×

মুক্তচিন্তা

এ দায়ভার কে নেবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:১৪ পিএম

বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। কথাটি আবারো সত্য প্রমাণিত হলো। দুদকের মামলায় বিনা অপরাধে দীর্ঘ তিন বছর কারাবাসে ছিলেন পাটকল শ্রমিক জাহালম। একজন শ্রমজীবী মানুষের জীবন থেকে তিন বছর ঝরে যাওয়ার দায়ভার কে নেবে তা বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এ ঘটনায় সম্পৃক্ত তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি নিরূপণে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সার্বিক দিক খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দিতে বলেছে দুদক। আমরাও চাই বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হোক। জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক।

মামলা ও পরবর্তী সময়ে ২৬টি মামলার চার্জশিটে সালেকের নাম ব্যবহার করা হলেও জাহালমকে সালেক নামে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর সালেককে তলব করে দুদক চিঠি দিলে সেই চিঠি পৌঁছায় জাহালমের টাঙ্গাইলের বাড়ির ঠিকানায়। অথচ জাহালম তাদের বাড়ি থাকেন না।

তিনি কাজ করেন নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলের শ্রমিক হিসেবে। মামলার চার্জশিট হওয়ার পর জাহালমের বিরুদ্ধে আদালত থেকে তিন বছর আগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোড়াশাল থেকে জাহালমকে গ্রেপ্তার করে দুদক।

অনুসন্ধানকালে জাহালম দুদককে বলেছিলেন, তিনি আবু সালেক নন। সোনালী ব্যাংকে তার কোনো অ্যাকাউন্টও নেই। ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবু সালেকের যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেটাও তার নয়। কিন্তু দুদকে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনুসন্ধানকালে জাহালমকেই ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেন।

পরে আদালতেও জাহালম দুদকের পরিচয় বিভ্রাটের বিষয়টি তুলে ধরে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। কিন্তু কেউ তার কথা কানে তোলেননি। এমনকি দুদকের পিপিরাও বিষয়টি ভালোভাবে পর্যালোচনা করেননি। যে আদালতে বিচার চলছে সেই আদালতের বিচারকও বিষয়টি ভালোভাবে বিবেচনায় নিলে জাহালমকে বিনা কারণে তিন বছর জেলে থাকতে হতো না।

জাহালমকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গত ২৮ জানুয়ারি চার সরকারি কর্মকর্তা ও মামলার বাদীকে তলব করেন। তাদের বক্তব্যে তদন্ত প্রক্রিয়ায় ভুল থাকার বিষয়টি উঠে আসে। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত রবিবার জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন।

বহু নির্দোষ মানুষ বিনা কারণে বছরের পর বছর কারাভোগ করেছে। শুধু নাম বিভ্রাটের কারণে দীর্ঘ সময় কারাবাস থাকতে হলো এর কারণ হিসেবে তার ক্ষতিপূরণ চাওয়াও প্রাসঙ্গিক। আমরা চাই, দুদক এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App