×

জাতীয়

নিষ্ক্রিয় মাদক অধিদপ্তর!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:৩৭ পিএম

নিষ্ক্রিয় মাদক অধিদপ্তর!
দেশের সব ধরনের মাদক নির্মূলের গুরুদায়িত্ব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি)। এ জন্য প্রতি জেলায় সার্কেল অফিস গড়ে তুলেছে সংস্থাটি। নিয়মিত মামলা ও মাদকও উদ্ধার করছে। কিন্তু ইয়াবা প্রবেশের অন্যতম রুট কক্সবাজারের টেকনাফে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ডিএনসি। অথচ সেখানে আলাদা একটি অস্থায়ী সার্কেল রয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তাদের জনবল পর্যাপ্ত নয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, টেকনাফে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে কোনো ভ‚মিকাই রাখতে পারছেন না ডিএনসির সদস্যরা। ফলে অন্য সংস্থাগুলোর মতো এ সংস্থার আন্তরিকতার অভাবে ইয়াবা প্রবেশ করছে দেশে। এ জন্য ডিএনসির উচিত হবে আগে প্রবেশ মুখ বন্ধ করে পরে দেশের অন্য জায়গায় নজর দেয়া। এদিকে গত ৪ মে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে টেকনাফে আলাদা নজরদারি শুরু করে সব সংস্থা। জনবল বাড়ানো হয় ডিএনসির টেকনাফ সার্কেলেও। কিন্তু এরপরও তারা নিষ্ক্রিয়ই রয়েছে। সীমান্তসহ টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় এখনো ইয়াবা বিক্রি হলেও অভিযানে তৎপরতা নেই ডিএনসির। যে অভিযানগুলো ডিএনসির পক্ষ থেকে চালানো হয় সেগুলো বাহক পর্যায়ের বলে জানিয়েছে টেকনাফের সচেতন মহল। রয়েছে অন্য সংস্থাগুলোকে অসহযোগিতার অভিযোগও। তবে ডিএনসির কর্মকর্তারা এ দায় নিতে নারাজ। জনবলসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মাঝেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি তাদের। টেকনাফের সাবরং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকজন বাসিন্দা ভোরের কাগজকে জানান, প্রশাসনের নীরব ছায়ায় পুরনো রুট দিয়েই দেশে আসছে ইয়াবা। সেই ইয়াবাগুলো সন্ধ্যার পর সীমান্তবর্তী ডাঙ্গোরপাড়া, উত্তরপাড়া, মাঝেরপাড়ার প্রায় ২০টি বাড়িতে বিক্রি করা হয়। কিন্তু সব জেনেও সেখানে অভিযান চালায় না কোনো সংস্থা। ডিএনসির কথা বলতেই তারা বলেন, ডিএনসি অভিযানে আসে না বললেই চলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেকনাফের একাধিক বাসিন্দা বলেন, ডিএনসি সক্রিয়ভাবে ইয়াবার গডফাদারদের বাড়িতে অভিযান চালায়নি। শুধু বাহক পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করেছে। যেহেতু মাদক অধিদপ্তরের কাজ শুধু মাদক নিয়ন্ত্রণ করা। সুতরাং এ সংস্থাটির আরো জোরদার অভিযান চালানো উচিত। টেকনাফ থানার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, শুধু মাদক নির্মূল করা কাজ হলেও সেভাবে তৎপর নেই ডিএনসির। এমনকি তাদের থানায় ডেকে যৌথভাবে অভিযান চালানোর বিষয়ে আহবান জানানো হলে রাজি হননি। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা চাওয়া হলেও কোনো সহযোগিতা করেন না। অভিযানে যাওয়ার জন্য কখনো ফোর্স চাওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কখনোই এ ধরনের সহযোগিতা চায়নি। ডিএনসির টেকনাফ অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, নানা সীমাবদ্ধতায় আমরা বড় অভিযান চালাতে পারি না। এরপরও সোর্সের মাধ্যমে ইয়াবা কারবারিদের গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএনসির টেকনাফ সার্কেলের গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের অভিযানের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায় কতটা নিষ্ক্রিয় সংস্থাটি। ওই তিন মাসে ১ লাখ ৫ হাজার ৩৪৩ পিস ইয়াবা, ২৪ লিটার মদ, ২০০ গ্রাম গাঁজা, ২৭ গ্রাম আফিম, ৫৪ হাজার ৯৪০ এমপোল ইনজেকশন উদ্ধার করেছে সংস্থাটি। মামলা করা হয়েছে ৬৮টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৮ জনকে। সর্বশেষ গত ৩১ জানুয়ারি এক অভিযানে ৮ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ অভিযানগুলোতে গডফাদার পর্যায়ের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। অথচ ২০১৮ শুধু ডিসেম্বর মাসেই টেকনাফে ৭ লাখ ৯ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। ৫৭ মামলায় গ্রেপ্তার করে ৪১ জনকে। সর্বশেষ টেকনাফের হোয়াইংক্যং ইউনিয়ন থেকে আড়াই লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। মাদক জব্দের পাশাপাশি মাদক গডফাদারদের বাড়িতে হানা দিয়েছে পুলিশ। র‌্যাবের অভিযানেও প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩ লাখ ইয়াবা উদ্ধার হচ্ছে। সে হিসেবে ডিএনসির তেমন কোনো তৎপরতা নেই। অথচ ডিএনসি আরো তৎপর হলে ইয়াবার চালান কমে যাবে বলে এলাকাবাসীর দাবি। ইয়াবা প্রবেশের প্রধান মুখ টেকনাফে ডিএনসি নিষ্ক্রিয় কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে অধিদপ্তরটির মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, নিষ্ক্রিয় কথাটি ঠিক নয়। সেখানকার অস্থায়ী সার্কেল বিজিবি ও পুলিশের বাইরেও প্রতিনিয়ত মাদক উদ্ধার করছে, আসামি গ্রেপ্তার করছে। তবে জনবলসহ কিছু পুরনো সমস্যা রয়ে গেছে। নতুন জনবল কাঠামোতে টেকনাফের জন্য জনবল চাওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলার বাইরে আমাদের কোনো সার্কেল অফিস নেই। শুধু টেকনাফেই সেটি করা হয়েছে। ১০ জন আনসারের সমন্বয়ে অধিদপ্তরের ১৩ জনের একটি টিম কাজ করছে। তাদের একটি গাড়ি দেয়া হয়েছে। আলাদা অফিস নেয়ার চিন্তাও করা হচ্ছে। আশা করি টেকনাফে ডিএনসি আরো জোরদার করতে পারব। অন্যান্য সংস্থাকে অসহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, টেকনাফে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স করা হয়েছে। তারা চাইলে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App