×

জাতীয়

খালেদার মুক্তির জন্য নির্দিষ্ট কর্মসূচি নেই বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৩৮ পিএম

খালেদার মুক্তির জন্য নির্দিষ্ট কর্মসূচি নেই বিএনপির
দলীয় চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি নেই বিএনপির। তার মুক্তির জন্য আইনি প্রক্রিয়া এবং আন্দোলন একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও এক বছরেও কর্মপরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। এ নিয়ে দলীয় হাইকমান্ডের প্রতি ক্ষুব্ধ বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা দ্রুত কার্যকর কর্মসূচি চান। ধুঁকে ধুঁকে না মরে, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে মরতে চান তারা। তৃণমূলের চাপে কেন্দ্রীয় নেতারা এখন আন্দোলন সংগ্রামের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির মূল পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপির শীর্ষনেতাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। আন্দোলনের ডাক দিয়ে শেষ পর্যন্ত তা টেনে নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতার অভাব অনুভব করছেন হাইকমান্ডের একাংশ। কারো পরামর্শ- এগোতে হবে আইনি প্রক্রিয়ায়ই। আবার কেউ সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পরামর্শ দিচ্ছেন। এতসব পরামর্শের মধ্যে কোন পথে এগোবে আন্দোলন-এ নিয়ে টানাপড়েন চলছে। সুনির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডায় একমত হতে পারছেন না দলটির নীতিনির্ধারকরা। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার দিন খালেদা জিয়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের বলেছিলেন, রাজনীতিতে এমন হয়। খুব শিগগিরই আমি বেরিয়ে আসব। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছিলেন, খালেদা জিয়াকে বেশিদিন এই সরকার আটকে রাখতে পারবে না। দলের অন্য নেতারা বেশ উচ্চস্বরে বলতেন- খালেদা জিয়াকে জেলে রাখলে সরকারের পতন ত্বরান্বিত হবে। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর মাসখানেক রাজপথে বেশ সক্রিয় ছিল বিএনপি। বিক্ষোভ, কালো পতাকা মিছিল, কালোব্যাচ ধারণ, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, অনশন ও স্মারকলিপি কর্মসূচিসহ তারা জনসভা ও সমাবেশও করেছেন বিভাগীয় পর্যায়ে। কিন্তু এপ্রিলে এসে ভাটা পড়ে দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দোলনে। কর্মসূচি চলাকালে সরকারি বাধার মুখে রাজপথের কর্মসূচি থেকে সরে এসে নয়াপল্টন ও প্রেসক্লাবভিত্তিক কর্মসূচিতে সরব ছিল বিএনপি। অন্যদিকে, দীর্ঘ এক বছরেও দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে জোরালো কোনো কর্মসূচি কেন দিতে পারল না এমন প্রশ্নে তৃণমূলে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দলটির ভ‚মিকা। দলটির তৃণমূল নেতারা ক্ষোভ-বিএনপিতে এখন খালেদা জিয়ার চর্চা নেই বললেই চলে। কোনো নির্বাচনের আগে শক্ত কর্মসূচি দিয়ে নেত্রীকে মুক্ত করা হলো না। তৃণমূল নেতারা বলেছেন, বিএনপি শীর্ষ নেতারা আসলে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় কিনা এ বিষয়েও তাদের সন্দেহ রয়েছে। এমনকি অভিযোগ রয়েছে- ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে সিনিয়র নেতারা ক্ষমতার পেছনে ছুটেছেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি যশোরে হামলা শিকার বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িঘর পরিদর্শনে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ড. ওবায়দুল ইসলাম। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা স্থানীয় নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন। তৃণমূল কর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দায়ী করে বলেন, খালেদা জিয়া কবে মুক্তি পাবেন, কী করছেন আপনারা, আন্দোলনে যাচ্ছেন না কেন? না খেয়ে পালিয়ে থাকতে থাকতে তো এমনিতেই মরতে বসেছি। আন্দোলনের ডাক দেন, রাস্তায় গিয়ে মরি। পরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের আবেগ থেকে অনেক কিছুই বলেছেন। এসব কথা মূল্যহীন না। তারপরও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কথাগুলো, ভাবনাগুলো আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতাদের জানাব। গত ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন পরবর্তী দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন জানতে গিয়ে বগুড়ায়ও স্থানীয় নেতাদের তোপের মুখে পড়েন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। অভিযোগ উঠেছে- যারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য প্রাণপণে রাজপথে থাকবেন তাদের মামলা-মোকাদ্দমায় কাবু করেছে সরকার। অন্যদিকে সুবিধাভোগীরা অর্থসম্পদ রক্ষায় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে চলছেন। বাকি নেতারা ভুগছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। তবে দলটির নীতিনির্ধারকদের একাংশ খালেদা জিয়ার মুক্তির কর্মপরিকল্পনা চ‚ড়ান্তকরণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। চলতি মাসের শুরু থেকেই দলীয় চেয়ারপাসনের মুক্তির বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে একাধিক বৈঠক করেছেন সিনিয়র নেতারা। এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা শুরু থেকেই আশা করেছিলাম, আইনি প্রক্রিয়ায়ই খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। কারণ এ মামলার কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু গত ১ বছরেও তা হয়নি। এতদিন তার মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি। এবার কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App