×

বিশেষ সংখ্যা

ইতিবাচক হোন, আনন্দে বাঁচুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৭:৪১ পিএম

ইতিবাচক হোন, আনন্দে বাঁচুন

প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হোন। প্রাকৃতিক এবং সুষম। আর এটাই বিজ্ঞানসম্মত খাদ্যাভ্যাস। দৈনন্দিন খাবারের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকুক মৌসুমি ফলমূল, শাক-সবজি, সব ধরনের ডাল ও সালাদ। সাথে পরিমাণমতো ভাত, মাছ কিংবা মাংস। খাবারে যতটা সম্ভব তেল চর্বি ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলুন। প্রচার স্বাধীনতার এ যুগে হৃৎস্বাস্থ্যকর (!) বিভিন্ন তেল নিয়ে চলছে ব্যাপক প্রচারণা।

সুস্থ থাকতে চাই আমরা সবাই। কারণ, সুস্থতাই স্বাভাবিক আর অসুস্থতা অস্বাভাবিক। আর সুস্বাস্থ্য বলতে কেবল শারীরিক সুস্থতাকেই বোঝায় না; বরং শরীর-মন সব মিলেই আমাদের সত্যিকারের সুস্বাস্থ্য। এ কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক আত্মিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যের কথাও উল্লেখ করেছে।

দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ বিষয়ের প্রতি একটু মনোযোগী হলে খুব সহজেই আমরা পেতে পারি সুস্বাস্থ্যের দেখা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণা ও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত নানা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ বিষয়গুলো এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য। আসুন, জেনে নিই স্বতঃস্ফূর্ত সুস্থতার সহজ সূত্রগুলো-

প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হোন

আপনার প্রতিদিনের খাবার হোক বিজ্ঞানসম্মত। তাই সব ধরনের প্যাকেটজাত ও কৃত্রিম খাবার বর্জন করুন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো আসলে সুন্দর মোড়কে আবর্জনা (জাংক ফুড) বৈ আর কিছু নয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্যাকেটজাত খাবারগুলোকে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে পাঁচ ধরনের প্রায় ১৫ হাজার কৃত্রিম রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘমেয়াদে যা শরীরের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই ফাস্টফুডসহ সবরকম প্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা সম্ভব বর্জন করুন। এড়িয়ে চলুন রঙ দেয়া মিষ্টি ও টেস্টিং-সল্টযুক্ত খাবার। টেস্টিং-সল্ট মস্তিষ্কে টিউমারসহ বিভিন্ন রকমের মনোদৈহিক জটিলতা সৃষ্টির কারণ বলে প্রমাণ মিলেছে।

এছাড়াও কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস, প্যাকেটজাত জুসসহ সব ধরনের কৃত্রিম ও প্রক্রিয়াজাত পানীয় থেকে থাকুন শতহস্ত দূরে। জেনে রাখুন, কৃত্রিম রঙ আর একাধিক ক্ষতিকর উপাদানে ভরা এসব পানীয় আপনার শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর।

প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হোন। প্রাকৃতিক এবং সুষম। আর এটাই বিজ্ঞানসম্মত খাদ্যাভ্যাস। দৈনন্দিন খাবারের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকুক মৌসুমি ফলমূল, শাক-সবজি, সব ধরনের ডাল ও সালাদ। সাথে পরিমাণমতো ভাত, মাছ কিংবা মাংস। খাবারে যতটা সম্ভব তেল চর্বি ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলুন। প্রচার স্বাধীনতার এ যুগে হৃৎস্বাস্থ্যকর (!) বিভিন্ন তেল নিয়ে চলছে ব্যাপক প্রচারণা।

কিন্তু জেনে রাখুন, কোনো তেলই আসলে হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী নয়। কারণ, কমবেশি সব ধরনের তেলেই রয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড বা সম্পৃক্ত চর্বি, যা শরীরে গিয়ে ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিশ্চিতভাবেই বাড়িয়ে দেয়। তাই যতটা পারেন তেলের পরিমাণ কমিয়ে দিন আপনার দৈনন্দিন খাবারে। আর কমিয়ে দিন চিনির পরিমাণ, সাম্প্রতিককালে এটিকে ‘হোয়াইট পয়জন’ নামে অভিহিত করা হচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের খাবারে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে বার্ধক্যজনিত রোগের প্রকোপও সেখানে তুলনামূলক বেশি এবং সেখানকার মানুষ দ্রুত বুড়িয়ে যায় অর্থাৎ অকাল-বার্ধক্য ত্বরান্বিত হয়। পাশ্চাত্যে দীর্ঘ নৃ-তাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের দাঁত এবং পুরো পরিপাকতন্ত্র লতা-পাতা অর্থাৎ শাক-সবজি হজমের উপযোগী করেই গঠিত। তাই খাদ্য তালিকায় এ খাবারগুলো অধিক পরিমাণে থাকাটা আপনার সুস্থতার জন্যই প্রয়োজন। তাই প্রচুর আঁশ জাতীয় খাবার খান নিয়মিত। সেইসাথে প্রচুর পানি পান করুন। স্বাভাবিক আবহাওয়ায় কমপক্ষে দুই লিটার প্রতিদিন। তাতে ত্বকের সুস্থতা আর কমনীয়তার জন্য প্রয়োজন হবে না বাড়তি কিছুর। আর পানীয় হিসেবে ডাব কিংবা লেবু পানি আদর্শ।

প্রতিদিন খেতে পারেন একটু টক দই। সবদিক থেকেই এটি ভালো। আর মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে যারা দুধ খেতে চান না তারা নির্ভয়ে খেতে পারেন সয়াদুধ। এটি স্বাস্থ্যকর। সয়াদুধ নিজেই বাড়িতে বানিয়ে নিতে পারেন খুব সহজেই।

মুঠোভর্তি বাদাম খান প্রতিদিন। বাদাম উপকারী কোলেস্টেরল এইচডিএল-এর পরিমাণ বাড়ায় ও অন্যান্য কোলেস্টেরলের মান স্বাভাবিক রাখে। তাই এটি হৃদযন্ত্রের জন্য এবং আরো নানাভাবে উপকারী। পেনসিলভ্যানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে পাঁচবারের বেশি বাদাম খান যারা, করোনারি হৃদরোগে তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা ২৫ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

হাঁটুন, প্রতিদিন হাঁটুন

পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম বুঝি এটাই। সহজ কিন্তু দারুণ উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘণ্টায় চার মাইল বেগে প্রতিদিন আধঘণ্টা হাঁটা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্যে তো বটেই, সুস্থতা-প্রত্যাশী সব মানুষের জন্যই বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত হাঁটলে শরীর হয়ে ওঠে ঝরঝরে। মনটা থাকে চনমনে আর সুখানুভূতিময়। পরখ করে দেখতে পারেন। উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন যারা, তাদের জন্য সকালের চেয়ে বিকেলে হাঁটা ভালো।

হালকা ব্যায়াম, সাথে দমচর্চা

প্রযুক্তির ক্রম-উৎকর্ষতার ফলে আমাদের জীবন হয়ে পড়েছে শারীরিক পরিশ্রমহীন। আর যারা এভাবে দীর্ঘক্ষণ শুয়ে-বসে কাটান অর্থাৎ পরিশ্রমহীন জীবনযাপন করেন, তারা বেশকিছু রোগ ও দুর্বল রোগ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ঝুঁকিতে আছেন বলে একাধিক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত শারীরিক পরিশ্রম অর্থাৎ ব্যায়াম। এক্ষেত্রে সর্বোত্তম হলো যোগ ব্যায়াম।

গত দুই দশক ধরে পাশ্চাত্যে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যায়াম পদ্ধতি। আর যোগ ব্যায়ামেরই সহজ ও আধুনিক সংস্করণ কোয়ান্টাম ব্যায়াম। খুব সহজ। ঘরে বসে বই দেখে নিজেই এটি চর্চা করতে পারেন। এ ব্যায়ামে শরীরের প্রতিটি অঙ্গে রক্ত চলাচল বাড়ে। সবচেয়ে বড় কথা, শরীরের প্রতিটি গ্ল্যান্ডের হরমোন-প্রবাহ সুষম ও স্বাভাবিক থাকে, যা অন্য ব্যায়ামে পুরোপুরি হয় না। দিনে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ব্যায়ামই এজন্য যথেষ্ট। সাথে হোক একটু দমচর্চা।

যেমন: সহজ উজ্জীবন অর্থাৎ দিনে কয়েক দফায় বুক ফুলিয়ে দম নিন, একেক দফায় ১৫ থেকে ২০ বার। এতে ফুসফুস পূর্ণমাত্রায় প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পাবে, বাড়বে এর অক্সিজেন ধারণক্ষমতা। সারাদিন চমৎকার উজ্জীবিত থাকবেন আপনি। সমস্ত অযাচিত ক্লান্তি দূর হবে।

নিমগ্ন হোন, ডুব দিন নিজের ভেতর

আধুনিক জীবনের অন্তহীন প্রতিযোগিতায় আমরা নিয়ত ছুটছি এক অসম্ভব অলীক সুখের পেছনে। ফলাফল ক্লান্তি অবসন্নতা দুশ্চিন্তা টেনশন এবং কখনোবা বিষণ্নতা, অবসাদ।

বিজ্ঞানীরা বলেন, দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকলে এগুলোই একসময় শারীরিক-মানসিক নানা দুরারোগ্য ব্যাধিরূপে দেখা দিতে পারে। আর করোনারি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন, আইবিএস, স্কিন এলার্জি, আলসার, ব্যাক পেইন ইত্যাদি রোগের সাথে টেনশনের যোগাযোগ তো এখন প্রমাণিত। এছাড়াও ক্রমাগত দুশ্চিন্তা ও হতাশায় শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে। কমতে থাকে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। অসুস্থতার সম্ভাবনা যায় বেড়ে।

তাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও টেনশনের আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে দিনের কিছুটা সময় নীরবে কাটান। মেডিটেশন করুন, ধ্যানমগ্ন হোন। ডুব দিন নিজের ভেতর। সুখময় ভাবনার টলটলে স্বচ্ছ জলে ভাসিয়ে দিন নিজেকে। অযাচিত সব রাগ ক্ষোভ দুঃখ বিষাদ একসময় ছেড়ে যাবে আপনাকে। ভারমুক্ত হবেন আপনি। সুস্থতা ও নিরাময়ের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।

দুঃখস্মৃতি ঝেড়ে ফেলুন

দুঃখস্মৃতি স্মরণশক্তি নাশ করে। তাই যাবতীয় দুঃখস্মৃতি, অস্বস্তিকর ও ব্রিবতকর স্মৃতি ঝেড়ে ফেলুন। বাড়বে আপনার স্মরণশক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির দুজন গবেষক কিটি ক্লেইন ও এড্রিয়েল বোলস্। ৩৫ জন স্বেচ্ছাসেবীকে নিয়ে তারা একটি ভিন্নধর্মী গবেষণা পরিচালনা করেন, যেখানে তাদের জীবনের একটি অত্যন্ত বিব্রতকর অভিজ্ঞতা বিস্তারিতভাবে লিখতে বলা হয়। স্বেচ্ছাসেবীরা লিখলেন এবং দিন কয়েক পর জানালেন যে, আগের চেয়ে কিছুটা হালকা বোধ করছেন তারা। এরপর দেখা যায়, দৈনন্দিন বাজারের হিসাব বা গাড়ির চাবি খুঁজে পাওয়ার মতো বিষয়গুলো তারা খুব দ্রুত মনে করতে পারছেন। অর্থাৎ তাদের দৈনন্দিন স্মৃতি জোরদার হয়েছে।

অন্যদিকে এ ধরনের স্মৃতিকে ধামাচাপা দেয়ার যে একটা সাধারণ চেষ্টা আমাদের মধ্যে থাকে তাতে গবেষকরা দেখেছেন, এভাবে অসচেতনভাবেই মস্তিষ্কের দৈনন্দিন স্মৃতিকে আমরা ক্রমান্বয়ে রুদ্ধ করে ফেলি। তাই বিজ্ঞানীদের পরামর্শ হলো, জীবনের যেসব তিক্ত অভিজ্ঞতার সাথে আপনার গভীর আবেগ জড়িয়ে আছে, এরকম ঘটনাগুলো সবিস্তারে লিখে ফেলুন। তারপর কুটি কুটি করে ছিঁড়ে ফেলুন কিংবা পুড়িয়ে ফেলুন। সাবধান! ভুলেও আর পড়বেন না এটি। অর্থাৎ কোনো না কোনোভাবে ঝেড়ে ফেলুন আপনার অস্বস্তিকর স্মৃতিগুলো। সুফল পেতে শুরু করবেন খুব শিগগিরই।

সঠিক জীবনদৃষ্টি দেবে ইতিবাচকতা

ইতিবাচক হোন, আনন্দে বাঁচুন। আর এজন্য প্রয়োজন জীবন সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্থাৎ সঠিক জীবনদৃষ্টি। ইতিবাচকতা আপনার জীবনে সৃষ্টি করবে সুস্থতা ও নিরাময়ের এক চমৎকার অনুরণন। বিজ্ঞানীরা বলেন, ইতিবাচক মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত নিরাময় লাভের ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে ঢের বেশি। কারণ, মনের এ অবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হয়ে ওঠে সবচেয়ে সংহত আর কার্যকরী।

তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইতিবাচক হোন। আশাবাদী ও বিশ্বাসী মানুষদের সংস্পর্শে থাকুন। কৃতজ্ঞচিত্ত থাকুন সবসময়। প্রার্থনায় লীন হোন উচ্চতর অস্তিত্বে। সুস্থতার সম্ভাবনা ত্বরান্বিত হবে। পুরনো বলে হেসে উড়িয়ে দেবেন না মোটেও। এটি বরং নিরাময়ের সবচেয়ে আধুনিক ধারণা। পাশ্চাত্যের খ্যাতনামা গবেষকদের দীর্ঘ গবেষণার ফলাফল এসব তথ্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App