×

মুক্তচিন্তা

কী খেয়ে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৩৮ পিএম

উৎসে হাত দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে এসব ব্যবসা। প্রয়োজনে মৃত্যুদণ্ডকে যুক্ত করতে হবে শাস্তির তালিকায় কারণ তারা প্রতিনিয়ত হত্যা করে চলেছে আমার মতো কোটি মানুষের জীবনকে। ধ্বংস করে দিচ্ছে একটি জাতির আগামী প্রজন্মকে। মানসিকভাবে বিকলাঙ্গতা থেকে শুরু করে নানা ভয়ঙ্কর রোগের চাষ করে যাচ্ছে যাকে আমি কোনোক্রমেই গণহত্যার বাইরে রাখতে পারছি না।

সত্যি জানি না প্রতিদিন বেঁচে থাকার আশায় যা খাচ্ছি সেগুলো কি আসলেই আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে না তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। সকাল থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের ছুটিয়ে চলেছি কেবল তিনবেলা খাবারের নিশ্চয়তার আশায়। শরীরের সব শক্তি ক্ষয় করে চলেছি দিনরাত এক করে কেবল সুস্থ ও সুখী একটি জীবনের আশায়।

কিন্তু হায়!! এ কোন জীবন পাচ্ছি আমরা। পরোটা নরম করার জন্য মিশানো হচ্ছে রাসায়নিক দ্রব্য। এতদিন কেবল দেখে এসেছি ফলের মাঝে মিশানো হচ্ছে ফরমালিন ও নানারকম কেমিক্যাল দ্রব্য। ফল এখন খাবার তালিকা থেকে বাদ বললেই চলে। নিজে তো খাই না বাচ্চাদেরও এখন আর ফল খাওয়ানো যাচ্ছে না। অসুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে সুস্থ দেহে মরে যাওয়াই যেন কাম্য।

এই নগর জীবনে মানুষের বিনোদন নেই বললেই চলে। ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া নাগরিকরা দুদণ্ড নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য কেবল ছুটে চলেছে নতুন কিছুর পেছনে। এ কথা অস্বীকারের কিছু নেই যে, আমাদের দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বেড়েছে ক্রয়ক্ষমতাও।

আর এর ফলে বেড়েছে জীবনযাত্রার মান। মানুষ এখন একটু ভালো খাওয়া ও ভালো থাকার জন্য বেশি খরচেও আপত্তি করে না। যেমন আয় বেড়েছে তেমন খরচের মাত্রাও বাড়ছে।

এ ছাড়া দুদিন ছুটি পেলেও যে মানুষ এখন আর ঘরে বসে থাকে না, বেরিয়ে পড়ে প্রাণের খোঁজে দেশে বা বিদেশের সীমানায় সে মানুষের দেখার চোখ এখন আর আগের মতো সীমাবদ্ধ নেই। প্রতিটা মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। সেই সচেতনতা কেবল একদিকেই নয় এসেছে সবদিকেই।

সেই মানুষকে বোকা বানিয়ে দিনের পর দিন কিছু অসাধু মানুষ ব্যবসা করে যাচ্ছে সামান্য লাভের আশায়। ঘরের খাবার ভালো লাগছে না চলো বাইরে কোথাও খেয়ে আসি। পরিবার পরিজন বা বন্ধুসঙ্গ লাভের আশায় মানুষ এখন ছুটে চলে যায় রেস্টুরেন্ট বা খাবার দোকানে। সে কী রাস্তার পাশে বা পশ রেস্তোরাঁয়।

কী কপাল আমাদের। আমাদের এই ভালো লাগাটুকুকে পুঁজি করে নিয়েছে মৃত্যুদূত হয়ে ঘুরেফিরে বেড়ানো মানুষরূপী যমেরা। এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বেরিয়ে এসেছে নানামুখী ঝুঁকির খবর। প্রায় প্রতিদিনই চলত কোনো না কোনো রেস্তোরাঁ বা খাবারের দোকানে বা বাজারে এ অভিযান। বেরিয়ে আসত ভয়ঙ্কর সব খবর।

আমরা নাগরিকরা সেসব দেখতাম আর নিজেকে নিয়ে শঙ্কায় কুঁকড়ে যেতাম। কিছুদিন হয়তো এড়িয়ে চলতাম বাইরে খাওয়া বা বড়জোড় যে দোকানগুলোকে বিপজ্জনক বলে ঘোষণা দেয়া হতো সেগুলোকে বাতিলের খাতায় তুলে দিতাম। আবার শুরু। আবার দলবেঁধে বাইরে খেতে যাওয়া।

কী বা করার আছে আমাদের এই অসহায় মানুষদের। জীবনের তাগিদে বাইরে খেতে যেতে হয়। মনের তাগিদে ছুটে চলতে হয়। দিনে দিনে অশনি সংকেত যেন বেড়েই চলেছে। যেসব রেস্তোরাঁয় খেতে যাই সেসবের যে কাহিনী বের হচ্ছে দেখে আতঙ্কিত হয় মন কিন্তু সমাধান যেন খুঁজে পাই না।

ধরা পড়ছে, জরিমানা হচ্ছে, জেলও হচ্ছে কিন্তু সমাধান আসছে কই? দিনের পর দিন এই বিষের ব্যবসা করছে যারা তারা প্রত্যেকেই কি মানুষ হত্যার বিনিময়ে মুনাফা করছে না? তাহলে কেন এই হত্যার বিচার মৃত্যুদণ্ড হবে না?

এই ঢাকা শহরে এমনিতেই মানুষের বেড়াতে যাওয়ার জায়গার অভাব। তাইতো মানুষ কেবল নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বের করে কোথায় গিয়ে একটু নিঃশ্বাস নিতে পারবে। ৩০০ ফুট বর্তমানে এই নগর জীবনে দারুণ এক বেড়ানোর জায়গা হিসেবে পরিচিত। যেহেতু প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী যায় সেই সুযোগে গড়ে উঠেছে শত শত খাবারের দোকান ও বাজার।

এই তো সে দিন আমিও আমার বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে এলাম। খেয়ে এলাম মজাদার মাছের কাবাব। কিন্তু কে জানতো যে মজাদার আর লোভনীয় সেই কাবাবের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে আমার মরণের টিকা। সারি সারি মিষ্টির দোকানে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে প্রতিদিন।

বাসি পচা খাবারের দোকানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাজা ও গরম মিষ্টি খাবারের আশায় মিষ্টিপ্রেমীরা ছুটে যায়। আর সেই মিষ্টিতে মিশানো থাকে রাসায়নিক দ্রব্য। থাকে না দুধের কোনো ছোঁয়া। পচা আর বাসি মাছ দিয়ে তৈরি করা হয় মজাদার কোরালের বারবিকিউ অথচ সেখানে লেখা থাকে লাইভ বারবিকিউ।

আমার সন্তানদের ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছে যেহেতু বাড়ন্ত বয়স তাই তাদের ঘিয়ে তৈরি করা খাবার দিতে, তেল ও ঘি আছে এমন খাবার খাওয়াতে তাহলে শরীরের ঘাটতি পূরণ হবে। কী দুর্ভাগ্য আমাদের। পত্রিকায় সংবাদ এসেছে ঘি তৈরি হচ্ছে ক্ষতিকর রং, তেল, সুজি আর সার জাতীয় এক ধরনের পদার্থের মিশ্রণে। এই বিষাক্ত ঘি আবার বাজারে বিক্রি হচ্ছে বিখ্যাত বাঘাবাড়ির ঘিসহ আরো অনেক বাহারি নামে।

ফলে বিষ তাই ফল খাওয়া বাদ। বাইরের খাবারেও বিষ, ঘি কিনে বাসায় মজার খাবার তৈরি করব সেখানেও বিষের ছোবল। তাহলে কথা হচ্ছে আমরা এই মানুষগুলো কোথায় যাব? বাইরে না হয় খেতে না গেলাম কিন্তু ঘরে খাবার তৈরির সব উপাদানেও যদি আমরা বিশ্বাস রাখতে না পারি তবে কি না খেয়েই থাকতে হবে? অন্তত জেনেশুনে তো এসব বিষ খাওয়া যায় না আবার বেঁচে থাকার জন্য খেতেও হবে।

এসব বিষের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিচ্ছে কিডনির সমস্যা, হার্টের সমস্যা, লিভারের সমস্যাসহ নানা জটিল সমস্যা যেগুলোর চিকিৎসা করাতে গেলেও আছে নানা ঝক্কি কারণ হাসপাতালগুলোতেও চলছে এলাহী কাণ্ড। নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, অপরিষ্কার স্থানে পরীক্ষা চলে। ডাক্তারদের অবহেলা, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে আছে নানামুখী স্বাস্থ্যঝুঁকি। এ যেন চারদিক থেকে জেঁকে বসা এক মৃত্যুপুরীতে বসে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা।

এই যে দিনের পর দিন এসব করে বেড়াচ্ছে একদল অসাধু লোক তাদের বিরুদ্ধে কোনা ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে যে কেউ ভয় তো পাচ্ছেই না বরং বেড়েই চলেছে এই অপরাধের মাত্রা। কার কাছে বিচার চাইব আমরা? দেশে রয়েছে নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান। আছে ভোক্তা অধিকার আইনসহ নানা প্রকারের আইন। রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা হয় জনস্বার্থে।

যারা কোটি টাকার ব্যবসা করছে তাদের জন্য হাজার বা লাখ টাকার জরিমানা কতটা শক্ত শাস্তি হতে পারে? এই কয়টা টাকা তারা পরবর্তী দুদিনের মধ্যেই আবার তুলে নেয়। কর্তৃপক্ষের মনে হয় নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। ধরতে হবে তাদেরও যারা এসব রাসায়নিক দ্রব্য সাপ্লাই দেয় খাদ্য ব্যবসায়ীদের। উৎসে হাত দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে এসব ব্যবসা।

প্রয়োজনে মৃত্যুদণ্ডকে যুক্ত করতে হবে শাস্তির তালিকায় কারণ তারা প্রতিনিয়ত হত্যা করে চলেছে আমার মতো কোটি মানুষের জীবনকে। ধ্বংস করে দিচ্ছে একটি জাতির আগামী প্রজন্মকে। মানসিকভাবে বিকলাঙ্গতা থেকে শুরু করে নানা ভয়ঙ্কর রোগের চাষ করে যাচ্ছে যাকে আমি কোনোক্রমেই গণহত্যার বাইরে রাখতে পারছি না।

লীনা পারভীন : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App