×

জাতীয়

দুই জোটের স্নায়ুযুদ্ধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৫৫ এএম

টানাপড়েন চলছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দুই বড় প্লাটফর্ম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের মধ্যে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ড. কামালের নেতৃত্বে বিএনপি সমন্বয়ে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন ও নির্বাচনের পুরনো জোট ২০ দল এখন বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। কোনো পরিস্থিতিতেই কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এমন পরিস্থিতিতে সম্পর্ক ছিন্ন হতে যাচ্ছে এই দুই জোটের। আগামীতে আর দুই জোটকে যুগপৎ কর্মসূচিতে দেখা যাবে না এটা অনেকটাই নিশ্চিত। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামীকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় কালো ব্যাজ ধারণ করে মানববন্ধন করার কর্মসূচি দিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করবে জোটটি। এ ছাড়া আগামী ২৪ ফেব্রæয়ারি করবে গণশুনানি। রাজধানীতে গণসম্মিলন বা জাতীয় সংলাপসহ আরো কিছু কর্মসূচিতে হাত দেবে জোটটি। এসব কর্মসূচিতে বিএনপি ছাড়া ২০ দলের আর কোনো শরিককে আপাতত দেখা যাবে না বলে আভাস পাওয়া গেছে। কারণ এসব দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভ‚মিকায় সন্তুষ্ট নয়। তারা বরং বিএনপিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে আসার জন্য চাপ দিচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ দিয়ে ভোট করার সুযোগ দেবে বিএনপি এটা জানলে দলটির সঙ্গে ঐক্য করতেন না। ঐক্য ধরে রাখতে হলে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে হবে। বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে জামায়াত ছাড়ার। ড. কামাল হোসেনের এমন বক্তব্য ও তৎপরতায় তোলপাড় চলে ২০ দলীয় জোটে। এ কারণে ড. কামাল হোসেনের ওপর ক্ষুব্ধ ২০ দলের শরিক নেতারা। তারা মনে করেন, ড. কামাল হোসেন জামায়াত প্রসঙ্গটি এ মুহূর্তে না বললেও পারতেন। বিষয়টি জনসম্মুখে এনে বিএনপিকে যেমন বেকায়দায় ফেলেছেন; তেমনি সরকারের হাতে নতুন একটি ইস্যু তুলে দিয়েছেন। প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন জাতীয় ঐক্যকে। এমন প্রেক্ষাপটে ২০ দল শরিকরা বিএনপির ওপর এই বলে চাপ সৃষ্টি করে, বিএনপি যদি জামায়াতকে বোঝা কিংবা দায় মনে করে, তবে তাদের সঙ্গে থাকার যুক্তি কি? এ নিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি ওঠে ২০ দলের মধ্য থেকে। যাতে ভ‚মিকা রাখে জামায়াতমিত্র ২০ দলের অন্য শরিকরা। এ নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়ে যায় বিএনপি। পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকে বিএনপির কাছে ২০ দলের গুরুত্ব অনেক কমে গেছে। যা ২০ দলীয় জোটের নেতারা মেনে নিতে পারছেন না। ২০ দলের অনেক নেতা মনে করেন, ড. কামাল হোসেনের কারণেই সরকার গত নির্বাচনে পার পেয়ে গেছে। নেপথ্যে থেকে ড. কামাল হোসেন সরকারকে সহযোগিতা করেছেন। এ কারণে এত বড় ‘ভোট হাইজ্যাকের’ পরও ড. কামাল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথে হাঁটছেন না। বরং সরকারকে সুবিধা দিচ্ছেন। তার দলের দুই নির্বাচিত সংসদ সদস্য শপথ নেয়ার কথা বলছেন প্রকাশ্যেই। যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে। সরকারের জন্যও ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। নেতাদের মধ্যে এমন আলোচনাও আছে, ২০ দল ভাঙতে জামায়াত নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ড. কামাল, তার রাজনৈতিক ক‚ট-কৌশলেরই অংশ। এসব কারণে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ২০ দলের সম্পর্ক এখন তলানিতে। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের শুরুর দিকে জোটটির প্রায় সব কর্মসূচিতে একমাত্র জামায়াতে ইসলামী বাদে বাকি দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বকে উপস্থিত থাকতে দেখা যেত। এলডিপির কর্নেল অলি আহমেদ, কল্যাণ পাটির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহম্মদ ইবরাহিমের মতো মুক্তিযোদ্ধা নেতারা ঘিরে থাকতেন ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু এখন ডেকেও ২০ দলের কোনো নেতাকে কাছে পান না ড. কামাল। এমনকি বিএনপি বাদে ২০ দলের অন্য দলগুলোর নেতারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ড. কামাল হোসেনকে এড়িয়ে চলেন। উপরন্তু জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি যুদ্ধাপরাধী দলের পক্ষে কথা বলতে শোনা যায় এসব নেতাদের; যারা এক সময় জামায়াতের বিপক্ষে ছিলেন ২০ দলীয় জোটের সদস্য হয়েও। এমন পরিস্থিতিতে ২০ দলের নেতারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে ২০ দলকে শক্তিশালী করতে এবং নতুন নতুন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতে বিএনপিকে চাপ দিচ্ছেন। ২০ দল মনে করে, ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পরে ২০ দলের গুরুত্ব কমে গেছে। বিএনপি ২০ দলকে পাত্তা দিচ্ছে না। ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে মেতে আছে। আর ড. কামাল হোসেন ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জামায়াতকে ২০ দল থেকে বের করতে চাপ দিচ্ছে। দুই জোটের এমন চাপে বিএনপির এখন ‘শ্যাম রাখি না ক‚ল রাখি’ অবস্থা। কিন্তু দলটি চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট অটুট রাখতে। তাদের পরিকল্পনা দুই জোটকে হাতে রেখে আগামীতে সুবিধাজনক সময়ে আবারো একাট্টা হয়ে রাজপথে নামতে। এর আগে অবশ্য বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে চায়। যদি আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি না মেলে সেক্ষেত্রে তার মুক্তির দাবির সঙ্গে সরকারের পদত্যাগ, অবিলম্বে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে দুই জোটকেই পাশে চায় বিএনপি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, ২০-দলীয় জোটের ঐক্য অটুট রেখে আরো বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য হাইকমান্ড থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছে। জামায়াত ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে টানাপড়েন দেখা দিলেও বিএনপি জামায়াতকে আপাতত ত্যাগ করছে না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট বা ২০ দলে কোনো টানাপড়েন তৈরি হয়নি। ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল অটুট রয়েছে। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, জামায়াত যারা করে তারা যদি এ দেশের নাগরিক হয় তা হলে তাদের রাজনীতি করতে দিতে হবে। সরকার তাদের নিষিদ্ধ করেনি। জামায়াত প্রসঙ্গ তুলে ড. কামাল কি বলতে চাইছেন তা স্পষ্ট নয়। ২০ দলের অন্যতম দল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল আলাদা দুটি স্বত্তা। দুই জোটের কর্মকাণ্ডও আলাদা। এর মধ্যে কোনো টানাপড়েন আছে বলে আমার জানা নেই। ২০ দলের আরেক দল ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি বলেন, জোট থাকলে টানাপড়েন থাকতেই পারে। এ নিয়ে বিরোধীদের উল্লসিত হওয়ার কারণ নেই। যে বিষয় নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয় তা একসময় আবার সমাধানও হয়ে যায়। তিনি জানান, ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলে কোনো টানাপড়েন নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App