×

মুক্তচিন্তা

জাতীয় অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৩৯ পিএম

জাতীয় অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমদ

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা জাতীয় অধ্যাপক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ভাষাসৈনিক ড. সুফিয়া আহমদ। তিনি ১৯৩২ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সুফিয়া আহমদ প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন ঢাকার সেন্ট ফ্রান্সিস জ্যাভিয়ার্স স্কুলে এবং দার্জিলিংয়ের ডাউহিল স্কুলে।

দেশ বিভাগের পর প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় তৎকালীন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম দশজনের মেধা তালিকায় অষ্টম স্থান অধিকারের গৌরব অর্জন করেন।

তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমদের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮৩ সালে এই বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

এই মহীয়সী নারী একুশে পদকসহ তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশ-বিদেশের অনেক সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত হন। রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনে অংশগ্রহণ ড. সুফিয়া আহমদের জীবনের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৪৮ সালে কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় বাংলা ভাষার প্রতি সৃষ্টি হয় গভীর অনুরাগ।

১৯৪৮ সালে যখন দেশে ভাষাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিতর্কের সূত্রপাত্র হয় তখন সুফিয়ার বাবা বিচারপতি ইব্রাহিম বরিশালের জেলা জজ। তার বাবা তখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ওপর এর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে ছিলেন খুবই সচেতন।

সে সময় বাবার সাহচর্যেই তিনি প্রথম বাংলা ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৫০ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। হোস্টেলে না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সে সুবাদেই সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।

১৯৫২ সালে একুশের আন্দোলনে মেয়েদের মধ্যে সুফিয়া আহমদ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে যেসব মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোতে যোগদান করেছেন এবং অনেক সময় বক্তৃতা রেখেছেন।

এ সময় ঢাকা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের সংগঠিত করারও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ তারিখে ঐতিহাসিক আমতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্রজনতার সমাবেশে সুফিয়া আহমদ উপস্থিত ছিলেন। ওই সমাবেশ থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত হলে মেয়েদের যে দলটি প্রথম বের হয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সুফিয়া আহমদ সে দলে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় গেটের সামনে পুলিশ কর্তৃক লাঠির ব্যারিকেড দেয়া ছিল। তাঁদের দলটি ওই ব্যারিকেড ভেঙে অগ্রসর হয় এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে। পুলিশের লাঠির আঘাতে সুফিয়া আহমদ আহত হন। টিয়ার গ্যাসের ঝাঁজে ছটফট করতে থাকেন।

তখন পুরো এলাকা ছিল রণক্ষেত। এ সময় কোনো রকমে তৎকালীন সলিমুল্লাহ হলের প্রভোস্ট ড. ওসমান গণির বাসায় আশ্রয় নেন তিনি। একুশের রক্তাক্ত ঐতিহাসিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সংগ্রামের কর্মী ছিলেন সুফিয়া আহমদ। সে দিন বিকেলে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদের অধিবেশনে পরিষদ সদস্য আনোয়ারা খাতুনের বক্তৃতায় সুফিয়া আহমদের ওপর পুলিশের হামলার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ পায়।

একুশের ঘটনার পার ভাষা আন্দোলন পরিচালনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। সুফিয়া আহমদ সাংবাদিক লায়লা সামাদসহ বেশ কয়েকজন মেয়ে ভাষা আন্দোলনের জন্য অর্থসংগ্রহের কাজ করেছেন। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তুলেছেন। এভাবে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন কাজে তিনি আত্মনিবেদন করেছেন।

ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ধানমন্ডিতে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে ‘ভাষাসৈনিক সুফিয়া আহমদ সড়ক’। নারী জাতির আদর্শ ও গর্ব ড. সুফিয়া আহমদ বর্তমানে লেখালেখি, গবেষণা ও সমাজসেবা কর্মে নিয়োজিত।

এম আর মাহবুব ও সালেক নাছির উদ্দিন : লেখকদ্বয় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস গবেষক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App