×

বিশেষ সংখ্যা

গণমানুষের লড়াই সংগ্রামে গণমাধ্যম ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হোক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:৫৭ পিএম

গণমানুষের লড়াই সংগ্রামে গণমাধ্যম ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হোক
গণমাধ্যম গণমানুষের মাধ্যম। গণমাধ্যমের উদ্দেশ্য জনমানুষকে তথ্য, শিক্ষা, বিনোদন দেয়া এবং প্রভাবিত করা তথা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনমত তৈরি করা। গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করে। যা কালো এবং ভালো দুটোই চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়, জনগণ বুঝতে পারে, সচেতন হয়। শাসক এবং শোষিতের কণ্ঠকে সমান্তরালে নিয়ে এসে জবাবদিহিতার ক্ষেত্র তৈরি করে। তাই গণমাধ্যমকে আতশী কাচের মতো সমাজের সব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সামনে থাকতে হয়। কোন বিষয়ে প্রতিকারের জন্য সংবাদ হলো, কিন্তু সেখানে আসল সত্য প্রতিভাত হলো না। তবেই এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। গণমাধ্যম যদি কোনো বিষয়ে ফলোআপ না করে বা কোনো অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশে অনাগ্রহী হয়, মূল সত্য কিন্তু চাপা পড়ে যায়। এডভোকেসি করে গণমাধ্যম একটু সংবেদনশীল হয়ে সত্য বিশ্বাসটাকে জনস্রোতে প্রোথিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে। কিন্তু সে কাজটি স্পর্শকাতর। বাচ্চার জন্মের পর তাকে কোলে নেয়ার মতোই কঠিন। আদর করো কিন্তু এমনভাবে যাতে ব্যথা না পায় কারণ সে তখনো পরিণত হয়নি। একটি সংবাদ যখন তৈরি হয়, তার শরীর থাকে অত্যন্ত সংবেদনশীল। এই সেন্স ঠিক রেখে শব্দ প্রয়োগ করাও তাই গণমাধ্যমের কাজ এবং এটা খুব জটিল। কারণ গণমাধ্যম আজ কতটা গণমাধ্যম, সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ। মালিকানার ধরন, সম্পাদকের গড়ন, সাংবাদিকের আচরণ প্রভৃতি বিষয়ে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হওয়ায় গণমাধ্যম নিয়েও শঙ্কা আছে, আশঙ্কাও কম নয়। নীতিহীন সাংবাদিকতায় কখনো কখনো আস্থার সংকটে ভোগে আজকের গণমাধ্যম। উপরন্তু কর্তৃত্ব, সময় এবং বিশেষ চাপ তো থাকেই। সে ক্ষেত্রে সংবাদ বা অন্য যে কোনো বার্তা প্রদানে গণমাধ্যমকে বেশ সজাগ ও সতর্ক থাকতে হয় বৈকি। কিন্তু ইতিহাস বলে যে সভ্যতা এগিয়ে যায়, শুভ বুদ্ধির জয় হয় এটাই নিয়ম। লড়াই টিকে থাকে। সংগ্রাম যোদ্ধাকে আত্মপ্রত্যয়ী করে, আত্মবিশ্বাসী গড়ে। গণমাধ্যমের চরিত্র সেই লড়াইয়ে কতটা টিকে থাকবে, কতটা সত্যাশ্রয়ী ও কৌশলী হবে এসব কিছুর ওপরই নির্ভর করবে গণমাধ্যমের জনসম্পৃক্ততা ও জনগণদৃঢ়তা। গণমানুষের লড়াই সংগ্রামে, জীবন-জীবিকায় গণমাধ্যম সংবেদনশীল ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও ত্রাতার ভ‚মিকাই পালন করবে, প্রত্যাশা। বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে গণমাধ্যমকে প্রধান ৮টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো বই, সংবাদপত্র, সাময়িকী, ধারণ যন্ত্র, রেডিও, সিনেমা, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট। বিংশ শতকের শেষ এবং একবিংশ শতকের শুরুতে গণমাধ্যমের প্রকারভেদ নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, গণমাধ্যমের বিভাজন সুস্পষ্টভাবে আরো বৃদ্ধি পাবে। ইতোমধ্যেই সেলফোন, ভিডিও গেম এবং কম্পিউটার গেমসকে গণমাধ্যম হিসেবে উপস্থাপন করায় বিতর্ক চলছে। আমাদের সংবিধানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ‘যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ’সহ নিশ্চয়তা প্রদান করে। ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার’-এর ২০১৬ সালে সংবাপত্রের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৪তম স্থানে আছে। বর্তমানে মানুষের তথ্য জানার আগ্রহ বেড়েছে। যার কাছে যত তথ্য সে তত ক্ষমতাশালী। সবার আগে তথ্যপ্রাপ্তি, বেশি তথ্য জানা এবং প্রযুক্তিবিষয়ক জ্ঞান বর্তমানে ক্ষমতার নির্ধারক। আর তাই, সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে চলছে মূলধারার মিডিয়ার প্রতি মুহূর্তের প্রতিযোগিতা। রাজনৈতিক বা অতিমুনাফার উদ্দেশ্যে গণমাধ্যম ব্যবহৃত হলে তা সমাজের যথার্থ ওয়াচডগের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবে, হারাবে বিশ্বাসযোগ্যতা। এটি স্বাভাবিক যে, প্রতিটি সম্পাদনাই সংবাদের নির্যাস নষ্ট করে। সেক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সেল্ফ সেন্সরশিপের কারণেও কখনো কখনো সঠিক তথ্যপ্রাপ্তি থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়। তাই বলা হয়, বর্তমানে মিডিয়া জার্নালিজম চেয়ে অ্যাকটিভিজমের কাজ বেশি করছে। উপরন্তু, উদার গণতান্ত্রিকতার চর্চার অনুপস্থিতি মিডিয়াকে প্রকৃতপক্ষে শতভাগ নিরপেক্ষতা দিচ্ছে না। গণতান্ত্রিক ও অসা¤প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নানান ধারার বস্তুনিষ্ঠ স্বাধীন গণমাধ্যমের এই আকাক্সক্ষাকে জিইয়ে রাখার কোনো বিকল্প নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App