×

জাতীয়

ভোরের কাগজ এগিয়ে চলার প্রত্যয়ে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:১৭ এএম

ভোরের কাগজ এগিয়ে চলার প্রত্যয়ে
মহাকালের হিসাবে ২৭ বছর খুবই কম সময় হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংবাদপত্রের প্রকাশনার ২৭টি বছর পূর্ণ করা চাট্টিখানি কথা নয়। যেখানে আঁতুড়ঘর না পেরোতেই অনেক সংবাদপত্রকে মুখ থুবড়ে পড়তে দেখা যায়; সেখানে আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশনার ২৭ বছর পেরিয়ে আটাশে পা রাখল মুক্তপ্রাণের প্রতিধ্বনি ভোরের কাগজ। ভোরের কাগজ এ দেশের সংবাদপত্র জগতে আধুনিকতার প্রতীক এ কথা সবাই স্বীকার করেন। তবে ভোরের কাগজের সবচেয়ে বড় পরিচয় তার আদর্শগত অবস্থান। ১৯৯২ সালের এ দিনে নাইমুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একদল উদ্যমী সংবাদকর্মী শুধুমাত্র চেতনার প্রত্যয় আর তারুণ্যের দুরন্ত সাহসকে সম্বল করে পাঠকের সামনে নিয়ে আসেন ভোরের কাগজকে। কিছুদিনের মধ্যেই নাইমুল ইসলাম খান দায়িত্ব ছেড়ে দিলে কাণ্ডারি হন মতিউর রহমান। শুরুতেই এদেশের সাংবাদিকতার প্রথাগত কাঠামো ভেঙে আধুনিক ধারার চর্চা শুরু হয় ভোরের কাগজে। পত্রিকাটির মাস্টহেডের ওপরে লেখা থাকত ‘মুক্তচিন্তার দৈনিক’। সত্যিকার অর্থেই মুক্তচিন্তার লেখক ও পাঠকদের ঠিকানা হয়ে উঠল ভোরের কাগজ। এর সংবাদকর্মীরা যেমন সত্য প্রকাশে ছিলেন অবিচল, তেমনি ফিচার পাতাও ছিল নতুনত্ব ও বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর। ফিচার লেখার ঢঙ ও উপস্থাপনা ছিল আকর্ষণীয়। তাই তো দেখা যায়, অতি দ্রুতই ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে ভোরের কাগজ। সে সময় দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ভোরের কাগজ আপসহীন ভূমিকা গ্রহণ করে। গত ২৫ বছরে এই ভূমিকার লক্ষ্য থেকে একচুলও বিচ্যুত হয়নি ভোরের কাগজ। এগিয়ে চলার পথে অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরোতে হয়েছে ভোরের কাগজকে। ১৯৯৮ সালের শেষ দিকে করপোরেট যুদ্ধের শিকার হয়ে সবচেয়ে বড় হোঁচট খায় ভোরের কাগজ। সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে পত্রিকাটির শতাধিক কর্মী একদিনে পদত্যাগ করে চলে গেলে অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন এই বুঝি ভোরের কাগজ যুগের অবসান হলো। কিন্তু না। ফিনিক্স পাখির মতোই ধ্বংসস্ত‚প থেকে জীবনের জয়গান গেয়ে ওঠে ভোরের কাগজ। একদিনের জন্যও এর প্রকাশনা আটকে থাকেনি। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বেনজীর আহমদের নেতৃত্বে নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা আরো উচ্চতায় নিয়ে যান ভোরের কাগজকে। বলাটা কারো কারো কাছে বাহুল্য মনে হতে পারে, আমাদের দেশে এখনো মাত্র ২/৩টি ছাড়া লাভজনক সংবাদপত্র চোখে পড়ে না। পত্রিকা চালান মালিকপক্ষ ভর্তুকি দিয়ে। সে রকম ভোরের কাগজও ছিল মালিকপক্ষের ভর্তুকির ওপর নির্ভরশীল। একপর্যায়ে দারুণ অর্থ সংকটে পড়ে যায় ভোরের কাগজ। আবারো সামনে চলে আসে অস্তিত্বের প্রশ্ন। তবে শেষ রক্ষা হয় প্রকাশক সাবের হোসেন চৌধুরীর নতুন তহবিল সঞ্চারের উদ্যোগে। এবার দায়িত্ব নেন আবেদ খান। মাস্টহেডের ওপরের স্লোগান বদলে লেখা হয় ‘মুক্তপ্রাণের প্রতিধ্বনি’। মনে করা হয়েছিল, স্বর্ণযুগ ফিরে পাবে ভোরের কাগজ। কিন্তু সে স্বপ্নপূরণ হয়নি। হাতটান পিছু ছাড়েনি ভোরের কাগজের। ধুঁকতে ধুঁকতে কাটতি ও কলেবরে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে পত্রিকাটি। চলে যান সম্পাদক আবেদ খানও। এবার হাল ধরেন শ্যামল দত্ত। ভোরের কাগজের রিপোর্টার থেকে চিফ রিপোর্টার, তারপর নির্বাহী সম্পাদক এবং সবশেষে সম্পাদকের দায়িত্ব নেন তিনি। শুরুর দিন থেকেই পত্রিকাটির সঙ্গে যুক্ত শ্যামল দত্ত। ভোরের কাগজের নাড়ি চেনেন তিনি। নিদারুণ অর্থকষ্ট তখন খামছে ধরেছে ভোরের কাগজকে। মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না কর্মীরা। পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছিলেন মালিকপক্ষ। কিন্তু তরুণদের হাতে জন্ম নেয়া ভোরের কাগজকে রক্ষা করল তার তারুণ্যই। অদম্য হয়ে উঠলেন ‘তরুণতম’ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। তার সঙ্গে ভোরের কাগজের কর্মীরা। ‘এটা আমাদের পত্রিকা, আমরা একে বাঁচাবই’ এই ছিল সবার পণ। হলোও তাই। এমনি করেই ২৭টি বছর পেরোলো ভোরের কাগজ। এই বয়সের একজন মানুষকে বলা হয় টগবগে তরুণ। ভোরের কাগজের বয়সও আজ ২৮-এ পড়ল। তারুণ্যই এর প্রাণ। আগেই বলেছি, ভোরের কাগজ এখন ক্ষীণকায়া। কিন্তু তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে ভরপুর। এর প্রাণশক্তি অফুরন্ত। কোনো বাধাই একে থামিয়ে রাখতে পারেনি। তার চেয়েও বড় কথা, সেই শুরুর দিন থেকে যে আদর্শের লড়াইটা কাঁধে তুলে নিয়েছিল ভোরের কাগজ, আজও তা অব্যাহত রেখেছে। এদিক-ওদিক হয়নি একচুলও। কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি না করেও স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে রেখে এগিয়ে চলেছে ভোরের কাগজ। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবিকতা এর মূলমন্ত্র। তাই তো আজও এদেশের অগণিত সংবাদপত্র পাঠকের প্রথম ভালোবাসা ভোরের কাগজ। জয়তু ভোরের কাগজ!

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App