×

মুক্তচিন্তা

এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:২৪ পিএম

অপরাধ স্বীকার এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ পেতে ৯ শর্ত মেনে নিয়ে শনিবার টেকনাফে ২৯ শীর্ষসহ ১০২ ইয়াবা চোরাকারবারি প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। আত্মসমর্পণের এই প্রক্রিয়াকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

গত বছর মে মাসে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর দেশজুড়ে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়। শুধু কক্সবাজারেই নিহত হয় ৪৪ জন। তাদের মধ্যে শীর্ষ ৭৩ ইয়াবা কারবারির তালিকাভুক্ত পাঁচজন রয়েছে।

গত ডিসেম্বরে মাদক কারবারিদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক সুযোগ দেয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত আসে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণকারীদের উদ্দেশে বলা হয়, তাদের নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য যা যা করণীয় তা করা হবে; আইনগত সহায়তা দেয়া হবে।

আইনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে যাতে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নিষ্পন্ন করা যায়, সে ব্যবস্থাও নেয়া হবে। প্রতি জেলায় এ রকম আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে বলে পুলিশের মহাপরিদর্শক জানান।

প্রসঙ্গত, ইয়াবা কারবারিরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ উদ্যোগে কক্সবাজার জেলা পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের তৎপরতার ফলেই শনিবারে অনুষ্ঠানে ১০২ জন ইয়াবা চোরাকারবারি আত্মসমর্পণ করে। আশা করা যায়, এর সুফল মিলবে।

মরণ নেশা ইয়াবা দেশের তরুণ সমাজকে এখন সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে। মুড়ি-মুড়কির মতো সর্বত্র ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। ইয়াবাকে পুঁজি করে রমরমা ব্যবসা চলছে। কক্সবজার-টেকনাফসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় ইয়াবার ব্যবসা জমজমাট।

ওইসব এলাকায় তরুণদের কাছে ইয়াবা ব্যবসা এখন হট স্মার্ট ব্যবসা। বলাই বাহুল্য, থানা পুলিশকে হাত করেই চলছে এই ব্যবসা। এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রাজনীতি-ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও।

চোরাচালান চক্রে জড়িত বর্তমান স্থানীয় সাংসদের ভাই, বোন, ভাগ্নেসহ স্বজন, সাবেক সংসদ সদস্যে ছেলে, পৌর মেয়রের ভাই, উপজেলা চেয়ারম্যান, পুলিশ কর্মকর্তা এমনকি সাংবাদিকদের যোগসূত্রের তথ্যপ্রমাণ রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে।

কক্সবাজার জেলায় ৭ প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় ৭৬৪ ডিলার ইয়াবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। ইতোমধ্যেই স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী অনেক ব্যক্তির নাম ইয়াবা গডফাদার হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে, কয়েকজন আটকও হয়েছেন।

মাদক ব্যবসা-বিস্তার রোধে সরকারের ঘোষিত নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও ইয়াবা বাণিজ্যের ভিত নাড়ানো যাচ্ছে না। সীমান্তবর্তী এলাকার মিয়ানমার অংশে ইয়াবা তৈরির কারখানাগুলো নিষ্ক্রিয় করা এবং এ দেশে ইয়াবা অনুপ্রবেশ রোধে বাংলাদেশ-মিয়ানমার আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর সমঝোতায় উপনীত হওয়া জরুরি।

ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখা উচিত। তবে এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইয়াবা পাচার একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে তা মনে করার কারণ নেই।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে যেসব চিহ্নিত প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত, তাদের বিষয়ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশকে সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App