×

বিশেষ সংখ্যা

আগামীর বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০২:৩৩ পিএম

আগামীর বাংলাদেশ
নির্বাচন-উত্তর বাংলাদেশ নতুন করে তার উন্নয়ন অভিযাত্রা শুরু করেছে। দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাস-মাদকমুক্ত সুসেবাভিত্তিক এক উন্নত বাংলাদেশ গড়ার নয়া প্রত্যয় নিয়ে এই অভিযাত্রা শুরু করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সুশাসন নিশ্চিত করার অভিপ্রায়ে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছেন এবং আগামী দিনের খাত-ওয়ারি কর্ম পরিকল্পনার কথা বলছেন। দেশবাসী গভীর আগ্রহ নিয়ে তার এই নতুন করে পথচলা দেখছেন। তাদের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েই তিনি আগামীর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের কথা বলে যাচ্ছেন। গেল বছরে পৃথিবীর তিনটি সর্বোচ্চ হারের প্রবৃদ্ধি অর্জনের একটি দেশের নাম বাংলাদেশ। দেশবাসীর প্রত্যাশা বাড়ন্ত প্রবৃদ্ধির এই ধারা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাক। এই ধারা যেন আরো গতি পায়। আর সেজন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন আরো দ্রুত এবং সুচারুভাবে বাস্তবায়িত হয়। জনগণ আশা করছেন, সরকার উদ্যোক্তাদের জন্য উপযুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করবে এবং তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের পথে সব বাধা দূর করবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের প্রত্যাশাও করছেন জনগণ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যেমন ফলাফল-নির্ভর উন্নয়ন হয়েছে, দেশবাসী আশা করেন আমাদের দেশেও অনুরূপ ‘আউটকাম’ ভিত্তিক উন্নয়ন ঘটবে। তারা চান, শুধু কথা নয় কাজের দিকে নিবেদিত থাকবেন নীতিনির্ধারকগণ। প্রশাসনকেও নয়া ধারার এই উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়ন কার্যক্রমে নিরন্তর যুক্ত থাকতে হবে। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও নেতৃত্ব বিকাশে জনসম্পদ উন্নয়নে নিরন্তর মনোযোগী থাকতে হবে প্রশাসনকে কাক্সিক্ষত সেই আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী ও গবেষকদের যুক্ত করে সর্বেোচ্চ পর্যায়ে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। বছরে অন্তত তিন-চারবার এই কমিটির বৈঠক হবে একেবারে শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের সাথে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এবং উন্নয়ন সম্পর্কিত অন্যান্য মন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিডা, বিএসইসি, ইডরা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই পরামর্শক কমিটির অধিবেশনে এজেন্ডা ভিত্তিক পর্যালোচনা করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাইলে উদ্ভাবন ও বিনিয়োগ বিষয়ক একজন উপদেষ্টাকে এই পুরো কর্মযজ্ঞ সমন্বয়ের দায়িত্বও দিতে পারেন। এর ফলে উন্নত বিশ্বে কীভাবে নীতিনির্ধারণ হচ্ছে, আমাদের আগামীতে কি কি নীতি সংস্কার করতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারই বা কেমনতর হতে হবে সেসব কথা এই কমিটির অধিবেশনেই চুলচেরা আলাপ করা যেতে পারে। এই আলাপের সারসংক্ষেপ ও করণীয় পেশাদারিত্বের সঙ্গে অনলাইন লিপিবদ্ধ ও শেয়ার করে পরবর্তী সভায় সেসবের অগ্রগতি কতটা হয়েছে তা জানানো যেতে পারে। প্রযুক্তিবান্ধব তরুণ কর্মকর্তরা এ ক্ষেত্রে খুবই কাজে লাগাতে পারেন। উল্লেখ্য, সিংগাপুরে ঐ দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির ধারা কেমন হবে সে বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শক বা পর্যালোচনা কমিটি অনেকদিন দিন ধরেই কাজ করছে। দক্ষিণ কোরিয়াতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ওপর অনুরূপ একটি সংসদীয় কমিটি রয়েছে। জাপানে আছে প্রধানমন্ত্রী অ্যাবের ভাবনা প্রসারের জন্য ‘অ্যাবোনমিক্স রূপরেখা’ সম্পর্কিত একটি পরামর্শক কমিটি। এ ছাড়া, জাপানে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সাথেই রয়েছে অনুরূপ পরামর্শক কমিটি। ঐসব কমিটিতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, প্র্যাকটিশনার ও নাগরিক প্রতিনিধিরা নিয়মিত বসেন। তাদের ‘ফিডব্যাক’ নিয়েই মন্ত্রণালয় চলে। ঐ দেশে নাগরিক সেবার মানও তাই উন্নত। সিংগাপুরেও জন পরামর্শ নেয়ার অনুরূপ ডিজিটাল ফিডব্যাকের সুযোগ রয়েছে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে সুনির্দিষ্ট হটলাইনসহ একটি ‘গ্রাহক সেবা সংরক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করেছি। এর ফলে আর্থিক সেবার মান বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশেও আগামী দিনের উন্নয়নের পথ-নকসা, বিশেষ করে ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পায়নের রূপরেখা কেমন হবে তা নির্ধারণ ও নিরন্তর পর্যালোচনার জন্য উচ্চ পর্যায়ে একটি পরামর্শক কমিটি নিশ্চয় হতে পারে। এই কমিটিতে তরুণদের প্রতিনিধি অবশ্য থাকতে পারেন। তারাই আগামীর বাংলাদেশ। তাই তাদের ভাবনার সাথে বর্তমান নীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীদের সংযুক্ত থাকাটা বেশ প্রাসঙ্গিক হবে বলে আমার ধারণা। একই সঙ্গে জনগণের চাওয়া-পাওয়া বুঝতে প্রাসঙ্গিক ফিডব্যাকের ডিজিটাল সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। প্রতিটি নীতি ও বিধির বিষয়ে জনমত সংগ্রহ করা এবং সেই আলোকে সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দূরদর্শী নীতি গ্রহণে বাংলাদেশ অনেকটটাই এগিয়ে। প্রায় দশ বছর ধরে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগে নীতি নির্ধারকরা উৎসাহ দেখিয়ে চলেছেন। এর ফলে প্রচুর সংখ্যক ডিজিটাল তরুণ উদ্যোক্তার বিকাশ ঘটেছে। এই উদ্যোক্তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্টার্ট-আপ উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছেন। তাদের হাত ধরেই লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রাসঙ্গিক অনুষঙ্গ হিসেবেই বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় এসেছে বৈপ্লবিক সব পরিবর্তন। ছয় কোটিরও বেশি মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব বাংলাদেশে সক্রিয়। এর অন্তত অর্ধেক সর্বদাই সচল। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ‘কোর-ব্যাংকিং সলিউশন’ নির্ভর এজেন্ট ব্যাংকিং। লাখ লাখ এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাব এখন চালু হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে বুথ ব্যাংকিং। এর ফলে গার্মেন্টসসহ রপ্তানি খাতের কর্মীদের ব্যাংকিং সেবা তাদের নাগালের মধ্যে নিয়ে যাওয়া সহজতর হয়েছে। সারা বিশ্ব বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন কর্মসূচির প্রশংসা করছে। ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ ও ‘টাইম ম্যাগাজিন’-এর মতো জগৎ বিখ্যাত সাময়িকী বাংলাদেশের এই ডিজিটাল লেনদেনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তা সত্তে¡ও আমাদের ডিজিটাল আর্থিক সেবায় অনেকটাই উন্নতির সুযোগ রয়েছে। শুধু অর্থ দেয়া-নেয়া ছাড়াও সহজেই সঞ্চয়, ঋণ, বীমাসহ অন্যান্য আর্থিক সেবাও গড়ে তোলার উদ্যোগ আমাদের নিতে হবে। সেজন্য ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জাতীয় কৌশল নির্মাণের কাজ চলছে। দ্রুতই এই কৌশল গ্রহণ করে সব অংশীজনকে সাথে নিয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রকে আরো গভীর ও প্রসারিত করা এখন সময়ের দাবি। নিশ্চয় নতুন পর্যায়ে এসে সরকার এ দিকটায় তার নীতি মনোযোগ অগ্রাধিকারভিত্তিতে দেবে। ডিজিটাল আর্থিক সেবা ক্ষেত্রে যে বিশেষ সাফল্য আমরা এরই মধ্যে অর্জন করেছি এবং একে কেন্দ্র করে যে বিপুল ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বেড়েছে ও কর্মসৃজন হয়েছে সেসবের সুযোগ নিয়ে আগামী দিনের বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত পথনকশা নিশ্চয় আমরা তৈরি করতে পারি। সে সক্ষমতা ও উদ্যোক্তা মন আমাদের রয়েছে। দেশের ভেতরের বাজার দিন দিনই বড় হচ্ছে। সেই বাজারকে লক্ষ্য করে অনেক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এক জরিপে জানা গেছে যে, জাপানের ৭০ শতাংশ ক্ষুদে ও মাঝারি উদ্যোক্তাই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী। ইতোমধ্যে জাপানের এ সব উদ্যোক্তা আমাদের বস্ত্রখাতে যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছে। ভারতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগও কম নয়। এ ছাড়া, বড় বিনিয়োগেও এ দুটো দেশের উৎসাহের ঘাটতি নেই। বিশেষ করে বিদ্যুৎ, বন্দর, মেট্রোরেল, সড়ক ও সেতু নির্মাণে জাপান এরই মধ্যে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। আগামী জুন মাসে তারা ঢাকা শহরের তলদেশে পাতাল রেল নির্মাণের জন্য আড়াই বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি সই করবেন। একইভাবে ভারত তার ভ‚মির ওপর দিয়ে নেপাল বা ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ করে দিয়ে ঐ দুটো দেশে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে। চীনের বিনিয়োগও বিপুল আকারে বাংলাদেশে আসছে। এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক কম খরচে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদানের আগ্রহ দেখাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আরো বেশি হারে এফডিআই ও সরবরাহ-চেইন আকর্ষণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে আমাদের জন্য। সেজন্য বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক ক‚টনীতি যাতে আরো কয়েক ধাপ উপরে নিয়ে যেতে পারে সে দিকে আমাদের মনোযোগ দেয়ার সময় এসেছে। সে কারণে আমাদের সতর্ক ও কৌশলী অর্থনৈতিক ক‚টনীতি সচল করতে হবে। সময় বেঁধে বাস্তবায়নের লক্ষ্য স্থির করে আমাদের এই ক‚টনীতির পরিকল্পনা করতে হবে। এ জন্য উপযুক্ত যোগাযোগ, নাগরিক ও উদ্যোক্তাদের ‘ফিডব্যাক’-এর আলোকে আমাদের প্রতিক্রিয়া বা ‘রেসপন্স’ কাঠামো তৈরি করতে হবে। নিঃসন্দেহে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ফলাফল নির্ভর উন্নয়নের প্রশ্নে খুবই তৎপর। তার সারাদিনের কর্মতালিকা খেয়াল করলেই বোঝা যায় তিনি কীভাবে দেশটাকে সামনে নিয়ে যাবার জন্য সর্বক্ষণ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি সামনে থেকে আমাদের আগামীর পথ নকশা কেমন হবে তার রূপরেখা দিয়ে যাচ্ছেন। স্বদেশে ও বিদেশে আমরা কোন পথে হাঁটবো তার পথরেখা তিনিই তৈরি করে দিচ্ছেন। তার সহযোগীদের জন্য ‘টোন সেট’ করে দিচ্ছেন। তার সেই পথচলার ক্ষীপ্রতার সাথে আমাদের নীতিনির্ধারকরা ও প্রশাসন কতটা তাল মেলাতে পারছেন সেটিই এখন দেখার বিষয়। বিশেষ করে, বিদেশি উদ্যোক্তা ও নীতিনির্ধারকদের সাথে মুখোমুখি হবার সময় আমাদের যথেষ্ট তথ্যনির্ভর ও চটপটে হতে হবে। যে কোনো বিনিয়োগ প্রস্তাব কদ্দিনে অনুমোদন পাবে, আনুষঙ্গিক সেবা পেতে কত সময় ও খরচ লাগবে এসব কিছুই আগেভাগে তারা জানতে চাইবেন। যদি আমরা তাদের প্রস্তাব গ্রহণ নাও করি সে কথাটিও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জানিয়ে দিতে হবে। অযথা কালক্ষেপণের সুযোগ নেই। প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনির্দিষ্টকাল আমাদের জন্য তাদের অর্থ ব্লক করে রাখবেন না। কারণ বিনিয়োগ যোগ্য অর্থ ফেলে রাখারও তো একটা খরচ আছে। সময়মতো সাড়া না পেলে তারা ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া বা মিয়ানমার চলে যাবেন। শুধু বিনিয়োগ আকর্ষণই নয়, আমাদের পণ্যের নতুন বাজার খোঁজার জন্যও অর্থনৈতিক ক‚টনীতিকে নতুন করে কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে হবে। আশার কথা, সনাতনী রপ্তানির বাজারের চেয়ে নয়া রপ্তানি বাজারে আমাদের পণ্যের প্রবেশের হার হালে খুবই দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে জাপান, চীন, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে আমাদের তৈরি পোশাকের রপ্তানি সনাতনী বাজারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। মূলত আমরা কম দামে গুণমানের পণ্য রপ্তানি করার যে সক্ষমতা অর্জন করেছি সে কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের দেশে এখন রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আর্থিক প্রণোদনা এবং অবকাঠামোর উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। আমরা নতুন করে পায়রা বন্দর গড়ে তুলছি। মোংলার সংস্কার করছি। চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ করছি। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছি। জ্বালানি নিশ্চয়তা অনেকটাই নিশ্চিত করতে পেরেছি। এলএনজি টার্মিটাল স্থাপন করেছি। একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। ব্যক্তি খাত ও রাষ্ট্রীয় খাতের এসব অঞ্চলে প্রচুর বিদেশি উদ্যোক্তা আসতে শুরু করেছে। আট দশটি অঞ্চল এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। তাই এফডিআই আকর্ষণের নয়া সুযোগ এসেছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মিরেরসরাইসহ বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু করে দিতে পারলেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও আগ্রহ দুই-ই বাড়বে। তাদের দেখাদেখি অন্য বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে আসতে শুরু করবেন। এখন প্রয়োজন আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রার বিস্ময়কর রূপান্তর গল্পটা ভালোভাবে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের বলা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার মতো করে এ গল্প বলে যাচ্ছেন। এখন দরকার তাকে প্রয়োজনীয় তথ্য, উপাত্ত ও বিশ্লেষণ দিয়ে পেশাদারি সমর্থন প্রদান করার। তবে আমাদের আর্থিকখাতের শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা বিনিয়োগ আকর্ষণের এক প্রধান পূর্বশর্ত। বিডাসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকেও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংস্কৃতি আয়ত্ত করতে হবে। ঝটপট সিদ্ধান্ত নিতে পারলে নিশ্চয় বিদেশি পুঁজি ও সরবরাহ চেইন আকর্ষণ করা কঠিন হবে না। এ কথা ঠিক দ্রুত অগ্রসরমান দেশের অর্থনীতিতে মাঝে মধ্যেই ভারসাম্যহীনতা ও ‘ডিজলোকেশন’ দেখা দিতেই পারে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্যে মুদ্রানীতি, লেনদেনের ভারসাম্য এবং সামগ্রিকভাবে আর্থিক স্থিতিশীলতার দিকে নীতিনির্ধারকদের তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। এসব কিছুর সুষ্ঠু সমন্বয় করে যেতে হবে। আমাদের বাংলাদেশ এখন আর ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলেই সীমাবদ্ধ নয়। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে আমাদের কোটি খানিকেরও বেশি বাঙালি। বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাড়াও প্রবাসীদের মধ্যে রয়েছে উঁচুমানের বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, শিক্ষক ও উদ্যোক্তা। এদের বুদ্ধি, পরামর্শ ও অর্জিত পারদর্শিতাকে অবশ্য স্বদেশের শিক্ষা, গবেষণা ও আধুনিক শিল্পায়ন ও অবকাঠামো নির্মাণের কাজে লাগাতে পারি। জেনে খুশি হলাম, যে এনআরবি প্রকৌশলীদের প্রথম সম্মেলন ফেব্রুয়ারি ২৬ তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধামন্ত্রী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রবাসী ও স্বদেশি বাঙালিরা মিলে ‘ব্রিজ টু বাংলাদেশ’ (‘বিটুবি’) একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে। আমাকে এর উপদেষ্টা পর্ষদে যুক্ত করা হয়েছে। সংস্কৃতি অঙ্গনের স্বনামধন্য আরো দুজনকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। প্রকৌশলীরা ছাড়াও অন্যান্য পেশার আরো অভিজ্ঞজন এই সংগঠনের সাথে যুক্ত হবেন বলে প্রত্যাশা করছি। একই সাথে এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও সংস্কৃতিকে বিদেশের মাটিতে তুলে ধরা সম্ভব হবে। ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামসহ সব অগ্রসরমান দেশই তাদের প্রবাসীদের জ্ঞান, বুদ্ধি, অর্থের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তাহলে আমরা কেন পারবো না? আমরা সেজন্য প্রবাসী পেশাদারদের জন্য প্রশাসনের সাথে যোগসূত্র স্থাপনের একটি সুনির্দিষ্ট মঞ্চ থাকা বাঞ্ছনীয়। সেখানে কেউ না কেউ ফোকাল পয়েন্টে থাকবেন। প্রবাসীদের প্রতিনিধিরা তাদের সাথে সংযোগ রেখে নির্ধারণ করবেন কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নে তারা অংশগ্রহণ করতে পারেন। আমার মনে পড়ছে ‘সিলিকন ভ্যালিতে’ এক সম্মেলনে গিয়ে একদল প্রবাসী প্রকৌশলীর সাথে দেখা হয়েছিল। খুব সম্ভবত আওয়াল সাহেবের নেতৃত্বে ঐ দলের সাথে আমার আলাপ হয়েছিল ২০১৪ সালের দিকে। তারা বল্লেন জাপানের পাতাল রেল নির্মাণে তারা কাজ করছেন। তাহলে বাংলাদেশে কেন পাতাল রেল গড়া যাবে না? তাদের আমি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম বাংলাদেশ ব্যাংকে। এসেছিলেন তারা। একটি উপস্থাপনাও দিয়েছিলেন। পাতাল রেল নির্মাণে তাদের আগ্রহ দেখে আমি খুবই আশান্বিত হয়েছিলাম। তাদের কথা থেকে বুঝেছিলাম যে যানযটের শহর ঢাকায় পাতাল রেল নির্মাণ করার কোনো বিকল্প নেই। পরিবেশসম্মত এই পরিবহন ব্যবস্থা নির্মাণে প্রবাসীদের সেই আকাক্সক্ষা দেরিতে হলেও জাইকার সমর্থনে পূরণ হতে যাচ্ছে। এ বছরই জুন মাসে এর নির্মাণের জন্য জাপানের সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। প্রত্যাশা করছি বিদেশে কর্মরত অভিজ্ঞ এসব প্রকৌশলী আমাদের পাতাল রেল নির্মাণে পর্যাপ্ত অবদান রাখার সুযোগ পাবেন। এভাবেই আগামীর বাংলাদেশ ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে। একইভাবে উন্নত জনশক্তি উন্নয়নেও প্রবাসী শিক্ষক, গবেষক ও বিজ্ঞানীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন’ কেন্দ্র গড়ে তুলতে তাদের আংশিক বা পূর্ণ সময় নিশ্চয় দিতে পারেন। সেজন্যে জাতিসংঘ সমর্থিত এক সময়ের চালু হওয়া ‘টকটেন’-এর মতো মেধা আকর্ষণ প্রকল্প নিশ্চয় পরিকল্পনা ফের মন্ত্রণালয় নিতে পারে। সরকারের বাজেট থেকে ‘আর এন্ড ডি’ তহবিল গড়ে তোলার মাধ্যমেও এ প্রকল্প পরিচালনা করা সম্ভব। উন্নয়ন অংশীদাররাও নিশ্চয় এতে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হবেন। ব্যক্তি খাতও তার সামাজিক দায়বোধ থেকে এতে অংশ নিতে পারে। এভাবেই হাতে হাত ধরে আমরা বাংলাদেশটাকে উন্নত দেশে পরিণত করার অভিযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারি। এভাবেই বাংলাদেশ জয়ী হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App