×

জাতীয়

সেই ৪৮ ঘণ্টা আর আসবে না?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:১১ পিএম

সেই ৪৮ ঘণ্টা আর আসবে না?
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের আজ ৭ বছর। এখনো কোনো বিচার পেলাম না। তদন্তের কোনো অগ্রগতিও দেখছি না। এই ৭ বছরের মতো হয়তো কেটে যাবে আরো বছর। অথচ হত্যাকাণ্ডের পরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার সময় চেয়ে দোষীদের গ্রেপ্তারের কথা বলেছিলেন। আজও সেই ৪৮ ঘণ্টার অপেক্ষায় আছি। হয়তো আর ফিরে আসবে না সেই ৪৮ ঘণ্টা। কিন্তু একজন মা হিসেবে প্রতিদিনই সন্তানের হত্যাকারীদের বিচারের আশায় থাকি। জানি না, মরার আগে সেই দিন আসবে কিনা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদিচ্ছা থাকলে অবশ্যই বিচার পাব বলে জানিয়েছেন নিহত সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা সরওয়ার ওরফে সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির। গতকাল রবিবার তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, মনে প্রশ্ন দানা বাঁধে আমাদের সাগর-রুনি কি এ দেশের নাগরিক ছিল। যদি নাগরিকই হবে তাহলে তাদের হত্যার বিচার কেন হবে না। সন্তানের স্মৃতিচারণ করে কান্না-বিজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, একজন মা হিসেবে গত ৭টি বছর প্রতি ক্ষণে ক্ষণে ছেলের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি। সব সময় প্রতিক্ষায় থাকি এ ঘটনার বিচার হবে। মরার আগে শুধু ওই দিনটিই দেখে যেতে চাই। এদিকে মামলার তদন্ত দায়িত্ব পাওয়ার পর র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য এখন পর্যন্ত ৬২ বার সময় নিয়েছেন। তবুও কোনো সুরাহা হয়নি। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের শেষ তারিখ হলেও প্রতিবারের ন্যায় এবারো পেছানো হতে পারে প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ। শুধু তাই নয়, কবে নাগাদ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হতে পারে তাও নিশ্চিত নয় তদন্তকারী সংস্থা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার শহীদার রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই মামলার তদন্ত করা হচ্ছে। কিন্তু কবে নাগাদ চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। অপরদিকে তদন্ত সঠিক পথে নেই বলেই দীর্ঘ প্রায় ৭ বছরেও চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হচ্ছে না এমনটাই মনে করছেন নিহতদের পরিবার, সহকর্মী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা। সাংবাদিক সংগঠনগুলো বিচারের দাবিতে টানা আন্দোলন করে আসছেন। তারা বলছেন, ৬২ বার সময় পেয়েও এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত না করার পেছনে কোনো রহস্য রয়েছে। কোনো একটি পক্ষ বাধা সৃষ্টি করায় মামলার তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে না। এ হত্যাকাণ্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ৫ বছরের মেঘ এখন ১৩ বছরে। সেই দুঃসহ স্মৃতি ভোলার একটা উপলক্ষ হয়তো হতে পারত খুনীদের বিচার। কিন্তু অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে, এই হত্যার বিচার নিয়ে আশাই ছেড়ে দিয়েছেন সাগর-রুনির পরিবার ও শুভাকাক্সক্ষীরা। মামলার বাদী নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান ভোরের কাগজকে বলেন, যেহেতু এটি একটি হত্যাকাণ্ড সেহেতু আমরা রাষ্ট্রের কাছে বিচার চেয়ে আসছি। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ছাড়া বিচার পাইনি। সুতরাং মনে হচ্ছে দায়িত্বশীলরা বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সরওয়ার ওরফে সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি দম্পতি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন। পরের দিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এর ৪ দিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২ মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ১৮ এপ্রিল মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দায়িত্ব নিয়েই সাগর ও রুনির মরদেহ কবর থেকে তুলে এনে পুনরায় ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা পরীক্ষা করে র‌্যাব। কিন্তু তদন্ত আর এগোয়নি। তবে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই র‌্যাব বনানী থানার একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার থাকা ৫ আসামি মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুণ, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়। এ ছাড়া ওই মামলায় বিভিন্ন সময়ে রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল এবং দারোয়ান এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন জামিনে আছেন। তদন্ত সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, বঁটি, ছুরির বাঁট, সাগর-রুনির পরনের কাপড় ও সাগরের হাত-পা বাঁধা কাপড় জব্দ করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। হত্যায় সন্দেহভাজন কয়েক ব্যক্তির ডিএনএ নমুনাও বিদেশি ল্যাবে পাঠানো হয়। এসব পরীক্ষার প্রতিবেদন তদন্ত সংস্থার হাতে এসেছে। তবে তা দিয়ে আসামি শনাক্তের জন্য আপাতত তেমন কোনো কার্যকর ক্লু মেলেনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App