×

বিশেষ সংখ্যা

শিক্ষাই মানুষের মহাশক্তি, মহাপ্রগতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৭:১১ পিএম

প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে চিন্তা ও উদ্ভাবনের ওপার শক্তি-যা অন্যসকল প্রাণী থেকে আলাদাভাবে দেখতে ও বুঝতে হবে। মানুষ জিনগতভাবেই অন্যসব প্রাণী থেকে বুদ্ধিমান। তাই সে সৃষ্টিশীল উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন। কিন্তু শিক্ষাবিহীন মানুষের সমাজ মানুষকে সেই ঐতিহাসিক বোধ ও শক্তি সম্পর্কে অজ্ঞাত রেখেছে। নানা কুসংস্কারে ও অতিপ্রাকৃতিক বিশ্বাসে মানুষ নিজের স্বত্তার শক্তিকে বুঝতে চায়নি। যে কারণে এক সময় মানুষ অসুস্থ হলে প্রতারক বুদ্ধিমান কোনো মানুষের খপ্পরে পড়তে বাধ্য হতো। তার কাছ থেকে জাদুটোনা, পানি পড়া ইত্যাদি খেয়ে সুস্থ হওয়ার কথা ভাবতো। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে আয়ুর্বেদিক ওষুধ থেকে শুরু করে চিকিৎসা বিজ্ঞান মানুষকে চিকিৎসার প্রকৃত আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। অন্ধবিশ্বাস, অজ্ঞানতা, কুসংস্কার ইত্যাদি কারণে দীর্ঘদিন মানুষ সমাজ, রাষ্ট্র, নেতৃত্ব এবং নিজেদের জীবনব্যবস্থাকে প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে আটকে রেখেছিল। তাতে মানুষের সমাজ, রাষ্ট্র ও জীবনব্যবস্থা দ্রুত বদলাতে পারেনি।

মানুষ যতদিন পর্যন্ত শিক্ষার আলোয় আসতে পারেনি ততদিন পর্যন্ত মানুষের জীবন ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। যদিও প্রাচীন গ্রিসে মানুষ শিক্ষার আলো পেতে শুরু করেছিল কিন্তু গ্রিসের বাইরে সেই আলো ছড়াতে অনেক সময় লেগেছিল। এমনকি প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক, কবি সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানীদের জ্ঞান ও চিন্তার অনেককিছু তখনকার নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সবার কাছে বোধগম্য হয়নি, কিংবা এর প্রসারও সেভাবে দ্রুত ঘটতে পারেনি, তথাপিও পরবর্তী যুগে জ্ঞানের চর্চা গ্রিক চিরায়ত শিক্ষা চিন্তা থেকেই চারদিকে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। এখান থেকেই মানুষ মানবতা, যুক্তি, বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্পসাহিত্য ইত্যাদি মৌলিক চিন্তার সঙ্গে পরিচিত হতে থাকে।

এর আগে মানুষ প্রত্যক্ষ কোনো শিক্ষার ধারায় প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। তবে অভিজ্ঞতা মানুষকে অনেক কিছু বুঝতে, ভাবতে এবং প্রয়োগ ঘটাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সেভাবেই মানুষ চিন্তাশক্তির মাধ্যমে একসময় হাতিয়ার- প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও পরিবর্তন ঘটিয়েছে। পাথর, আগুন, ভাষা ইত্যাদির মাধ্যমে স্বতন্ত্র জীবন ও সমাজব্যবস্থা তৈরি করেছে।

১০-১২ হাজার বছর আগে কৃষিবিপ্লব ঘটিয়েছে। তারপরেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয়টি তখনো মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিল। কিন্তু গ্রিকরাই প্রথম অনানুষ্ঠানিক এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষার স্বরূপটি বৈজ্ঞানিকভাবে সৃষ্টি শুরু করে। অন্যান্য সভ্যতায় জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষার কিছু কিছু বিষয় রাজপ্রাসাদ কেন্দ্রিক প্রয়োজনীয়তা থেকে কমবেশি স্থান করে নিতে থাকে।

তবে গ্রিক, রোম, ভারতবর্ষ, চীন, মধ্যপ্রাচ্য ইত্যাদি প্রাচীন সভ্যতায় দর্শন চিন্তার মাধ্যমে শিক্ষার প্রভাব সমাজে গৃহীত হতে থাকে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই বলা যাবে না যে সেই যুগে শিক্ষা সব মানুষের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি পাওয়ার মতো ছিল। তবে সমাজ ও রাষ্ট্র শক্তির বিস্তার এর সঙ্গে ধর্মাধিষ্ঠানের ঐক্যতান শিক্ষার প্রসারকে উন্মুক্ত হতে বাধাগ্রস্ত করেছিল। ইউরোপ পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত শিক্ষায় ততটা অগ্রগামী ছিল না যতটা মধ্য এশিয়া, ভারত, উত্তর আফ্রিকা এবং চীন ছিল।

কিন্তু ভৌগোলিক আবিষ্কার রেনেসাঁস অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির তাগাদা ইউরোপের প্রাকৃতিক অবস্থা ইউরোপকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক ধরনের জাগরণ সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল যা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বাস্তব জ্ঞান ও বোধ, দর্শন ও প্রকৃতি চিন্তার সঙ্গে মানুষের জীবন ও সমাজকে একাত্ম হওয়া এবং পরিবর্তিত করার ধারণা প্রদান করে। সেখান থেকে ইউরোপ সপ্তদশ অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিক্ষাকে গির্জার অক্টোপাস থেকে মুক্ত করার শক্তি অর্জন করতে থাকে।

এটি ঘটেছিল ইউরোপের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জ্ঞান ও বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, শিল্পকলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বহুমাত্রিক ছোট ছোট চিন্তাকে শিক্ষার মূলধারায় নিয়ে আসার মাধ্যমে। একটি বিপ্লবী সাহস যেন ইউরোপের অগ্রসর সমাজকে পেয়ে বসে। তারাই অষ্টাদশ শতাব্দীর পর সমাজের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, পশ্চাৎপদতা, অজ্ঞানতা, রক্ষণশীলতা, প্রতিক্রিয়াশীলতা, ধর্মান্ধতা, সম্প্রদায়- জাতিগত বিরোধ ও দ্বন্দ্ব ইত্যাদিকে মানব প্রগতির বিরুদ্ধ অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে, মানুষকে এসব প্রবণতা থেকে মুক্ত হওয়ার মাধ্যমে নিজের ভেতরের অযুত শক্তিকে কাজে লাগানোর শিক্ষা সম্মুখে নিয়ে আসেন। এখান থেকেই মানুষ শিক্ষাকে ওপার শক্তির এক উৎস হিসেবে ভাবতে শেখে।

প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে চিন্তা ও উদ্ভাবনের ওপার শক্তি- যা অন্যসকল প্রাণী থেকে আলাদাভাবে দেখতে ও বুঝতে হবে। মানুষ জিনগতভাবেই অন্যসব প্রাণী থেকে বুদ্ধিমান। তাই সে সৃষ্টিশীল উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন। কিন্তু শিক্ষাবিহীন মানুষের সমাজ মানুষকে সেই ঐতিহাসিক বোধ ও শক্তি সম্পর্কে অজ্ঞাত রেখেছে। নানা কুসংস্কারে ও অতিপ্রাকৃতিক বিশ্বাসে মানুষ নিজের স্বত্তার শক্তিকে বুঝতে চায়নি।

যে কারণে এক সময় মানুষ অসুস্থ হলে প্রতারক বুদ্ধিমান কোনো মানুষের খপ্পরে পড়তে বাধ্য হতো। তার কাছ থেকে জাদুটোনা, পানি পড়া ইত্যাদি খেয়ে সুস্থ হওয়ার কথা ভাবতো। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে আয়ুর্বেদিক ওষুধ থেকে শুরু করে চিকিৎসা বিজ্ঞান মানুষকে চিকিৎসার প্রকৃত আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। অন্ধবিশ্বাস, অজ্ঞানতা, কুসংস্কার ইত্যাদি কারণে দীর্ঘদিন মানুষ সমাজ, রাষ্ট্র, নেতৃত্ব এবং নিজেদের জীবনব্যবস্থাকে প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে আটকে রেখেছিল। তাতে মানুষের সমাজ, রাষ্ট্র ও জীবনব্যবস্থা দ্রুত বদলাতে পারেনি।

কিন্তু ইউরোপ, শিক্ষায়, গবেষণা এবং মৌলিক চিন্তায় যুক্ত হওয়ার ফলে উনিশ শতকে বিপ্লবাত্মক পরিবর্তনের যে ধারা সূচনা করেছে সেটি গত দেড়-দুইশত বছরে পৃথিবীকে যেভাবে প্রতিনিয়ত পাল্টে দিচ্ছে তার মূলে রয়েছে শিক্ষা এবং শিক্ষা। অর্থাৎ মানুষের প্রতিভার বিকাশ, চিন্তাশক্তির গভীরতা সৃষ্টি এবং শিল্প-প্রযুক্তি, জ্ঞান ও উদ্ভাবনীতে ক্রমদক্ষতা অর্জন গত শতকে সত্তর আশির দশকে নতুন গতিময়তায় নিয়ে এসেছে- যখন কম্পিউটার পৃথিবীকে নতুনভাবে বিপ্লবের শ্রুত ধারায় নিয়ে আসে।

১৯ শতকে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দর্শন, অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব, জীববিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, সমাজ প্রগতির চিন্তা ইত্যাদিতে মৌলিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগত ভিত্তি রচনা করেছে। যার ফলে প্রতিটি বিষয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে বিজ্ঞানী ও গবেষক ধারাবাহিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। ঐ সময়ে ইউরোপ একদিকে বিজ্ঞান, অন্যদিকে সমাজ পরিবর্তনের মতাদর্শিক নানা জাগরণে কেঁপে উঠেছিল। ফলে ইউরোপ অগ্রসর মতাদর্শিক রাজনৈতিক চিন্তা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটাতে থাকে।

এই সময়ে উদারবাদ সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ গণতন্ত্র ইত্যাদি অগ্রসর চিন্তার উৎপত্তিতে শিক্ষা মূল শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিল। শিক্ষা মানুষকে পশ্চাৎ পদতাকে ঝেড়ে ফেলে প্রগতিশীলতাকে আঁকড়ে ধরার শক্তি জোগায়। মানুষ সেভাবেই সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উদ্ভাসিত হতে থাকে।

২০ শতকে ইউরোপ যদিও দুই দুইটি মহাযুদ্ধে আক্রান্ত হয়েছিল কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই পাশ্চাত্য দেশসমূহ বিভেদ, দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ-হানাহানি ইত্যাদির ভয়াবহতা থেকে মুক্ত হতে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেয়। পৃথিবীতে প্রায় শতাধিক রাষ্ট্রের জন্ম হয় যেগুলো এক সময়ের বড় রাষ্ট্রের কড়ালগ্রস্ত ছিল। এরাই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষা, সংস্কৃতি, জ্ঞান ও বিজ্ঞানের মূল ধারায় পা ফেলার সুযোগ পায়।

যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে পারমাণবিকসহ নানা বিধ্বংসী অস্ত্রের মারাত্মক প্রতিযোগিতা চলেছিল। মনে হয়েছিল পৃথিবী বোধহয় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীর পর থেকে সূচিত জ্ঞান ও বিজ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত মানুষ দ্রুতই বুঝতে শেখে যে তাদের জন্য যুদ্ধ নয় বরং পারস্পরিক সহযোগিতা কৌটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানব সভ্যতার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ঘটানোই একমাত্র বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। সেই পথেই মানুষ চিকিৎসা বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, জিনতত্ত্ব প্রকৌশল প্রযুক্তিগত নানামাত্রিক উদ্ভাবন গোটা পৃথিবীর আর্থ-সামাজিক ও মানুষের নীতিনৈতিকতা ও বোধে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। মানুষ ক্রমেই সংকীর্ণ চিন্তা, ভেদবুদ্ধি, সম্প্রদায় ও জাতিগত বিভক্তি ইত্যাদির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে থাকে।

পৃথিবী এই সময়ে শিল্প বিপ্লবের অপরিহার্য ধারা হিসেবে প্রকৌশল প্রযুক্তিগত জ্ঞান ব্যবহারে যে উৎপাদনী ক্ষমতা অর্জন করেছে তার মূলে রয়েছে মানুষের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় অর্জিত সাফল্য। এই সময়ে খাদ্যে মানুষ স্বয়ংবর হওয়ার সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। চিকিৎসা মানুষের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে। উন্নত শহর, বাড়িঘর, গ্রাম, রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার্য সামগ্রী ইত্যাদি উৎপাদন ও নির্মাণ জীবনকে অধিকতরও উন্নত করার যে ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে তার মূলে রয়েছে বহুমাত্রিক জ্ঞানতাত্ত্বিক ও প্রয়োগিক শিক্ষা। এখন মানুষের মৃতুর হার কমে গেছে।

বরং অনেক দেশে শতআয়ুর মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানুষের অধিকার সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মূলেই হচ্ছে মানুষকে শিক্ষা এমন জ্ঞানও বুদ্ধিমত্তার শক্তিতে গড়ে তুলছে যখন মানুষ ক্রমাগত উদ্ভাবন ও পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে এক বিশেষ জীবন ব্যবস্থায় অবস্থ্য হচ্ছে যা এক দেড়শত বছর আগেও ভাবা বা কল্পনা করা যেত না।

অথচ এখন শিক্ষার নানামুখী জ্ঞান শাখায় মানুষ বিচরণের মাধ্যমে যে জ্ঞানগত ধারণা তৈরি করছে তার সামগ্রিক মানুষের জীবন ব্যবস্থাকে উচ্চতর স্তরে ক্রমাগতভাবে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে অনেক সমস্যা ও জটিলতা আছে কিন্তু মানুষ শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে সেইসব প্রতিকূলতা ও জটিলতা অতিক্রম করার নিরন্তর লড়াই করে যাচ্ছে। একুই শতকে আমরা ডিজিটাল বিপ্লবের মহাসড়কে, মহাগতিতে চলার দক্ষতা, সক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জনের এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে আছি।কেবলমাত্র জ্ঞান ও বিজ্ঞানের এমন বাস্তবধর্মী প্রায়োগিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাই মানুষকে এমন মহাক্ষমতাধর শক্তিতে রূপান্তরিত করেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে আমরা বাংলাদেশ কি শিক্ষার এমন শক্তি ও প্রগতির ধারাকে উপলব্ধি করতে এখনও পেরেছি? যদি পারতাম তাহলে আমাদের দেশে এতসব ধারা-উপধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছি কোন যুক্তিতে। শিক্ষার তো দর্শন একটিই তা হচ্ছে মানুষকে পশ্চাৎপদতাকে পরিত্যাগ করার মাধ্যমে প্রগতিশীলতাকে আঁকড়ে ধরার সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে এগিয়ে চলা, মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে থাকা সুকুমার বৃত্তির উন্মেষ ঘটানো, সমাজ প্রকৃতি ও চিন্তনের স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম-শৃঙ্খলা এবং আইনকে ধারণ করা, পরিবর্তিত দক্ষ মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলা।

জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় বিচরণের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে আধুনিক, উন্নততর মানবিক ও প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে বসবাসে উপযোগী করে তোলার শিক্ষাই থাকতে হবে আমাদের। তাহলেই আমাদের প্রতিটি মানুষ নিজেকে গ্লোবাল জগতের একজন সদস্য হিসেবে ভাবতে শিখবে একই সঙ্গে জ্ঞান ও কর্মদক্ষতায় উন্নততর জীবন-যাপনের নিশ্চয়তা বিধানে নিজে যেমন ভূমিকা রাখবে অন্যকেও রাখতে সহায়তা করবে।

পৃথিবীতে শিক্ষা এখন এতটাই মানুষকে পরিবর্তিত করার শক্তি রাখে, মানুষও সেই শক্তিতে বলিয়ান হওয়ার উদাহরণ রাখতে পেরেছে। আমরা শিক্ষার এই মূল দর্শনটাই এখনো বুঝতে পারিনি। সে কারণে আমাদের শিক্ষা আমাদের তরুণদের কর্মদক্ষ, চিন্তাশক্তিতে উদ্ভাবনী ক্ষমতায় যোগ্য করতে পারছে না। এরা তাই বেকার হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। অথচ প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করলে কারোই এমন গ্লানিকর জীবনের দুঃসহ স্মৃতি বহন করতে হয় না।

আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষই শিক্ষাকে হয় অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে দেখে নতুবা পরকালে শান্তি লাভের বিষয় হিসেবে দেখে থাকে। এমন বিশ্বাস নিয়েই নিজেদের সন্তানদের স্কুল, মাদ্রাসা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে চায়। অথচ শিক্ষায় সচেতন যে কোনো মানুষই উন্নত বিবেক, নীতিনৈতিকতায় জীবনকে পরিচালিত করার কথা। সেখানে অন্য কোনো বিবেচনা বোধ শিক্ষার দর্শনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা শিক্ষার এমন প্রজ্ঞানতা ও দার্শনিকতার শক্তিকে উপলব্ধি করতে এখনও পারছি না।

অথচ একুশ শতকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের আর বেকার সৃষ্টি নয় বরং সৃজনশীল উদ্ভাবনী শক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির শিক্ষাব্যবস্থা কার্যকর করার কোনো বিকল্প সুযোগ নেই। যত তাড়াতাড়ি এটি আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবো ততই আমরা বর্তমান বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে জাতিগতভাবে সক্ষম হবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App