×

বিশেষ সংখ্যা

ইংরেজিকে কি বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা করা হবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৬:৫৬ পিএম

ইংরেজিকে কি বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা করা হবে?

বিশ্বব্যবস্থার পুনর্গঠনের সঙ্গে জাতিরাষ্ট্রকেও পুনর্গঠন করতে হবে। উদার গণতন্ত্র বলে পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিবর্গ যে গণতন্ত্রকে বাংলাদেশে চাপিয়ে দিচ্ছে, তা জনগণের গণতন্ত্র নয়, তা উচ্চশ্রেণীর বড়জোর শতকরা পাঁচ ভাগ লোকের হীনস্বার্থ হাসিলের গণতন্ত্র।

বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য আজকাল যে উদগ্রীবতা প্রকাশ করা হয়, তাকে অনেক সময় গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালার মতো ব্যাপার বলে মনে হয়। আমার এই মনে হওয়াটা কি অবান্তর? কার্যক্ষেত্রে, বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া, শিক্ষিত লোকদের প্রায় সবাইকেই দেখা যায় বাংলা ছেড়ে ইংরেজি গ্রহণে তৎপর।

বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা নানা ধারা-উপধারায় বিভক্ত। শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চশিক্ষাপূর্ব পর্যায়ে এতো ধারা-উপধারা পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্রে আছে বলে আমার জানা নেই। নানা ধরনের মাদ্রাসা, নানা ধরনের স্কুল, নানা ধরনের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, আরো কতো কি! এই শিক্ষাব্যবস্থা বাংলা ভাষার এবং বাংলাদেশের জনজীবনের স্বাভাবিক বিকাশের পরিপন্থী। পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) যে ধারায় পাঠ্যপুস্তকের জোগান দেয়, সেটাকে বলা হয় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ধারা বা main stream.

২০০২ সালে সরকার এই মূলধারার বা main stream-এর ভেতরে ইংলিশ ভার্সন বলে একটি নতুন ধারা প্রবর্তন করে। সরকার স্বউদ্যোগেই এটা করে। এর জন্য যে শিক্ষিত সমাজের ভেতর থেকে সরকারের ওপর কোনো চাপ ছিল, তা নয়। হয়তো পেশাদার বিশিষ্ট নাগরিকদের থেকে এ ব্যাপারে সরকারের প্রতি পরামর্শক ছিল। এই ব্যবস্থা ভালো কি মন্দ, তা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো আলোচনা-সমালোচনা হয়নি। সবাই এর নীরব সমর্থক। বৃহত্তর শিক্ষিত সমাজ থেকে এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।

পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কেবল বাংলা মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশ করতো। ইংলিশ ভার্সন প্রবর্তনের পর বোর্ড সব পাঠ্যপুস্তক বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি ইংরেজি অনুবাদেও প্রকাশ করতে থাকে। আদেশ জারি করা হয় যে, কোনো স্কুল ইচ্ছা করলে বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি ইংলিশ ভার্সনও খুলতে পারে। সরকারের আদেশ অনুসরণ করে ঢাকা ও অন্যান্য শহরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইংলিশ ভার্সন ধীরে ধীরে চালু হতে থাকে। প্রথমে এর গতি মন্থর ছিল এখন দ্রুত। তবে তখন থেকে সারা দেশে শুধুই ইংলিশ ভার্সন নিয়ে নতুন নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপিতও হতে থাকে। ইংলিশ ভার্সন প্রবর্তিত হওয়ার পর ইংরেজির প্রতি শিক্ষিত সমাজের আগ্রহ আরো বেড়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতাকেও বেশি করে ইংরেজির অনুকূল করে তোলা হচ্ছে।

২০১০ সালের নতুন শিক্ষানীতি এবং ২০১১ সালের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের ইংলিশ ভার্সন সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ নেই। এখন দেখা যাচ্ছে, অভিভাবকরা শিশু-কিশোরদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য দ্রুতগতিতে ইংলিশ ভার্সনের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছেন। বিষয়টিকে আইনতভাবে ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে; কিন্তু পরিবেশ ইংরেজির অনুকূল হওয়ার ফলে কার্যত বাধ্যতামূলকের মতো রূপ নিচ্ছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সারা দেশে অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইংলিশ ভার্সন চালু করে চলছে।

শুধুই ইংলিশ ভার্সন নিয়ে দেশব্যাপী নতুন নতুন স্কুল আরো বেশি সংখ্যায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ইংরেজির প্রতি একটা প্রবল হুজুগ তৈরি করা হয়েছে। যে ছেলেমেয়েরা ইংলিশ ভার্সনে পড়ে, তাদের অনেকে বাড়িতেও ইংরেজিতেও কথাবার্তা বলে। ‘ইংলিশ-পছন্দ মহল’ থেকে জনমনে ধারণা সৃষ্টি করা হয়েছে যে, ইংরেজি ছাড়া গতি নেই, বাংলার কোনো ভবিষ্যৎ নেই। কথায় কথায় বলা হয়, এটা বিশ্বায়নের কাল। বিশ্বায়নেরকালে কি জাতি রাষ্ট্র ও জাতীয় সরকার এবং জাতীয় সংস্কৃতি ও জাতীয় ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাবে?

বাংলাদেশে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষা ধারা (এ-লেভেল, ও-লেভেল) অব্যাহত আছে। অবস্থার চাপে তারা অল্প কিছু নম্বরের ‘বাংলাদেশ স্টাডিজ’ পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করেছে। তাদের পাঠ্যসূচি যুক্তরাজ্যের বাস্তবতায় তৈরি। সে ধারায় শিক্ষা লাভ ব্যয়বহুল। যুক্তরাজ্যের ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বাংলাদেশে সেট, টোফেল, আইইএলটিএস ইত্যাদি পরীক্ষা নিয়মিত নিচ্ছে এবং বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা ঢাকায় ও আরো কয়েকটি শহরে বিরাট সংখ্যায় সেগুলোতে অংশগ্রহণ করছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সারা দুনিয়ায় ইংরেজির প্রতিপত্তি বাড়ানোর জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে আসছে। সকল জাতিকে ইংরেজি শেখানো দুটি রাষ্ট্রেরই বিশ্ববিস্তৃত ব্যবসাও বটে।

বিশ্বব্যাপী তাদের কর্তৃত্ব অনেকটাই নির্ভর করে বিশ্বব্যাপী ইংরেজি ভাষার প্রতিষ্ঠার ওপর। বাংলার উন্নতির জন্য বাংলাদেশে মৌসুমি হুজুগ ছাড়া আর কি আছে? আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে রক্ষা করি না, বিদেশীদের কাছে বিকিয়ে দিই। একদিকে ইংলিশ ভার্সনের অব্যাহত প্রসার যা নিয়ে একটি কথা পর্যন্ত কেউ বলেছে না, অপরদিকে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট থেকে রাষ্ট্রীয় সব কাজে বাংলা চালু করার দাবি! গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা নয় তো কি? এরই মধ্যে হাইকোর্ট থেকে আবার আদেশ জারি হয়েছে বাংলার শুদ্ধতা রক্ষার জন্য!

ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের সংখ্যার তুলনায় এখনো অনেক কম। তবে এ সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। ইংলিশ ভার্সন যে অনুপাতে বাড়ছে, বাংলা মাধ্যমের প্রতি সেই অনুপাতে যত্ন কমছে। ব্যাপারটা কেবল ভাষাগত নয়, সংস্কৃতিগতও। ‘বাংলা মাধ্যম নিয়ে সংস্কৃতি’ থেকে ‘ইংলিশ ভার্সন নিয়ে সংস্কৃতি’ আলাদা হয়ে যাচ্ছে। বাংলা রাষ্ট্রভাষা হওয়ার ফলে বাংলাদেশে সরকারি কাজে বাংলা ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলার আছে সুদূর অর্থনৈতিক ভিত্তি। সরকারি কাজে ইংরেজি চালু করলে বাংলা এই অর্থনৈতিক ভিত্তি হারাবে। বাংলাদেশকে বাংলা ছেড়ে ইংরেজিতে যেতে হবে কেবল ভাষার বিনিময়ে নয়, রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার বিনিময়ে। বাংলা ছেড়ে ইংরেজিতে চলে যাওয়া কি বাংলাদেশের জনগণের জন্য মঙ্গলকর হবে?

পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এখন ইংলিশ ভার্সনের জন্য বাংলা পাঠ্যপুস্তক ইংরেজিতে অনুবাদ করায়। এদিক দিয়ে ইংলিশ ভার্সন বাংলা মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল আছে। কিন্তু অচিরেই ইংলিশ ভার্সনের জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের স্বতন্ত্র ব্যবস্থা করা হবে। হয়তো পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যক্রমও ভিন্ন হবে। বাংলা মাধ্যমের পরিণতি কি হবে? ইংলিশ ভার্সনেরই-বা ভবিষ্যৎ কি?

মনে হয়, পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিবর্গের অনুগত স্থানীয় কোনো কোনো গোষ্ঠী বাংলাদেশে ইংলিশ ভার্সনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করছে। নতুন শিক্ষানীতি (২০১০) যাদের দিয়ে প্রস্তুত করানো হয়েছে তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন সিভিল সোসাইটির সদস্য। তারা কি ইংলিশ ভার্সনের ঐতিহাসিক ভূমিকা না ভেবে কাজ করেছেন? নতুন শিক্ষানীতিতে (২০১০) কিংবা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনে (২০১১) এ সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি কেন? ইউনিসেফ বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে- প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তক বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। এটা কি তাদের নিঃস্বার্থ খয়রাত? বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেয়ার সুবাদে তারা দৃশ্যের অন্তরালে থেকে পাঠ্যসূচি ও পাঠক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। কার স্বার্থে করে? মনে হয় বাংলা মাধ্যম ক্রমেই অবহেলিত হয়ে চলছে এবং ইংলিশ ভার্সন বিশেষ যত্ন পাচ্ছে। যারা ইংলিশ ভার্সনে পড়বে, তারাই ভবিষ্যতে রাজনীতি, প্রশাসন, রাষ্ট্রীয় সব ব্যবস্থা ও আন্তঃরাষ্ট্রিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করবে। বাংলা মাধমের ভেতর থেকে যারা বের হবে, রাষ্ট্র পরিচালনা ও সরকারে তাদের কর্মক্ষেত্রে একদিন আর অবিশিষ্টি থাকবে না। রাষ্ট্র ভাষার স্থান ইংরেজি দখল করে নেবে।

১৯৭২ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা মাধ্যম প্রবর্তিত হয়েছিল এবং তা চলছিল। বাংলা ভাষাকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করারও আগ্রহ ও আয়োজন দেখা দিয়েছিল। উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ও অনুবাদের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছিল। ক্রমে বাংলা ভাষার উন্নয়নের সেসব কার্যক্রম ক্রমে কমিয়ে ফেলা হয়েছে। আগ্রহ এখন ইংরেজির দিকে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এখন অত্যন্ত দ্রুত ইংরেজি মাধ্যমে চলে যাচ্ছে। তারা জাতীয় স্বার্থ কিংবা জনস্বার্থের কথা চাইবেন না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শুরু থেকেই চলছে কেবল ইংরেজি মাধ্যম। অবস্থার চাপে সেগুলোতে লোক দেখানো অতি সামান্য ‘বাংলাদেশ স্টাডিজ’ চালু করা হয়েছে। তাও পড়তে হয় ইংরেজিতে।

আটাত্তরটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র দুটিতে বাংলা বিভাগ আছে, সেগুলোতে পড়ানো হয় বাংলা সাহিত্য। জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোনো বিষয়েই বাংলা মাধ্যম নেই। চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা, কৃষিবিদ্যা, আইন ইত্যাদিতে বাংলা মাধ্যমের উদ্যোগ দেখা দিয়েছিল; কিন্তু সে প্রবণতা এখন বন্ধ। বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য যে বিপুল আগ্রহ দেখা দিয়েছিল, ১৯৭০-এর দশক শেষ হতে না হতেই তা শেষ হয়ে গেলো! এটা কি মূলত সরকারি নীতির কারণে ঘটেছে? শাসক দলসমূহের বুদ্ধিজীবীদের ও সিভিল সোসাইটিসমূহের পেশাদার বিশিষ্ট নাগরিকদের ভূমিকা কি? পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিবর্গ দুর্বল জাতিসমূহের মাতৃভাষা রক্ষায় তৎপর, তাদের জাতীয় ভাষা কিংবা রাষ্ট্রভাষাকে তারা জাতীয় কিংবা রাষ্ট্রীয় অবস্থানে রাখতে চায় না।

বাংলাদেশে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ কি? পশ্চিমবঙ্গে, আগরতলা এবং ভারতের আরো কিছু বাংলাভাষী এলাকায় বাংলার ভবিষ্যৎ কি? মাতৃভাষা রূপে বাংলা অবশ্যই থাকবে। কিন্তু রাষ্ট্রভাষা রূপে বাংলাদেশে বাংলা থাকবে না। বাংলা ভাষায় বর্তমানে প্রায় ত্রিশ কোটি মানুষ কথা বলে। উড়িয়া ও অসমিয়া ভাষা বাংলা ভাষার খুব কাছাকাছি। রাজনৈতিক আধিপত্য ও অর্থনৈতিক শোষণ দূর করা হলে ওইসব ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার সমন্বয় ঘটবে। বাংলাদেশে বাংলাভাষী ষোল কোটি মানুষ আছে। ভাষিক জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীতে বাংলার স্থান চতুর্থ, মতান্তরে পঞ্চম।

মূল ধারার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে বাংলা মাধ্যম ও ইংলিশ ভার্সনে বিভক্ত করার ফলে আমাদের জাতির ভেতরকার বিভক্তি অদূর ভবিষ্যতে পুনর্গঠিত হবে। কিভাবে হবে?

বাংলাদেশের রাজনীতি সুস্থ, স্বাভাবিক নয়। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রের অভিধা লাভ করেছে। এ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রধান তিনটি ধারা দেখা যাচ্ছে: এক. ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ধারা, যা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি বলে আত্মপরিচয় দেয়। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ প্রভৃতি দল এখন এই ধারায় আছে। দুই. জাতীয়তাবাদী ইসলামপন্থী বলে অভিহিত ধারা। বিএনপি, জামাতে ইসলামী, তবলিগ জামাত ও হেফাজতে ইসলাম ইত্যাদি এই ধারায় আছে। তিন. এনজিও ও সিভিল সোসাইটিসমূহের ধারা। ইংলিশ ভার্সনের বিকাশ ঘটলে এবং রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি হবে এনজিও ও সিভিল সোসাইটিসমূহের ধারা শক্তিশালী হবে এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ধারা দুর্বল হবে। তাতে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিতে প্রধান ধারা দাঁড়াবে দুটি : এক. জাতীয়তাবাদী ইসলামপন্থী ধারা, দুই. এনজিও ও সিভিল সোসাইটিসমূহের ধারা।

ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ধারা তাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন করে এনজিও ও সিভিল সোসাইটি ধারার সঙ্গে মিলে যেতে পারে। জাতীয়তাবাদী ইসলামপন্থী ধারার কথিত জাতীয়তাবাদে মূলত আছে ভারতবিদ্বেষ ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রীতি। কোনো সদর্থক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা এ ধারায় নেই। এই ধারা কি বাংলাদেশে জাতিগঠন ও রাষ্ট্রগঠনে সক্ষম হবে? সে চেষ্টাও তো তাদের নেই। এনজিও সিভিল সোসাইটি ধারা তো বিশ্বায়নবাদী। তারা তো জাতীয়তাবাদ ও জাতিরাষ্ট্রের উপযোগিতাই স্বীকার করে না। রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিশ্বব্যবস্থা সম্পর্কে তারা তাদের ধারণা যথেষ্ট স্পষ্টও করে না। তাদের হাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব রক্ষা পাবে? তাদের নেতৃত্বে জনজীবনই বা কোন ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত হবে? ইনসাফ বা জাস্টিস বা ন্যায় কি পর্যায়ক্রমে বাড়বে? আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে গেলে দুইয়ে মিলে তাদের চরিত্র কি হবে?

জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিকবাদ, বিশ্বায়ন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা দরকার। পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিবর্গের অন্ধ অনুসরণ ও অনুকরণ দ্বারা কোনো জাতিই উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অধিকারী হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা সাম্রাজ্যবাদেরই নতুন নাম দিয়েছে বিশ্বায়ন। সে ধারার অন্ধ অনুসারী হয়ে চলছে বাংলাদেশ। তারই ফলে আন্তর্জাতিক প্রচার-প্রচারণার হুজুগের মধ্যে বাংলাদেশে কিছু লোকের মনে ইংলিশ ভার্সনের ধারণা জেগেছে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে তা কার্যকর করে ফেলা হয়েছে। এর পরিণতি ভালো হবে না, ভালো হতে পারে না।

দুনিয়াটা কিভাবে চলছে, কিভাবে চলা উচিত এবং সামনে বিভিন্ন শক্তির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কিভাবে চলবে, তা গভীরভাবে বিচার-বিবেচনা করে দেখা দরকার। এ বিষয়ে বাংলাদেশে ইংরেজিতে লেখা যেসব বইপত্র ও লেখালেখির সন্ধান আমরা পাই, সেগুলো সবই প্রচলিত বিশ্বায়নের অন্ধ সমর্থক। বিষয়টি নিয়ে ভাবতে ভাবতে এবং বিচার-বিবেচনা করতে করতে কিছু ধারণা আমার মনে দানা বেঁধেছে। আমি জাতীয়তাবাদী আন্তর্জাতিকতাবাদ বিশ্বায়ন ও ভবিষ্যৎ নামে একটি ছোট বই লিখেছি এবং সেটি এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এখানে সেসব কথার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না।

একটি প্রগতিশীল, শান্তিপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য জাতীয়তাবাদ ও তার সম্পূরক আন্তর্জাতিকতাবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিশ্বব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করতে হবে। তাতে জাতীয় সংস্কৃতি, জাতীয় সরকার ও জাতিরাষ্ট্র থাকবে। তার ওপর প্রতিষ্ঠা করতে হবে আন্তজাতিক ফেডারেল বিশ্বরাষ্ট্র ও বিশ্বসরকার। জাতিরাষ্ট্রের ও জাতীয় সরকারের কিছু ক্ষমতা চলে যাবে বিশ্বরাষ্ট্রের ও বিশ্বসরকারের কাছে।

কেবল বিশ্বসরকারের কাছে একটি সেনাবাহিনী রেখে সব রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করতে হবে। বিশ্বসরকারের কাজ হবে জাতিরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা, তাদের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসা করা এবং যুদ্ধের সম্ভাবনা তিরোহিত করা। আন্তঃরাষ্ট্রিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে মানবজাতির ঐক্য ও বিশ্বভ্রাতৃত্বকে বিকশিত করতে হবে। রাষ্ট্র বিলুপ্ত করা যাবে কিভাবে? আমাদের প্রস্তাবিত প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো জাতির রাষ্ট্রভাষাই স্থানচ্যুত হবে না। জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত জাতিসমূহের ভাষা থেকে অনুন্নত জাতিসমূহের ভাষায় প্রয়োজনীয় নানা বিষয় গ্রহণ করে সব ভাষাই উন্নতির ধারায় থাকতে পারবে। আন্তঃরাষ্ট্রিক সম্পর্কের প্রয়োজনে প্রত্যেক রাষ্ট্রেই বিদেশী ভাষা শেখার ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেসব জাতি রাষ্ট্রব্যবস্থা, বিশ্বব্যবস্থা, রাষ্ট্রভাষা ও জাতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে নিজেদের উন্নতির উপায় করবে না, সেব জাতি ধীরে ধীরে মানবজাতির মূল ধারা থেকে খসে পড়বে। তারা উপজাতি, অপজাতি ইত্যাদিতে পরিণত হবে।

বিশ্বব্যবস্থার পুনর্গঠনের সঙ্গে জাতিরাষ্ট্রকেও পুনর্গঠন করতে হবে। উদার গণতন্ত্র বলে পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিবর্গ যে গণতন্ত্রকে বাংলাদেশে চাপিয়ে দিচ্ছে, তা জনগণের গণতন্ত্র নয়, তা উচ্চশ্রেণীর বড়জোর শতকরা পাঁচ ভাগ লোকের হীনস্বার্থ হাসিলের গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্রে কেবল নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করা হয় এবং নির্বাচিত সরকার স্বৈরাচারী হয়ে জনগণের উপর জুলুম-জবরদস্তি, নির্যাতন-নিপীড়ন ও শোষণ চালায়। যে গণতন্ত্র আমরা চাই তা জনগণের গণতন্ত্র- সমাজের নিচের স্তরের শতকরা পঁচানব্বই শতাংশসহ শতভাগ মানুষের গণতন্ত্র। কথিত উদার গণতন্ত্র পরিত্যাগ করে জনগণের গণতন্ত্র কায়েম করে রাষ্ট্রব্যবস্থার আমূল পুনর্গঠন করতে হবে। জাতিরাষ্ট্রের পুনর্গঠন ও বিশ্বব্যবস্থার পুনর্গঠনের জন্য গড়ে তুলতে হবে আন্তর্জাতিক আন্দোলন।

আমার ধারণা, ইংলিশ ভার্সন যেভাবে প্রবর্তন করা হয়েছে তাতে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। এই ধারা বিকাশের ফলে বাংলা ভাষা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম থেকে অপসৃত হবে। এর ফল বাংলাদেশের বাঙালি জাতির জন্য কল্যাণকর হবে না। রাষ্ট্রব্যবস্থায় বাংলা ভাষা বাদ দিয়ে ইংরেজি ভাষা ও তার আনুষঙ্গিক সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে থাকতে পারবে না। পরাধীনতার মধ্যে জনজীবনে দুর্দশা বাড়বে, বৈষয়িক প্রাচুর্যের মধ্যে মানবতা লুণ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের অপরিহার্য শর্ত। নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রের জায়গায় অন্যদের ভাষা, সংস্কৃতি ও কর্তৃত্ব নিয়ে আমরা লাভবান হবো? আমাদের লক্ষ্য করা দরকার যে, কেবল জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত আর জাতিসংঘের সদস্যপদ থাকলেই এখন রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা থাকে না। এসব আফগানিস্তানের, ইরাকের, লিবিয়ারও আছে।

দেখা যাচ্ছে, মধ্যবিত্তদের ছেলেমেয়েদের জন্য ইংলিশ ভার্সন দ্রুত বিকশিত হয়ে চলছে। বাংলা মাধ্যম যেটুকু অবশিষ্ট থাকবে, তা যে ক্রমে সংখ্যায়, শক্তিতে, গুণে ও মানে দুর্বল হয়ে পড়বে, তাতে কি কোনো সন্দেহ আছে? বাংলা মাধ্যমের এভাবে দুর্বল হয়ে পড়া কি বাঞ্ছনীয়? যদি তা বাঞ্ছনীয না হয়, তাহলে বাংলা মাধ্যমের ভেতরে ইংলিশ ভার্সন চালু করা হলো কেন?

বাংলা মাধ্যম যদি অবাঞ্ছনীয় হয়, তাহলে স্বচ্ছ বক্তব্য দিয়ে তা জনসাধারণকে বোঝানো উচিত এবং বাংলা বাদ দিয়ে ইংরেজির আয়োজন আরো বড় করে করা উচিত। জনগণ যদি চোখ বুজে থাকে, নিজেদের ভালো নিজেরা বুঝতে না চায়, তা হলে কে বা কারা তাদের অবস্থা ভালো করে দেবে?

ইংলিশ ভার্সনে না গিয়ে বাংলা মাধ্যমের ভেতরে ইংরেজিকে যথোচিত স্থান দেয়ার সুযোগ আছে। বিচার-বিবেচনা করে তা করা যেতে পারে। ভাষাশিক্ষায় গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য বাংলা ও ইংরেজি দুটোই পরীক্ষার নম্বর একশ করে বাড়ানো যেতে পারে এবং পাঠ্যসূচি থেকে অপ্রয়োজনীয় কিছু বিষয় বাদ দেয়া যেতে পারে। কেবল শিক্ষার মাধ্যমই নয়, সর্বজনীন কল্যাণে শিক্ষার বিষয়ও- পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যক্রমও আমূল পরিবর্তনের দাবি রাখে। শিক্ষাপদ্ধতি ও পরীক্ষাপদ্ধতিও বদলাতে হবে।

পাশ্চাত্য সভ্যতার একদিকে আছে তার প্রগতিশীল ধারা। তাতে আছে জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইতিহাস, সাহিত্য ও শিল্পকলা। এ ধারা মহান। অপরদিকে আছে তার অপক্রিয়াশীল ধারা। তাতে আছে উপনিবেশবাদ, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ। এ ধারা মানবতাবিােধী, কুৎসিত, কদর্য। প্রগতিশীল মহান ধারাকে আমাদের গ্রহণ করতে হবে এবং কুৎসিত কদর্য ধারাকে পরিহার করতে হবে। এর জন্য আমাদের ইংরেজি ও আরো কোনো ভাষা ভালো করে শিখতে হবে। আন্তর্জাতিক ও আন্তঃরাষ্ট্রিক বিভিন্ন রকম সম্পর্কের প্রয়োজনেও বিদেশী ভাষা শিখতে হবে। এই শেখার উপায় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও বিচার-বিবেচনা দরকার। ইংলিশ ভার্সন নিয়ে সুফল হবে না। এটা পরিত্যাজ্য।

যারা পশ্চিমা উপনিবেশবাদী, ফ্যাসিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী নীতির অন্ধ অনুগামী, ইংলিশ ভার্সন তাদেরই উর্বর মস্তিষ্কের জাতক। যারা দুর্গত বাংলাদেশকে চিরকালের জন্য পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিবর্গের গোলাম করে রাখার উদ্দেশ্যে নানা কৌশলে যুক্তির পর যুক্তির জাল বিস্তার করে চলছে, তাদের ভূমিকা নিন্দনীয়- তাদের চিন্তা বর্জনীয়।

এখন বাংলাকে তুচ্ছ মনে হলেও ইংলিশ ভার্সনের অভিজ্ঞতা অবশ্যই একদিন আমাদেরকে বাংলার গুরুত্ব বুঝতে বাধ্য করবে। তখন আমাদের বাংলায় ফিরে আসতে হবে এবং ইংরেজিকে, অনুচিত গুরুত্ব বাদ দিয়ে, যথোচিত গুরুত্বে গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। যে শিক্ষাব্যবস্থা চলছে তা নিয়ে আমরা উন্নতি করতে পারবো না। চলতি উত্তেজনা ও উপস্থিত অস্থিরতা থেকে মুক্ত হয়ে উন্নত ভবিষ্যৎ সৃষ্টির জন্য প্রগতিশীল নতুন শিক্ষাব্যবস্থার কথা পরিপূর্ণ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের ভাবা দরকার। বাংলা উন্নত ভাষা। এ ভাষা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চার উপযোগী।

ব্রিটিশ আমলে ইংরেজির চর্চা এ দেশে অনেক হয়েছে। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চায় ও সাহিত্যসৃষ্টিতে বাঙালি তার প্রতিভার পরিচয় বাংলা ভাষার মাধ্যমেই দিয়েছে। বাংলা ভাষার উন্নতির সম্ভাবনা অন্তহীন। বাংলাদেশে ভাষার সেই সঙ্গে সাঁওতাল গারো চাকমা রাখাইন প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর ভাষাসমূহের এবং ইংরেজি ফরাসি জার্মান আরবি উর্দু ফার্সি সংস্কৃত পালি হিন্দি রুশ চিনা জাপানি প্রভৃতি ভাষার ব্যবহার কিভাবে কোথায় কতোখানি করতে হবে এবং এসব ভাষা শেখার ও প্রয়োজনের ক্ষেত্রে অনুবাদের কি ব্যবস্থা বাংলাদেশে করা সমীচীন, সে সম্পর্কে যুগোপযোগী জাতীয় ভাষানীতি আজ অপরিহার্য। জাতীয় ভাষানীতি প্রণয়নের বেলায় ভাষা শিক্ষার চেয়েও অনেক বড় বিবেচ্য হবে শিক্ষার ও জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জনের মাধ্যম হিসেবে ভাষা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ভাষা।

জাতীয় ভাষানীতিতে মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় নিরানব্বই ভাগ মানুষের ভাষা বাংলাকে যথোচিত গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বাংলাদেশের পঁয়তাল্লিশটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর পঁয়তাল্লিশটি ভাষাকেও যথোচিত গুরুত্ব দিতে হবে। ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীসমূহের সার্বিক উন্নতির জন্য জাতির (হধঃরড়হ) মূল ধারার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিবিড়তর হওয়াই কি সবার জন্য মঙ্গলকর নয়? বিদেশী ভাষাসমূহের মধ্যে ইংরেজি অবশ্যই বেশি গুরুত্ব পাবে। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা রূপে রক্ষা করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় ইংরেজি শেখাকে যথোচিত গুরুত্ব দিতে হবে। ইংলিশ ভার্সন বর্জন করে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করতে হবে।

আমি আশা করতে চাই, বাংলাদেশের বিবেকবান চিন্তাশীল ব্যক্তিরা বিষয়টি নিয়ে পরিপূর্ণ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং সেসব আলোচনা জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য যথোচিত সিদ্ধান্তে পৌঁছার উপযোগী হবে। জনজীবনে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ও সংশয় আছে। আমি আশা করতে চাই যে, এই ভূভাগের শিক্ষিত সমাজ এক সময়ে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য যেভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল, বাংলাদেশের আজকের শিক্ষিত সমাজ বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা রূপে রক্ষা করার ও সমৃদ্ধিমান করার জন্য, তেমনিভাবে সক্রিয় হয়ে উঠবে।

বাংলা ভাষা নিয়ে বাংলাদেশের নিরানব্বই শতাংশ মানুষের আজকের যে সমস্যা, তা বাংলা ভাষা নিয়ে এই ভূভাগের সেদিনের নিরানব্বই শতাংশ মানুষের সমস্যার চেয়ে একটুও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। জনগণের জন্য সেদিনের এক শতাংশ লোকের ভূমিকার তুলনায় আজকের এক শতাংশ লোকের ভূমিকা কম ক্ষতিকর নয়। সেদিনের সংগ্রামের অভিজ্ঞতা আমাদের সাহসী, দূরদর্শী ও সংগ্রামী হতে বলে। সাধনা ও সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App