×

সাহিত্য

ভিড়ে ঠাসা ছুটির দিন শিশুদের হাতে হাতে বই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:১৩ এএম

ভিড়ে ঠাসা ছুটির দিন শিশুদের হাতে হাতে বই
বিক্রি বাট্টা নিয়ে গত ১৫ দিন ধরে প্রকাশকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং শিশুপ্রহরে তাদের কপালের চিন্তার ভাঁজ উবে গিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসির ঝিলিক দেখা গেছে। এ দিন ভিড়ও যেমন ছিল বিক্রিও ছিল চমকে যাওয়ার মতোই! সবার হাতে হাতে ছিল বই। অথচ মন আর মননে প্রাণের মেলা হলেও অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাণিজ্যিক দিকটা চমকে দেয়ার মতো। দেশের অর্থনীতিতে সৃজনশীলতায় সমৃদ্ধ এ খাতের অবদান যে কিছুটা রয়েছে তা অনেকের কাছে উপেক্ষিতই থেকে যায় । নিন্দুকেরা বলেন, ইন্টারনেটের যুগে কাগজের বইয়ের কদর কমে গেছে। তাই বই আর কেউ পড়ে না। প্রকাশকরা কোনোরকমে টিকিয়ে রেখেছে এ খাতটি। তবে আশাবাদীরা বলছেন, বই বিক্রি দিন দিনই বেড়ে চলেছে। তরুণদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা কমে যায়নি। বিশেষ করে অমর একুশে গ্রন্থমেলার মতো প্রাণের মেলা তরুণদের বইপ্রেমকে উসকে দেয় প্রতি বছরই। প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাণিজ্যিক দিকটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছরই বই বিক্রি বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বই বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয়ও। ক’বছর আগেও বই মেলায় টার্গেট ধরা হয়েছিল ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকার মতো। আর এ বছর সেখানে টার্গেট ধরা হয়েছে প্রায় শত কোটি টাকার অধিক। মাসব্যাপী মেলার ১৫তম দিনে টার্গেট পূরণের সম্ভাবনা ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। সূত্র মতে, গত ২০১৮ সালে বই বিক্রির টার্গেট রাখা হয়েছে শত কোটি টাকা। এ বছর শত কোটিরও বেশি। কারণ গত বছরের চেয়ে স্টলের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বইয়ের সংখ্যাও বেড়েছে। মিরপুর থেকে আসা আইভি হক জানান, গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন প্রকাশনীর ক্যাটালগ সংগ্রহ করেছি। আজ তালিকা ধরে ধরে সেসব বই সংগ্রহ করেছি। বিক্রেতারা জানালেন, পরিসর বৃদ্ধি ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে মেলা চত্বরে স্বচ্ছন্দে চলাফেরা আর লেখকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ও নতুন নতুন বই প্রকাশের কারণে পাঠক ও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। গেল বছরের চেয়ে তাই এ বছর বেচাবিক্রি অনেক বেড়েছে। বলা যায়, টার্গেটের চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। মেলার ১৫তম দিনে এসে দেখা যাচ্ছে, যে হারে বেচাবিক্রি বাড়ছে তাতে এবারের বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে পারে। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের কর্ণধার আদিত্য অন্তর বললেন, মন আর মননের চারণভ‚মি হলেও বই প্রকাশনার অর্থনৈতিক দিকটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষ যত মননশীল হয়, শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা যত বাড়ে ততই লেখক, সাহিত্যিকদের কদর বাড়ে। আর সে কারণেই বইয়ের চাহিদা যেমন বাড়ে, তেমনি এ খাতে বিনিয়োগ-বাণিজ্য মুনাফাও বাড়তে থাকে। তিনি জানালেন, প্রতি বছরই এ খাতের প্রসার হচ্ছে। এ বছর তো আরো বেশি বেড়েছে। মূল মঞ্চের আয়োজন : গতকাল মেলা চলে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১০টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়ে শিশু-কিশোর সঙ্গীত প্রতিযোগিতার চ‚ড়ান্ত নির্বাচন। এতে ক-শাখায় ১৬ জন, খ-শাখায় ১৫ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী কল্যাণী ঘোষ, সুজিত মোস্তফা এবং চন্দনা মজুমদার। আগামী ২২ ফেব্রæয়ারি এ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা এবং পুরস্কার বিতরণ করা হবে। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি মোহাম্মদ সাদিক এবং সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন। সন্ধ্যায় কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি ইকবাল আজিজ এবং হারিসুল হক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল এবং রূপা চক্রবর্তী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল হাসান আব্দুল্লাহর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঘাসফুল শিশু-কিশোর সংগঠন’ এবং আতিকুর রহমান উজ্জ্বলের পরিচালনায় ‘ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র’-এর নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশনা। লেখক বলছি কর্নার : এবারের বইমেলায় প্রথমবারের মতো ভালো মানের ৫ জন লেখককে ২০ মিনিট করে নিজের বই নিয়ে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে মেলা আয়োজক কর্তৃপক্ষ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেক পাড়ে ‘লেখক বলছি’ কর্নারের এ আয়োজনে গতকাল শুক্রবার নিজেদের সাহিত্যকর্ম বিষয়ে আলাপনে অংশ নেন কবি আসলাম সানী (পুরান ঢাকার জেল্লা লালবাগ কেল্লা), কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু (ঝুলন পূর্ণিমা থেকে নেমে এলো), শিশুসাহিত্যিক পলাশ মাহবুব (বাবুদের বাজিমাত), কবি ও গল্পকার ফারুক আহমেদ (আজিজুল একটি গোপন নামতা), কথাসাহিত্যিক জুলফিয়া ইসলাম (গল্প সমারোহ)। আজকের আয়োজন : আজ ১৬ ফেব্রæয়ারি মেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল ১০টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত নির্বাচন। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর : শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মইনুদ্দীন খালেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ফরিদা জামান, নিসার হোসেন এবং মলয় বালা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন চিত্রশিল্পী হাশেম খান। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App