×

জাতীয়

ব্যবসা চালাচ্ছে ওরাই!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:২৯ পিএম

ব্যবসা চালাচ্ছে ওরাই!
আরো দীর্ঘ হলো ইয়াবা কারবারিদের তালিকা। শনিবার আত্মসমর্পণকারীদের দেয়া তথ্যে বেরিয়ে এসেছে দেড় শতাধিক নাম, বেশিরভাগই নতুন মুখ। এদের নাম নেই গত বছর পুলিশের করা ১ হাজার ১৫১ জন ব্যবসায়ীর তালিকায়। থানায় তাদের নামে কোনো মামলাও নেই। পুলিশের ধারণা, গডফাদাররা পলাতক থাকায় তাদের দেখানো পথেই ইয়াবা চালান অব্যাহত রেখেছে এই নতুন তালিকার সদস্যরা। দেশের প্রধান ইয়াবা পাচার রুট কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত। কোনো মূলধন ছাড়াই এ ব্যবসায় যোগ দিয়ে অনেকে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। আলিসান অট্টালিকা গড়ে শুরু করেন বিলাসবহুল জীবন। কিন্তু আইনশৃঙ্খখলা বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানে বিপাকে পড়েন ইয়াবা কারবারিরা। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান অনেকে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন কেউ কেউ। প্রাণ বাঁচাতে এক পর্যায়ে পুলিশের সেফ হাউসে প্রবেশ করেন ১০২ ব্যবসায়ী। স্বীকারোক্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আকুতি জানান। সরকারও তাদের আবেদনে সাড়া দেয়। অবশেষে গত শনিবার টেকনাফ স্কুল মাঠে আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ করেন তারা। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, কক্সবাজারে প্রায় ১ মাস ছিলেন আত্মসমর্পণকারীরা। এই সময়ে তাদের বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা কাদের সঙ্গে ব্যবসা করতেন, কীভাবে ইয়াবা আনতেন, টাকার লেনদেন কীভাবে হতো এ ধরনের বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন তারা। তাদের ওই তথ্যের ভিত্তিতে ১৫০ জনের একটি নতুন তালিকা করা হয়েছে। তালিকাটি ইতোমধ্যেই টেকনাফ থানাসহ অন্যান্য থানায় পাঠানো হয়েছে। অচিরেই এই ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তবে তারা যদি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন, তাহলে সে বিষয়টিও ভেবে দেখা হবে। নতুন তালিকায় টেকনাফ-উখিয়ার সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির নাম আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ১৫০ জনের তালিকায় যাদের নাম আছে, তাদের বেশিরভাগের নাম আগের তালিকাতে আসেনি। এখন পর্যন্ত সাবেক সাংসদ বদির নামও কেউ বলেনি। এই ১৫০ জনের নামের তালিকায় পুরনো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে। কিন্তু তারা এখনো ইয়াবা ব্যবসা করছেন কিনা সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি আত্মসমর্পণকারীরা। তবে যেহেতু তারা একই সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসা করেছেন সে জন্য দ্রুতই সবাইকে গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়য়ে জানতে চাইলে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, আত্মসমর্পণকারীদের স্বীকারোক্তিতে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নতুন একটি তালিকা পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই অভিযান চালানো হবে। এদিকে শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করলেও সীমান্ত পেরিয়ে ইয়াবার চালান আসা অব্যাহত রয়েছে। একাধিক হাত ঘুরে এগুলো পৌঁছে যাচ্ছে দেশের আনাচে কানাচে। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে প্রশাসনসহ সবাইকে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, আত্মসমর্পণের একদিন আগেই গত শুক্রবার কক্সবাজারের টেকনাফে র‌্যাব ও বিজিবি এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বিজিবির পৃথক অভিযানে ৫ লাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবার তিনটি চালান জব্দ করা হয়। এমনকি আত্মসমর্পণের কয়েক ঘণ্টা পরই কক্সবাজার লিঙ্ক রোড এলাকায় হানিফ পরিবহনের গ্যাস সিলিন্ডারের ভেতর থেকে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে র‌্যাব। বাসটি বিশ্ব ইজতেমার যাত্রীদের নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। এ সময় সরোয়ার কামাল নামে এক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার খাঞ্চনী নয়াপাড়ার দুদু মিয়ার ছেলে। শুধু সরোয়ার আলম নয়, এ ধরনের আরো অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা অন্তরালে থেকেই কখনো অ্যাম্বুলেন্স, কখনো পিকনিকের বাস আবার কখনো পাকস্থলি ভাড়া করে চালিয়ে যাচ্ছেন ইয়াবার ব্যবসা। ১ হাজার ১৫১ জন মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে মাত্র ১০২ জন আত্মসমর্পণ করেছেন। বাকিরা কোথায়? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মধ্যে। এলাকাবাসীর মতে, সীমান্ত বন্ধ না হলে ইয়াবা বন্ধ হবে না। কারণ ইয়াবা পাচার টেকনাফের বেশিরভাগ মানুষের চেনা ব্যবসা। যেহেতু এই ব্যবসায় কোনো পুঁজি লাগে না, তাই সুযোগ পেলেই এ পথে পা বাড়াচ্ছে যে কেউ। এ বিষয়ে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, সীমান্ত অরক্ষিত থাকায় ইয়াবা আসছে বলে শুনেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App