×

মুক্তচিন্তা

ডা. বদরুল আলম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৫১ পিএম

ডা. বদরুল আলম

ডা. বদরুল আলম

ঢাকায় নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের নকশাকারী ডা. বদরুল আলম ১৯২৯ সালে জামালপুর জেলার শেরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে। পিতা- আলহাজ মৌ. নাসির উদ্দিন আহমদ, মাতা- তহুরুন্নেছা। ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ থেকে আইএসসি এবং ১৯৫৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন।

বদরুল আলমের কর্মজীবন বিচিত্র। এমবিবিএস পাস করার পর সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। পদ না থাকায় চাকরি হয়নি। হতাশা আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে উত্তরবঙ্গে এক বোনের বাসার উদ্দেশে রওনা হন। পথিমধ্যে ট্রেনে পরিচয় হয় এক ভদ্রলোকের সঙ্গে। তার পরামর্শে তিনি চলে যান পশ্চিম পাকিস্তানে। সেখানে আদোয়াল নামক স্থানে এক হাসপাতালে চাকরি নেন।

কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে পেশোয়ার মেডিকেল কলেজের এনাটমি বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন ১৯৫৭ সালে। ইতোমধ্যে বিয়ে করেন সতীর্থ আফজালুন্নেসাকে। ১৯৬১ সালে সস্ত্রীক চলে যান যুক্তরাজ্যে। সেখানে ‘ডিপ্লোমা ইন চাইন্ড হেলথ’ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৭ সালে দেশে ফিরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ৩ বছর শিশু বিভাগের ‘রেজিস্ট্রার’ পদে কাজ করেন।

১৯৭০ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে ১০ বছর কাজ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ওই পদে কর্মরত অবস্থায় ১৯৮০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বদরুল আলম ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১৯৪৬ সালের প্রথম ব্যাচের ছাত্র। রাজনীতি, ভাষা আন্দোলন এবং নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে শিক্ষাজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। ১৯৪৭ সাল থেকেই তিনি ভাষা আন্দোলনে শরিক হন। তিনি ছিলেন ‘শিল্পী সংঘ’- এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। নাটক, অংকন, লেখালেখি, সাহিত্যচর্চা ছিল তাঁর নেশা।

‘এনাটমির জারি’ গান লিখে সুখ্যাতি পান। একুশের প্রস্তুতিস্বরূপ ব্যারাকে পোস্টার লেখার ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়। এ কাজের প্রধান কর্মী ছিলেন বদরুল আলম। তার জীবনের সবচেয়ে বড় ও মহৎ কীর্তি প্রথম শহীদ মিনারের নকশা অংকন করা। নকশা অনুযায়ী কাজ শেষে বদরুল আলমের সুন্দর হাতের লেখা ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ কাঁচা প্লাস্টারে সেঁটে দেয়া হয়।

১৯৫৩ সালের প্রথম একুশে উদযাপনকালে ব্যারাক প্রাঙ্গণে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের স্থানে কালো কাপড় আর লাল কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয় বিলুপ্ত প্রথম শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি। এ কাজেও তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকায় নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের নকশা অংকন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২২ ফেব্রুয়ারিতে মিছিল সভা আর পোস্টার আঁকা নিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিলাম।

রাতে ক্লান্তিতে ঘুমে বিভোর ছিলাম হোস্টেলে। হঠাৎ মধ্যরাতে, কয়েকজন বন্ধু আমাকে ঘুম থেকে টেনে তুলল। বললো, ‘তোমাকে মাওলা ভাই (তৎকালীন ভিপি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রসংসদ) ডাকছেন।’ আমার আঁকার হাত ভালোই ছিল। তাই মাওলা ভাই ও আরো কিছু ছাত্র আমাকে বললেন, ‘ভাষার জন্য ছেলেরা রক্ত দিল, এটা ধরে রাখার জন্য একটি স্মৃতিস্তম্ভের নকশা বানিয়ে দিও।’

তখন এত রাতে আমার মাথায় কিছুই আসছিল না। হঠাৎ মনে হলো, ছেলেবেলায় বাবার সঙ্গে একবার বেড়াতে গিয়েছিলাম, ওখানে খুব সুন্দর ইট বাঁধানো একটা স্তূপ ছিল। বাবা বললেন, এটা স্মৃতিস্তম্ভ। কেউ মারা গেলে তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য এটা বানানো হয়।

সেই স্তূপ কল্পনা করে একটি নকশা করলাম। কারও তেমন পছন্দ হলো না। পরে ভিক্টোরিয়া পার্কে সিপাহী বিদ্রোহের যে স্মৃতিস্তম্ভ আছে, সেটির আদলে একটি নকশা বানালাম।’ ডা. বদরুল আলম ২০১৪ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) লাভ করেন।

এম আর মাহবুব ও সালেক নাছির উদ্দিন : লেখকদ্বয় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস গবেষক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App