বড়লেখায় পাহাড়-টিলা কেটে পরিবেশ ধ্বংসে আগ্রসন চলছে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:২১ পিএম
ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত প্রাচীর খ্যাত বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড় সংলগ্ন এলাকাগুলোতে অবাধে চলছে পাহাড়-টিলা কাটা । বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড় ও হাকালুকি হাওর পরিবেশের জন্য সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে চিহ্নিত। এ লাকায় নির্বিচারে পাহাড়-টিলা কেটে এমন ভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে বনজ গাছপালা। পরিবেশ ধ্বংসের এমন আগ্রাসন চললেও রহস্যজনক নীরবতায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
অন্যান্য বছর উপজেলা প্রশাসন অবৈধ টিলার মাটি বহনকারী পরিবহন আটক করে চালকদের সতর্ক বা ১-২টি অভিযান চালিয়ে জারিমানা আদায় করলেও এবার পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের এমন কোন ভূমিকা গ্রহণের সংবাদ পাওয়া যায়নি। গত ১৬ জানুয়ারী বড়লেখায় গণসংবর্ধনায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি টিলা কাটা ও বনাঞ্চল উজাড়ের প্রভাবে প্রতি বছর বন্যা, ভুমিকম্প, ভুমিধস, ঘূর্নিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরেন। পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনসহ সকলকে সচেতন থাকার আহবান জানিয়ে সতর্ক করেন। সম্প্রতি প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় ও টিলা কাটা বন্ধে মাইকিং করাটাকে অনেকেই আইওয়াস হিসেবে দেখছেন । পাহাড়-টিলা কাটার সাথে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কয়েক ব্যক্তির সাথে আলাপ কালে মাইংকিংকে মাসোহারা বাড়ানোর অজুহাত হিসেবে ভাবছেন।
জানা যায়, ১৯৯৯ সালে পাহাড়ের বনজ ও হাওরের জলজ জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড় ও হাকালুকি হাওরকে পরিবেশের জন্য সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় পাহাড়-টিলায় প্রভাবশালীদের কালো থাবায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের প্রকৃতিক সবুজ বনানী, প্রাকৃতিক টিলা ও আশ্রয় হারিয়ে বিপন্ন হচ্ছে বনজ প্রাণীকুল। সংকটাপ্ন হয়ে পড়ছে হাকালুকি হাওরের জলজ জীব বৈচিত্র্য। পাহাড়-টিলা কেটে প্রভাবশালীরা টিলার মাটি বিট বালি হিসেবে চড়া দামে বিক্রি করছে। আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে অনেকেই ব্যক্তি মালিকানাধীন টিলা কেটে নির্মাণ করছে বাড়ি ও রাস্তা। সরকারী উচু টিলার মাটি বিক্রিকে আড়াল করতে দেখানো হচ্ছে খেলার মাঠ তৈরীর জন্য কাটা হচ্ছে পাহাড়-টিলা। হুমকির মুখে পরিবেশের ভারসাম্য। গত শনিবার সরেজমিন দেখায় যায়, উপজেলা ভূমি অফিসের প্রাঙ্গনের সামনের গর্ত ভরাট চলছে সাতকরাকান্দি থেকে টিলা কেটে মাটি এনে। গাড়ি থেকে মাটি নামানের কাজে ব্যস্ত শ্রমিকের কাছে প্রতি গাড়ি মাটির দাম জানতে চাইলে তিনি জানান,টাকা ছাড়াই এ জায়গা ভরাটের জন্য ইউএনও স্যার মালিককে বলে দিয়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির করমপুর, কুমারশাইল, বড়াইল, সায়পুর, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপির মোহাম্মদ নগর, ছোটলেখা, ঘোলষা, চন্ডিনগর, বোবারথল, তারাদরম, সদর ইউপির ডিমাই, বিওসি কেছরিগুল, জফরপুর, মূছেগুল, হিনাইনগর, দক্ষিণভাগ দ. ইউপির হাকাইতি, কাশেমনগর, জামকান্দি, পুর্বহাতলিয়া, পশ্চিম হাতলিয়া, দক্ষিণভাগ উত্তর (কাঠালতলী) ইউপির মাঠগোদাম, বিওসি কেছরিগুল, গৌড়নগর, হরিপুর, মাধবকুণ্ডসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় অবাধে পাহাড় টিলা কাটার মহোৎসব চলতে দেখা গেছে।
পাহাড়-টিলা কাটার ব্যাপারে উপজেলা ভূমি উন্নয়ন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সুহেল মাহমুদ জানতে চাইলে তিনি বলেন,উপজেলা ভূমি অফিস প্রাঙ্গনে মাটি ভরাটের নির্দেশ তিনি দেননি। বিষয়টি উপজেলা অতিরিক্ত কমিশনার (ভূমি) কাছ থেকে জেনে নিতে বলেন। অতিরিক্ত কমিশনার (ভূমি) শরীফ উদ্দিনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,গতকাল রোববার খবর পেয়ে দক্ষিণ ভাগের কাসেম নগরে অভিযানে যান। কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি। আর অফিস প্রাঙ্গন টিলার মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে না বলে জানান। তবে গতকাল সোমবার এ রিপোর্ট লেখার সময় থেকে ভুমি অফিসের প্রাঙ্গণের মাটি ভরাটের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।