভাবেই কানামাছি খেলা দেখতে চাই না। আমরা কাজ দেখতে চাই। নির্বাচনী ইশতেহারে বর্তমান সরকারের দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা আমাদের আশাবাদী করেছে। নানা অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির জিরো টলারেন্স কথাটি বারবার উচ্চারণ করছেন। তাঁর এই উচ্চারণের পর সব মন্ত্রী একযোগে এই ধ্বনি তুলছেন। আমরা আশাবাদী হয়ে উঠছি এই ধ্বনি শুনে। কিন্তু কার্যত যদি তার ফল না মেলে তাহলে সব আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যাবে। সবই কথার কথা হয়ে যাবে। আমি পুরনো একটি দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে চাই। আমি এবং আমরা মনে করি, দেশের মানের দিক থেকে আলোচিত দুর্নীতিটি আগে ফয়সালা হওয়া দরকার। কারণ শুরু থেকে শুরু না করলে সে কাজের সফলতা আসে না। বছর কয়েক আগে, মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি চাকরিতে মেয়াদ দুবছর বাড়ানোর ফলে কিছু অসাধু কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সেজে বসেন। তারা ক্ষমতার দাপটে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেন এবং পরে তাদের দুর্নীতি ফাঁস হয়ে গেলে তাদের মুক্তিযোদ্ধার গেজেট থেকে নাম বাদ দেয়া হয়। সেই তালিকায় দুজন সচিব ছিলেন। খোদ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন সেই তালিকায়। ভাবা যায়? তারা কেডার সার্ভিসের কর্মকর্তা। তারা মেধাবী। সামান্য কিছু সুবিধে পেতে তারা ভয়াবহ দুর্নীতিতে জড়ালেন! তারা মুক্তিযোদ্ধা সেজে বসলেন। এটা যে কতবড় দুর্নীতি তারা হয়তো আন্দাজ করতে পারেননি। এই দুর্নীতি দেশের সঙ্গে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে, শহীদদের রক্তের সঙ্গে করা হয়েছে। সেই হিসেবে সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে গর্হিত দুর্নীতি হলো এই কাজটি। অথচ সরকার তাদের শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। সরকার ছেড়ে দিয়েছেন কিন্তু আমরা ছাড়িনি। আমরা এই ন্যক্কারজনক দুর্নীতির বিচার চাইতেই থাকব। যেসব কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা সাজতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে অন্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এই ম্যাসেজ দিতে হবে যে, তাদেরও ক্ষমা নেই, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। একই সঙ্গে এমন ঘোষণা দেয়া যেতে পারে যে, যারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করবে, বলবে তারা ভুয়া। তাদের ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যাদের প্রমাণের মাধ্যমে ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হবে তাদের ওই ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মতো দুষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তাহলে হয়তো কাজটি সহজ হতে পারে। সরকার চাইলে ভুয়াদের চিহ্নিত করতে পারবে না এমন কথা আমরা বিশ্বাস করি না। এটা এমন কোনো কঠিন কাজ নয়। শুধুমাত্র আন্তরিকতা দিয়ে চাইলে কাজটি করা সম্ভব। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব বিদেশি বন্ধু আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের সম্মাননা ক্রেস্টে স্বর্ণের পরিবর্তে যারা তামা দিয়ে দেশের মানসম্মানের সঙ্গে তামাশা করেছে তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। কোনোভাবেই এদের ক্ষমা করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে বিষয়টি জড়িত। এই কারণে ব্যাপারটা কোনোভাবেই হেলাফেলা করার নয়। আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার। তারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল। তারা যদি এই চেতনাবিরোধী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ছাঁটাই না করে তাহলে আর কে করবে? এই দাবি অন্য কোনো দলের কাছে যেমন চাওয়ার নেই। তেমনি কিছু পাওয়ারও আশা নেই আমাদের। আমরা দেখতে চাই, আওয়ামী লীগ তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কি ভূমিকা নেন?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App