×

জাতীয়

আত্মসমর্পণ নিয়ে ধোঁয়াশা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:৫৪ এএম

আত্মসমর্পণ নিয়ে ধোঁয়াশা
টেকনাফের ইয়াবা কাররারিদের স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া কিভাবে সম্পন্ন হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। পুলিশের তদারকিতে সবকিছু হলেও এ ব্যাপারে রাখঢাক থাকায় অনেক প্রশ্নের জবাব মিলছে না। ১৬ ফেব্রুয়ারি কতজন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করবে এবং তাদের মধ্যে কতজন তালিকাভুক্ত তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমনকি আত্মসমর্পণকারীদের পুরনো মামলাগুলো কি হবে এবং তাদের পুনর্বাসন করার ব্যাপারেও রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসন করা হবে না। তাদের আদালতে পাঠানো হবে। আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের সব মামলা নিষ্পত্তি হবে। পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ওই অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাগাতার অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে/ক্রসফায়ারে’ ৩৯ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনের। র‌্যাব-পুলিশের দাবি, নিহতরা তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। এ অবস্থায় আতঙ্কিত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ‘আত্মসমর্পণ’ করতে চেয়ে পুলিশকে প্রস্তাব দেয়। কক্সবাজার জেলা পুলিশ ওই প্রস্তাব পাঠায় চট্টগ্রাম রেঞ্জ অফিসে। সেখান থেকে প্রস্তাবনা যায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনেন। সেখান থেকে সায় মেলার পর পুলিশ ‘আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া’ শুরু করে। পুলিশের সবুজ সংকেত পেয়ে আত্মসমর্পণে আগ্রহীরা ‘কক্সবাজার পুলিশ লাইনসের সেফহোমে’ যাওয়া শুরু করে। পালিয়ে থাকা অনেকে বিদেশ থেকে যোগাযোগ করে পুলিশের সঙ্গে। যাদের মধ্যে আলোচিত সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির বেশ কয়েকজন নিকটাত্মীয় রয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে কক্সবাজার পুলিশ লাইনেস ‘আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল আশরাফুল হক, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। ১৬ ফেব্রুয়ারির পর ইয়াবাবিরোধী অভিযান আরো জোরদার করা হবে বলে জানা গেছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা আলাপচারিতায় বলেন, আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যক্তিদের অধিকাংশ ইয়াবা বহনকারী। তালিকাভুক্ত কারবারিরা শুরুতে আত্মসমর্পণ এড়িয়ে চললেও শেষ মুহূর্তে তাদের অনেকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। তবে ইয়াবার উৎস বন্ধ না হওয়ায় রুট চিহ্নিত করে ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক বন্ধের চেষ্টা চলছে। যদিও এত বড় সীমান্ত বন্ধ করা অনেকটা দুঃসাধ্য বলে মনে করছেন পুলিশ, র‌্যাব ও কোস্ট গার্ড কর্মকর্তারা। জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিতভাবে কক্সবাজারের মাদক ব্যবসায়ীদের করা তালিকায় ১ হাজার ১৫১ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে ৯ শতাধিক ব্যবসায়ী টেকনাফের। সে জন্য টেকনাফে আলাদা নজরদারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। একের পর এক অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। ভয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে ইয়াবার গডফাদাররা। বেগতিক পরিস্থিতিতে সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হন। এরপরই আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান তিনি। তবে তার কথায় প্রথমে কেউ ভরসা পায়নি। কিন্তু দুবাই থেকে নিজের ৩ ভাইকে এনে আত্মসমর্পণের কথা জানালে অভয় পায় অন্যরা। এরপরই পুলিশের সেফহোমে যাওয়ার হিড়িক পড়ে। তবে বদিকে নিয়ে বিতর্ক থাকলেও শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি কি হয় এ নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। ‘আত্মসমর্পণ’ প্রসঙ্গে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ভোরের কাগজকে জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পরিচয় তারা মাদক ব্যবসায়ী, আইনের দৃষ্টিতে তারা অপরাধী। অপরাধের পথ ছেড়ে জীবন ও পরিবার বাঁচাতে তারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, প্রতিনিয়ত এই তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের পুরনো মামলাগুলো চলবে নিজস্ব গতিতে। শুধুমাত্র আত্মসমর্পণ পর্বের পরিপ্রেক্ষিতে কি করা যায় তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসন করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেই। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা সচ্ছল ও বুঝেশুনে এই ব্যবসা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাগাতার অভিযানে বিচলিত হয়ে তারা আত্মসমর্পণ করছে। পুরো প্রক্রিয়াটি তদারকি করছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। তিনি বলেন, জল ও বনদস্যুদের আত্মসর্পণের সঙ্গে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ মিলানো যাবে না। ডিআইজি জানান, যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসাইন বলেছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রজ্ঞাপন দিয়ে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়নি। তারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিলে তা বিবেচনার জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো হয়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ওই প্রস্তাব বিবেচনায় নিলে তারা আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অনেকেই যোগাযোগ শুরু করেছে। যাদের মধ্যে পুলিশের তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার সাহা জানান, আত্মসমর্পণ যারা করতে আগ্রহী তারা ভবিষ্যৎ পরিণতি আঁচ করতে পেরে আতঙ্কে এই চিন্তা করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App