×

জাতীয়

অর্থপাচার ঠেকাতে সক্রিয় রাজস্ব বোর্ডের টিপিসি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:১৪ পিএম

অর্থপাচার ঠেকাতে সক্রিয় রাজস্ব বোর্ডের টিপিসি
বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফার আড়ালে অর্থপাচার রোধে সক্রিয় হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ট্রান্সপার প্রাইসিং সেল (টিপিসি)। সর্বশেষ বোর্ড মিটিংয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া টিপি সেলের সমন্বয়ক সাব্বির আহমেদকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন। একই বৈঠকে জরিপ ও নিরীক্ষা পরিচালনার জন্য একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে টিপি সেল প্রতিষ্ঠিত হলেও এতদিন অকার্যকর ছিল। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কায় রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেলের কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয়নি। তবে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করায় নতুন করে সক্রিয় করা হচ্ছে এই সেলকে। টিপি সেলটি গঠনের মূল লক্ষ্য ছিল বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর লেনদেনের নিরীক্ষা প্রতিবেদন যাচাই করা। কারণ অনেক ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফার আড়ালে বা সহযোগী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়ে কর ছাড়ের সুবিধায় বিদেশে অর্থপাচার করে, যা প্রতিরোধে কাজ করবে টিপি সেল। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কার্যরত ৯২১টি বহুজাতিক কোম্পানির শাখা অফিস এবং লিয়াজোঁ অফিসে ট্রান্সপার প্রাইসিং সুবিধার অপব্যবহার করে কর ফাঁকি দিচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ে বিশেষ জরিপ পরিচালনা করবে টিপি সেল। টিপিসি জরিপ থেকে প্রাপ্ত কোম্পানির বিগত বছরগুলোর আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য যাচাই করে পৃথক ট্যাক্স প্রোফাইল তৈরি করবে। টিপিসি সূত্রে জানা যায়, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। এই ধাপে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক ও আর্থিক কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিপিসির এক সদস্য বলেন, আমরা একটি কার্যকর জরিপের জন্য ৯২১টি প্রতিষ্ঠান থেকে কোম্পানির প্রকৃতি ও আকার অনুসারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাছাই করব। তিনি আরো বলেন, সেল প্রতিষ্ঠানের ধরন, ব্যবসার ধরন, কর প্রদানের অবস্থা, বহির্বিশে^ সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন, মূল কোম্পানির অবস্থা, শীর্ষ পদের কর্মকর্তাদের চাকরি বিধিমালাসহ আরো কিছু আর্থিক বিবরণী অনুসন্ধানের জন্য একটি নির্দিষ্ট ফর্মে প্রশ্নপত্র পাঠাবে। টিপিসি ইতোমধ্যে বিগত কয়েক বছরের তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রশ্নপত্র তৈরি করেছে। দ্রুত তারা নির্দিষ্ট কোম্পানিতে এগুলো পাঠাবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রতিবেদনের (এসআটি) তথ্যও সংগ্রহ করা হবে, যা দিয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ট্যাক্স প্রোফাইল তৈরি হবে। টিপি আইন অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানি তাদের আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রতিবেদন এনবিআরে জমা দিতে বাধ্য। তবে মাত্র ১৩০-১৪০টি বহুজাতিক কোম্পানি এই প্রতিবেদন জমা দিয়ে থাকে। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান সম্প্রতি বোর্ড মিটিং-এ টিপিসির সমন্বয়কারী কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক সাব্বির আহমেদকে জরিপ ও নিরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ দেন। সূত্র জানায়, যখন কোনো বহুজাতিক কোম্পানি তার কোনো শাখা বা সহযোগী কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করে তখন হস্তান্তর মূল্য (ট্রান্সফার প্রাইসিং) কার্যকর হয়। এটা হতে পারে কোনো কিছু ক্রয় বা বিক্রয় অথবা দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সেবার হস্তান্তর। অনেক বহুজাতিক কোম্পানি পেয়েছে যারা টিপির অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্থপাচার করে থাকে। সূত্র জানায়, এ দেশে কর্মরত বহুজাতিক কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থপাচার ঠেকাতে অর্থমন্ত্রী ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারপর আয়কর অধ্যাদেশ নতুন ধারা সংযোজন এবং এনবিআরে স্বতন্ত্র সেল করা হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে টিপিসি গত অর্থবছরে মাঠপর্যায় থেকে প্রায় ১৫০টি বহুজাতিক কোম্পানির আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে। পাশাপাশি বিদেশে লেনদেন আছে এমন আরো প্রায় ৯০০ প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক লেনদেন ৩ কোটি টাকার বেশি, তাদেরই নজরদারিতে রাখে টিপিসি। ওই ধরনের প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট তথ্য, দলিলাদি সংরক্ষণ করতে হবে। এমনকি বিদেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার ধরনসহ যাবতীয় তথ্যও সংরক্ষণ করতে হবে। ওই প্রতিষ্ঠানে প্রকৃত দাম দিয়েই পণ্য আমদানি করেছে কিনা, তা বছর শেষে যাচাই-বাছাই করবে এনবিআর। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি যে পণ্য আমদানি করেছে, সেই পণ্যের ‘আর্মস লেনথ প্রাইস’ পর্যালোচনা করে পণ্যের প্রকৃত বাজারমূল্য নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী শুল্কায়ন করা হবে। আয়কর অধ্যাদেশের ‘৭৫এ’ ধারা এবং ধারা-১০৭-এর ‘ইই’ উপধারার আওতায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক লেনদেনের সব তথ্য এনবিআরকে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোম্পানিগুলোকে তাদের লেনদেনের ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন সেবা, বিক্রয় ও বিপণন সেবা, গবেষণা উন্নয়ন, সফটওয়্যার, আইসিটি, টেকনিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, কমিশন, লজিসটিকস, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সুদ, সম্পদ বিক্রি, লিজ পেমেন্টস, বিমা, গ্যারান্টি, ঋণ, বিনিয়োগসহ যাবতীয় তথ্য এনবিআরকে সরবরাহ করতে হবে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করবে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল। সূত্র আরো জানায়, এদেশ থেকে বিদেশে দুভাবে টাকা যায়। প্রথমত বাংলাদেশে অবস্থানরত নাগরিকরা তাদের আয় বিদেশে পাঠান। দ্বিতীয়ত বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা স্থানান্তর করে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানকে কর দিতে হয় না। আবার অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা তাদের মূল প্রতিষ্ঠানকে ডিভিডেন্ট, প্রফিট ও রয়্যালটি ফি আদান-প্রদান করে। টিপিসির মাধ্যমে ওই ২ ধরনের লেনদেনে নজরদারি করা হবে। সেজন্য সবার আগে ওই ধরনের কোম্পানির লেনদেনের রিপোর্টিংয়ে স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তাতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App