×

মুক্তচিন্তা

নাশকতা কিনা খতিয়ে দেখুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:০৭ পিএম

শনিবার গভীর রাতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতীরে একটি বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুই পরিবারের সাতজনসহ আটজন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। পুড়ে গেছে চার শতাধিক বস্তিঘর। একটি সূত্রের দাবি, সরকার বেশ কিছুদিন ধরেই কর্ণফুলীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছে। উচ্ছেদের সঙ্গে আগুন লাগার যোগসূত্র থাকতে পারে। উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে কোনো পক্ষ সুযোগ নিয়েছে কিনা তদন্তে সে দিকটি খতিয়ে দেখা দরকার।

গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় স্থানীয় বিভিন্ন প্রভাবশালী সরকারের খাস জায়গায় বস্তিঘর গড়ে তুলে নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের কাছে ভাড়া দিয়ে জমজমাট বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। সম্প্রতি এসব বস্তিঘরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এলাকায় একাধিক পক্ষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। আধিপত্য বিস্তার করতে না পেরে এর মধ্যে কোনো পক্ষ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, আগুনে অন্তত চারশ বস্তিঘর ভস্মীভূত হয়েছে। এতে দুই সহস্রাধিক মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এসব বস্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষই বসবাস করেন। কাঠ-বাঁশ-কাগজ-পলিথিনের মতো সহজ দাহ্য উপকরণে তৈরি এসব বস্তির কোনো একটিতে আগুন লাগা মানে নিমেষে শত শত ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া। আর এক একটি বস্তিঘর পুড়ে যাওয়া মানে এক একটি পরিবারের স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে যাওয়া।

এভাবে এক একটি বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে একসঙ্গে কয়েকশ পরিবার সহায়-সম্বল-আশ্রয়হারা হয়। ব্যক্তিগত ক্ষয়-ক্ষতি ছাড়িয়েও এর একটি বড় সামাজিক অভিঘাত রয়েছে। এক একটি অগ্নিকাণ্ড অনেকগুলো পরিবারকে ফেলে অস্তিত্ব সংকট এবং দীর্ঘমেয়াদে দারিদ্র্যের গ্রাসে। কাজেই বস্তিবাসী মানুষের জীবন ও সহায়-সম্পদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনার দাবি রাখে।

এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। বস্তি এলাকায় যাদের বসবাস, তাদের মধ্যে আগুন লাগা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হলেও বস্তিবাসীর আবাসন সমস্যার সমাধানে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না।

ফলে অগ্নিকাণ্ড, পাহাড়ধসের মতো ঘটনায় নিয়মিতই বস্তিবাসীর জীবন, আশ্রয় সংকটাপন্ন হওয়া যেন নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরাঞ্চলের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ বস্তিবাসীদের সার্বিক জীবনমানের উন্নয়নে বড় ধরনের পদক্ষেপ নেয়া না হলে তাদের নিরাপত্তাহীনতার স্থায়ী সমাধান হবে না। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারা অবদান রাখলে কম সময়ে বস্তিবাসীর বহুমুখী সমস্যার সমাধান হতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App