×

মুক্তচিন্তা

জামায়াত কোন পথে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪৭ পিএম

দলীয় গঠনতন্ত্র ও কর্মকৌশলে নানা সংস্কারের জন্য বেশ চাপ সৃষ্টি হয়েছে ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতে ইসলামীতে। বিশেষ করে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এ চাপ জোরদার হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে জামায়াতের হাইকমান্ড বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিলেও তাতে নেতাকর্মীদের সবাই সন্তুষ্ট হতে পারেননি। বরং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দলটিতে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

গত শুক্রবার দলের অন্যতম নীতিনির্ধারক, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক জামায়াত থেকে পদত্যাগ করে মতবিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে জামায়াত নামের দল বিলুপ্তির প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি পদত্যাগ করেছেন।

তবে এসব কারণে নাকি কোনো ‘কৌশলের’ অংশ হিসেবে তিনি পদত্যাগ করেছেন, তা নিয়ে নানা মহলে রয়েছে গুঞ্জন। রাজনৈতিক বোদ্ধা থেকে শুরু করে অনেকেই মনে করেন রাজনীতিতে টিকে থাকার প্রয়োজনে জামায়াত এখন ভিন্ন কৌশল নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে।

ইসলামী ছাত্রশিবির ১৯৭৯ সালেই ওয়ার্ল্ড অ্যাসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ নামে একটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সদস্যপদ লাভ করে। ফলে শিবিরের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক আরো আগে থেকেই ছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ইসলামী ছাত্র সংঘ নামে জামায়াতের ছাত্র সংগঠনটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ গণহত্যা, গণধর্ষণে অংশ নেয়। মানবতাবিরোধী ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে জামায়াত-শিবির ১৯৭২ সালেই নিষিদ্ধ করা হয়।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতা লাভের পর জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি আবারো উন্মুক্ত হয়। এরপর থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় রগকাটা, সন্ত্রাসসহ দেশে জঙ্গি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জামায়াত-শিবির নেতৃত্ব দেয়।

এর আগে হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, হিযবুত তাহরীরের মতো জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মূল নেতৃত্বের সবাই ছিলেন জামায়াত কিংবা ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়েও জামায়াত-শিবিরকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বর্তমান সরকার আমলে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিক দলকে নিষিদ্ধ করার জন্য বারবার দাবি উঠছে। ইতোমধ্যে এই দল নিবন্ধন বাতিল হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণে যোগ্যতা হারায়। দলের একটি অংশ সংস্কার করে নতুন নামে মাঠে নামার পক্ষে আরেক অংশ আগের অবস্থানে অনড়।

৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার জন্য সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের জরুরি সভা হয়। দলের তরুণ নেতৃত্বের দাবির মুখে সভায় একাত্তরের ভুল রাজনৈতিক ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং জামায়াত নামক দল বিলুপ্ত করে সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে দলকে নিয়োজিত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা মজলিশে শূরায় অনুমোদন পায়নি।

তবে নতুন নামে দল গঠনের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে জামায়াতে ইসলামীতে। জামায়াতে ইসলামীকে এই দেশে রাজনীতি করতে হলে ১৯৭১-এর রাজনৈতিক ভুল স্বীকার তথা পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে কাজ করার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এরপর তাদের রাজনীতি ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে সেটা দেখার বিষয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App