×

জাতীয়

রাঘব বোয়ালে নজর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৩২ এএম

রাঘব বোয়ালে নজর
রাঘব বোয়ালে নজর
রাঘব-বোয়ালদের এড়িয়ে চুনোপুঁটি ধরায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আগ্রহ বেশি এ নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগের আঙুল উঠেছে স্বাধীন সংস্থাটির দিকে। কয়েকদিন আগে স্বয়ং উচ্চ আদালতও দুদকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বড় রাঘব-বোয়ালদের ছেড়ে দিয়ে চুনোপুঁটিদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুদক। উচ্চ আদালতের এ ধরনের মন্তব্যে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতনরা। কাজের মাধ্যমেই এই অভিযোগের জবাব দিতে চান তারা। তাই রাষ্ট্রের বড়-ছোট দুর্নীতিবাজদের দমন ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে নেয়া হয়েছে নতুন পরিকল্পনা। জানা যায়, গত ৭ ফেব্রæয়ারি স্কুল শিক্ষকদের কোচিং নিয়ে সরকারের করা নীতিমালা বিষয়ে রিটের শুনানিতে একপর্যায়ে হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যকলাপে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে; আর শিক্ষকদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুদক। আদালত বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রাঘব-বোয়ালদের ধরে এনে ছেড়ে দেয় দুদক। আর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলে যাচ্ছে কী যাচ্ছে না তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা। দুদক দুর্নীতিবাজ রাঘব-বোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না উল্লেখ করে আদালত আরো বলেন, ছোট দুর্নীতির আগে বড় বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুদক নিয়ে উচ্চ আদালতের এ ধরনের মন্তব্যে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতনরা। তারা এবার বড় ধরনের দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। একই সঙ্গে নতুন সরকারের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রকৃত বাস্তবায়ন করতে চায় সংস্থাটি। এরই মধ্যে লক্ষ্য পূরণে সংস্থাটির গোয়েন্দা ইউনিটের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ কাজ অনেকটা গুছিয়ে আনা হয়েছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের তালিকা সংগ্রহ, জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের নির্বাচনী হলফনামা সংগ্রহ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ, মন্ত্রণালয় ও সেক্টরভিত্তিক দুর্নীতির ফিরিস্তি জোগাড় ও করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। এবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পালা। আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান অগ্রগতি বিষয়ে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। কারণ, বর্তমান সরকারের ম্যান্ডেট ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের জন্য যা যা করা দরকার আমরা করব। নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, স্বাস্থ্য-শিক্ষা বাণিজ্যসহ সমস্ত জায়গায় যেসব দুর্নীতি-অনিয়ম রয়েছে তা দমন ও প্রতিরোধের চেষ্টা করব। আমরা কোনো বাধাই মানব না। ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিতি যেখানে আছে, দুর্নীতির গন্ধ যেখানে আছে, আমরা সেখানে থাকব। সাবেক মন্ত্রী বা বর্তমান বলে কথা নেই, আমরা সবাইকে একই পাল্লায় মাপতে চাই। অভিযোগ যদি থেকে থাকে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করব। কথা এইটুকুই বলতে পারি, আপনারা এক-দুই মাসের মধ্যে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পাবেন। তবে কতগুলো বিষয়ে আমাদের প্রধান ফোকাস থাকবে। আর্থিক দুর্নীতি এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমরা আমাদের পরিপূর্ণ শক্তি দিয়ে আর্থিক দুর্নীতি বন্ধ করার চেষ্টা করব। দুদক সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে এখন পর্যন্ত দুদকে বিভিন্ন প্রার্থীর বিরুদ্ধে কয়েক হাজার অভিযোগ এসেছে। দুদক কৌশলগত কারণে ওই অভিযোগ নিয়ে কাজ করেনি। তবে অভিযোগগুলো যাচাইবাছাই করে এর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। অর্থাৎ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করা। এক্ষেত্রে অনেক কাজই গুছিয়ে আনা হয়েছে। বেশ কয়েকটি তালিকা প্রস্তুত রয়েছে। এবার তালিকা অনুসারে বাস্তবায়নের পালা। সবচেয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে আর্থিক খাতের দুর্নীতি। বিগত সময়ে এই খাতের ভয়াবহ দুর্নাম হয়েছে। সরকারও চাইছে, এই খাতে শুদ্ধি অভিযান চালানো হোক। এরপরই রয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। এভাবে পর্যায়ক্রমে সকল সেক্টরের দুর্নীতি নিয়ে দুদক দৃশ্যমান কাজ করবে। অন্যদিকে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার ছিল। যার অন্যতম প্রধান ঘোষণা ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ। যেখানে বলা হয়, দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের প্রয়োগ মুখ্য হলেও তা শুধু সরকারের দায় নয়, জনগণেরও দায় রয়েছে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি দমনে প্রয়োজন সরকার ও জনগণের সমন্বিত পদক্ষেপ। দুর্নীতি দমন কমিশনকে কর্মপরিবেশ ও দক্ষতার দিক থেকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করা হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ ও তদারকি আরো জোরদার করবে। এমনকি নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রায় প্রত্যেক সদস্য তাদের প্রথম কর্মদিবসে দুর্নীতি নির্মূলের বিষয়ে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, দুদক এবার সরকারি বা বিরোধী দল বিবেচনা না করে দুর্নীতিবাজ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব?্যবস্থা নেবে। ইতোমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেয়া প্রার্থীদের হলফনামা সংগ্রহ করে তা যাচাইবাছাই করে কয়েকজন প্রভাবশালীর ব?্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রাথমিক যাচাইবাছাইয়ে অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত অর্থ বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদক চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে যেসব ইঙ্গিত দিয়েছেন তার দৃশ্যমান বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এবার আর সরকারি দল সংশ্লিষ্টদেরও মুক্তি মিলবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App