×

জাতীয়

আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনের ছক বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:০৫ পিএম

কারাগারে বছর কেটে যাচ্ছে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার কারাবাসের বছরপূর্তি হচ্ছে তার। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ মামলায় ৫ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে কারাগারে ঢোকেন তিনি। এখন ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দিন যত যাচ্ছে সাজার মাত্রা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। কারামুক্তির আশাও ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে। বিএনপি নেতাদের স্বপ্ন ছিল আইনি প্রক্রিয়ায় কারামুক্তি ঘটবে খালেদা জিয়ার। জামিনে মুক্ত হয়ে বীরদর্পে বেরিয়ে আসবেন তিনি। এ জন্য কারাগারে যাওয়ার সময় নেতাকর্মীদের তার জন্য আন্দোলন না করে দল গুছিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। খালেদা জিয়ার এ নির্দেশে দলীয় নেতাদের স্বপ্ন ছিল সহসাই কারামুক্তি ঘটবে তাদের নেত্রীর। এমনকি সঠিকভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে ক্ষমতায় ফিরে আসাও সময়ের ব্যাপার বলে ধারণা ছিল নেতাদের। কিন্তু কার্যত হয়েছে উল্টো। খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলেনি। উল্টো নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলীয় ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফলাফল করেছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে রইল। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে হিমশিম খাচ্ছে দলটির নেতারা। তারা নানান হিসাব কষছেন। খালেদার কারামুক্তির কৌশল নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন তারা। আইনি প্রক্রিয়ার শেষ দেখেই আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষে দলটির একাংশ। আরেক অংশ আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনের পক্ষে মত দিয়েছেন। পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রগুলোকে খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে ফেলার মত দিয়েছেন তারা। তাদের যুক্তি, সরকারকে চাপে না রাখলে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার উল্টো বিএনপিকে নির্মূলের চেষ্টা করবে। সূত্র জানায়, উভয় পক্ষের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি রাজপথমুখো হওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সঙ্গে বিদেশিদের যুক্ত করার চলমান প্রক্রিয়া জোরদার করতে দলটির আন্তর্জাতিক উইংকে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। নবগঠিত এ আন্তর্জাতিক উইংয়ের সদস্যরা গত ৩০ ডিসেম্বর হয়ে যাওয়া একাদশ জাতীয় নির্বাচনের বিভিন্ন অনিয়মের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তসহ বিদেশিদের কাছে চিঠি দিয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা রুজু থেকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো পর্যন্ত এবং গত এক বছরে জামিন না দিয়ে কারাগারে রেখে দেয়ার বিষয়গুলোও অবহিত করা হয়েছে বিদেশিদের। এতে সরকারের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগও রয়েছে। এমনকি বিচার বিভাগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও এসব চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়া জোরালো করতে আইনজীবীদের আরো সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। আইনি লড়াই বেগবান করতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামও পুনর্গঠন করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে আইনের নানা ফাঁক-ফোকর খুঁজে বের করতে কাজও চলছে। কোনো অবস্থাতেই খালেদা জিয়াকে আর বেশি দিন কারাগারে রাখতে চান না তারা। ক‚টনৈতিক ও আইনি তৎপরতার সঙ্গে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সারা দেশে সাংগঠনিক কাঠামোতেও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। দলটির কেন্দ্র থেকে তৃনমূলের যেসব নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছে তাদের কারামুক্তি নিশ্চিত করতে আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। যারা হামলার শিকার হয়ে হাসপাতাল কিংবা অন্য কোনো স্থানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের চিকিৎসা সহায়তায় ডক্টরস এসোসিয়েশনকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। যেসব নেতাকর্মী গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে বিএনপি। সঙ্গে উপার্জনক্ষম কোনো সদস্য থাকলে তাদের চাকরি, ব্যবসা কিংবা বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে। সূত্র জানায়, এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই রাজপথে নামবে বিএনপি। দলটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কর্মসূচি দিয়ে রাজপথমুখী হতে পারে বিএনপি। এ ছাড়া আগামী এপ্রিল মাস থেকে ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির সঙ্গে থাকবে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ক‚টনীতিকরা আমাদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান। আমরাও তাদের মামলার সব ডকুমেন্ট সরবরাহ করেছি। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপির সামনে এখন দুটি চ্যালেঞ্জ। একটি হচ্ছে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং অন্যটি হচ্ছে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেও সরকারের পতন ঘটিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App