×

ফিচার

নাটকে ইংরেজি নামের ছড়াছড়ি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০২:৪৭ পিএম

নাটকে ইংরেজি নামের ছড়াছড়ি
লোন, ফোর্থ সাবজেক্ট, হোম থিয়েটার, থার্ড ডিগ্রি, দ্য ব্রেকআপ, ব্যাচ ২৭, জাস্ট ফ্রেন্ড, আল্টিমেটাম, স্লিপিং বিউটি, লাভ স্টেশন, চিটার নাম্বার ওয়ান, টিল দ্য এন্ড, বাস নাম্বার, জেন্টলম্যান, আনম্যারিড, এক্স গার্লফ্রেন্ড, ফ্রেন্ডস উইথ বেনিফিটস, লাভ এন্ড সেক্রিফাইস, জার্নি বাই লঞ্চ, ব্যাকবেঞ্চার, ব্যাচেলর পয়েন্ট, মি. বয়ফ্রেন্ড, নো লাইস, বয়ফ্রেন্ড ভার্সেস গার্লফ্রেন্ড, টুলেট ব্যাচেলর, ডেড বল, আফটার ম্যারেজ, স্যাটেল ম্যারেজ, অ্যাপয়েন্ট লেটার, জার্নি বাই বাস, লাস্ট সামার, হট এন্ড স্পাইসি, ওয়ান ওয়ে মোর, অটো সার্ভিস, রান, লাভলিংক, লাভ এন্ড কোং, কোর্ট ম্যারেজ, রানওয়ে, লাভলেইন, রোড টু আমেরিকা, বেট, হেই বেবি, ডিসিপ্লিন, রোমান্টিক সিনড্রোম, আউট অফ নেটওয়ার্ক, জাস্ট ফ্রেন্ড, রেস, ককটেল, টিবয়, রিভিশন, এইম ইন লাইফ, ফার্স্ট ইয়ার ড্যাম কেয়ার, ফ্রেন্ডস, কাপল, রুমমেট, সিনেমাটোগ্রাফি, ও মাই গড, টু এয়ারপোর্ট।
‘নামে কী যায় আসে’ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে টিভি নাটকের সোনালি অতীতকে পদদলিত করতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন নির্মাতারা। তাদের হাতে পড়ে নাটকের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। নাটকের মান নেমে গেছে অনেক আগেই। টিকে ছিল নামের সৌন্দর্য, তাও বিলীন হতে বসেছে। নাম, নাটকের অলঙ্কার। এই সত্যকে ভুলে গিয়ে নামের প্রতি ভ্রæক্ষেপহীন নির্মাতারা শ্রæতিকটু নামের নাটক নির্মাণে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আর এই নামগুলোর সিংহভাগই ইংরেজি। ইংরেজি নামের প্রতি নির্মাতাদের আকর্ষণ বলতে গেলে নেশার পর্যায়ে চলে গেছে। বাংলা নামের পাশাপাশি ইংরেজি নামের সহাবস্থান আগেও ছিল, এখনো যেমন আছে। কিন্তু বাংলা নাম ফেলে ইংরেজি নামের প্রতি এতটা দুর্বলতা আগে দেখা যায়নি। এমন কিছু ইংরেজি ভাষার শব্দ আছে যেগুলোর বাংলা প্রতিশব্দ দর্শকদের কাছে অপরিচিত বা স্বল্পপরিচিত। এমন শব্দে নাটকের শিরোনাম করলে কারোরই অভিযোগ থাকার কথা নয়। ‘ল্যাম্পপোস্ট’, ‘এডিটর’, ‘কর্পোরেট’, ‘গেইট’, ‘পারফিউম’, ‘অফিসার’; এমনই কিছু সাম্প্রতিক নাটকের নাম। ইংরেজি নামের নাটকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই নামগুলো হলেও নির্মাতারা ইংরেজিপ্রীতির অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়েছেন। বাকি নির্মাতারা এখনো অভিযুক্ত। তারা ইংরেজি নাম রেখেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না। এমন কিছু ইংরেজি শব্দও ব্যবহার করছেন যেগুলোকে অশ্লীল বলতেও অনেকের দ্বিধা নেই। এসব ইংরেজি নাম শুনলেই নাটকের বিষয়বস্তুর কদর্য দিক সম্পর্কে টের পাওয়া যায়। পুরো নাটক দেখে নাটকের অন্তঃসারশূন্যতা বোঝার দরকার হয় না। নাম শুনেই বুঝে নেয়া যায়, বাজার ধরতেই এসব নাটকের জন্ম। বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট দিবসগুলো এলেই টিভি চ্যানেলগুলো মাইকে সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক বলে নিজেদের দাবি করতে থাকে। ফেব্রæয়ারি মাসেও চ্যানেলগুলো দেশীয় সংস্কৃতির সেবক বলে নিজেদের জাহির করে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। অথচ এই চ্যানেলগুলোতে বছরভর প্রচারিত হয় অশ্রাব্য ইংরেজি নামের নাটকগুলো। তরুণ দর্শকদের চ্যানেলমুখী করার এক গোপন মিশন নিয়ে এই ইংরেজি নামগুলোর অনুমোদন দেয় চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। তরুণ দর্শকরা বাংলা নামের নাটকের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি না দেখালেও চ্যানেলগুলো অতি উৎসাহে ইংরেজি নামে আসক্ত হয়ে পড়েছে। চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড ইংরেজি নামকে নিরুৎসাহিত করে নির্মাতাদের নির্দেশনা দিয়েছে। সেই নির্দেশনা খুব কার্যকর না হলেও একেবারে বৃথা যায়নি। টিভি চ্যানেলগুলোর ভেতরে এ ধরনের কোনো নির্দেশনার কথা আমাদের জানা নেই। টিভি চ্যানেলে প্রচারিত ইংরেজি নামের ঢল প্রমাণ করছে, চ্যানেলগুলোর কোনো ধরনের এলার্জি নেই নাটকের ইংরেজি নামে। টিভি চ্যানেলের রেড সিগনাল না থাকায় নির্মাতারা কোনো ধরনের বিচার-বিবেচনা ছাড়াই ইংরেজি নামের নাটক বানিয়ে চলেছেন। একটি দুটি নয়, ডজন ডজন ইংরেজি নামের পাহাড় চেপে বসেছে দর্শকদের ঘাড়ে। দুয়েকটি নাটক জনপ্রিয়তা পাওয়ার ফলস্বরূপ ইংরেজি নামের প্রতি এই গা ভাসানো বলে জানা যায়। টিভি চ্যানেলের দর্শকদের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে ইউটিউব চ্যানেলের অগণিত দর্শক। অনলাইনে দর্শকদের টোপ গেলাতেই ইংরেজি নামের প্রতি পক্ষপাত। নাটকের বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন, একখানা ইংরেজি নাম রেখেই দর্শকদের কুপোকাত করতে চান নির্মাতারা। গাদা গাদা ইংরেজি নামের নাটকে ইউটিউব সাজিয়ে রাখলেও এসব নাটকের প্রতি দর্শকদের অগাধ মুগ্ধতার কথা জানা যায় না। তাতে কোনো বিকার নেই নির্মাতাদের। গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে সবাই ইংরেজি নামের নাটক বানাচ্ছেন। এসব নাটকের নির্মাতাদের তালিকায় সিনিয়র থেকে তরুণ, সব কাতারের নির্মাতাই আছেন। তবে কয়েকজন নির্মাতা ইংরেজি নামে একেবারে বুঁদ হয়ে আছেন। এই নির্মাতারা বাংলা নামকে নির্বাসনেই পাঠিয়ে দিতে উদ্যত। এসব নাটকে অভিনয় করছেন দেশের জনপ্রিয় টিভি তারকারা। সুস্থ নাটকের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা ভুলে গিয়ে তারা ক্যারিয়ারে নাটকের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছেন মাত্র। নাটকের ইংরেজি নামের মহামারী যে নাটকের ঐতিহ্য ও ভবিষ্যতের জন্য সুখকর নয়, বাজারি চিন্তার প্রতি নাট্যজগতের অসহায় সমর্পণ, এটা নাটক নির্মাতা ও কুশলীরা বেমালুম ভুলে বসে আছেন। নাটকের সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে নীরব। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে তথ্য মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সবাই চুপচাপ বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা সয়ে যাচ্ছেন। সচেতন সংস্কৃতিকর্মীরা ইংরেজি নামের অত্যাচার থেকে দর্শকদের রেহাই দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন অনেকদিন ধরেই। তাদের আবেদন, সুমিষ্ট বাংলা নামগুলোকে ফিরিয়ে এনে টিভি নাটকের ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখা হোক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App