একজন তরুণী তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ফেসবুক আইডি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, স্টিকার কমেন্ট প্লিজ। সেখানে স্টিকার দিয়ে তার অসংখ্য বন্ধু-স্বজন কমেন্ট করেছেন, যার সংখ্যা কয়েকশো ছাড়িয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনাগ্রহী এই তরুণী বলেন, কিছুদিন আগে তিনি ফেসবুক থেকে নোটিশ পান, তার আইডিতে কেউ প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে। এরপর তার একজন বন্ধুর পরামর্শে তিনি ফেসবুকে এই স্ট্যাটাসটি লেখেন, যাতে কোনো কারণে আইডি হারিয়ে গেলেও সেটি পুনরুদ্ধার করা যায়।

ফেসবুক আইডি বাঁচাতে অনেকের দেয়া স্ট্যাটাসে বন্ধুরা মন্তব্য করেন, কিন্তু তা কি সত্যিই আইডি বাঁচাতে পারে? আমার ফেসবুক আইডি রিপোর্ট হচ্ছে, কমেন্টে রেসপন্স করুন প্লিজ বা আইডি ঝুঁকির মধ্যে আছে, স্টিকার কমেন্ট প্লিজ এ ধরণের অনেক স্ট্যাটাস ফেসবুকে প্রায়ই চোখে পড়েছে। যারা সে স্ট্যাটাস দেয়, তাদের তালিকায় থাকা বন্ধুরা অসংখ্য মন্তব্য করে, স্ট্যাটাস দিয়ে সে ফেসবুক আইডি রক্ষার চেষ্টাও করেন। কিন্তু বাস্তবে এ রকম মন্তব্য কতটা কাজে আসে? সত্যিই কি এসব স্টিকারের মাধ্যমে করা মন্তব্য ফেসবুক আইডি বাঁচাতে পারে? এ বিষয়ে কথা হয় জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি লিখেছেন, আজকে আইডিতে রিপোর্ট পড়ছে মোট ৫৬টি। প্লিজ ১ হাজার কমেন্ট দরকার। তার এই স্ট্যাটাসে কমেন্ট পড়েছে এগারোশোর বেশি। তিনি বলেন, এটি এখনকার একটি ট্রেন্ড। যারা একটি চেতনা বা ভাবনাচিন্তার পক্ষের লোক, তার অন্যপক্ষকে টার্গেট করে ফেসবুকে রিপোর্ট করে। অনেক সময় স্বার্থ জড়িত কারণেও ঘটে। তখন ফেসবুক থেকে নোটিশ আসে, লগইন করা সম্ভব হয় না। কিন্তু এভাবে কমেন্টের মাধ্যমে যদি অনেক মানুষের সঙ্গে সংযোগ হয়, তখন সেটি আইডির পরিচিতির জন্য ভালো হয়। তিনি আরো বলেন, এই চিন্তা করেই তিনি ওই স্ট্যাটাসটি দেন। এক হাজার মন্তব্য চেয়েছিলেন কিন্তু ভাবতে পারেনি যে সেটি বারোশো ছাড়িয়ে যাবে। ফেসবুক ঘেঁটে এ রকম আরো অনেকের স্ট্যাটাস দেখা গেছে। সে সব স্ট্যাটাসে যেমন কেউ নানা ধরণের মন্তব্য লিখেছেন, আবার কেউ শুধুমাত্র ইমোজি পোস্ট করেছেন। আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী রায়ান কামাল নিজের ছবির সঙ্গে লিখেছেন, আইডিতে রিপোর্ট হচ্ছে, কমেন্টে রেস্পন্স করুন। সঙ্গে চিন্তার ইমোজি। বরগুনার একজন তরুণী তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আইডি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, স্টিকার কমেন্ট প্লিজ। সেখানে স্টিকার দিয়ে তার অসংখ্য বন্ধু-স্বজন কমেন্ট করেছেন, যার সংখ্যা কয়েকশো ছাড়িয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনাগ্রহী এই তরুণী বলেন, কিছুদিন আগে তিনি ফেসবুক থেকে নোটিশ পান যে, তার আইডিতে কেউ প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে। এরপর তার একজন বন্ধুর পরামর্শে তিনি ফেসবুকে এই স্ট্যাটাসটি লেখেন, যাতে কোন কারণে আইডি হারিয়ে গেলেও সেটি পুনরুদ্ধার করা যাবে। কিন্তু এ রকম মন্তব্যে আদৌ কি কোনো কাজ হয়। এ ধরণের মন্তব্যের মাধ্যমে ফেসবুকে সংযোগ বাড়তে পারে, তবে আইডি রক্ষা বা নিরাপত্তার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কে নেই বলেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে ফেসবুক নিয়ে কাজ করে ইউল্যাবের একটি টিম ফ্যাক্ট ওয়াচের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুমন রহমান বলেন, আমরাও খেয়াল করেছি, কিছুদিন পরে পরে এ রকম স্ট্যাটাস দেয়ার ঘটনা ঘটছে। যারা এসব লিখছেন, তারা খুব ফেসবুক সেলিব্রেটিও নন। কিন্তু আইডি হ্যাকিং থেকে বাঁচাতে বা আইডির ঝুঁকি বাঁচাতে যেসব লেখা হচ্ছে। তার সঙ্গে ফেসবুকের কাজের আসলে কোন সম্পর্ক নেই। কারণ ফেসবুক এভাবে কাজ করে না। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কেউ যদি কারো ফেসবুক আইডি হ্যাক করতে চায়, তাহলে সেটার সঙ্গে এভাবে স্ট্যাটাসে মন্তব্য করা না করার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। তিনি নানা কৌশলে সে চেষ্টা করবে। আবার ফেসবুকে রিপোর্ট করার কারণে কারো আইডি যদি ফেসবুক বøক করে দিতে চায়, সেজন্য নিয়ম অনুযায়ী নোটিশ পাঠাবে, তারপর ব্যবস্থা নেবে। সেটা ফিরিয়ে আনারও নানা পদ্ধতি আছে। সুতরাং কমেন্ট করে সেক্ষেত্রে প্রভাবিত করার কোনো ব্যাপার নেই। সহজে জনপ্রিয়তা অর্জন বা নিজের প্রোফাইলে লাইক/কমেন্ট বাড়াতে অনেকে এ ধরণের কাজ করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কারণ যারা এ ধরণের স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তারা কেউই ফেসবুকে খুব পরিচিত নন। ফেসবুক আইডি নিরাপদ রাখতে ফেসবুকের পাতায় বেশ কিছু পরামর্শ রয়েছে। তার মধ্যে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করতে বলা হয়। এর মাধ্যমে ফেসবুকে প্রবেশ করতে হলে দুইটি মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। এর মধ্যে যেমন প্রচলিত পাসওয়ার্ড দিতে হবে, তেমনি মোবাইলের ম্যাসেজে আসা কোড বা অথেনটিকেটর থেকে পাওয়া কোড প্রবেশ করিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে ফেসবুক আইডির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে জানিয়েছে ফেসবুক। সূত্র: বিবিসি বাংলা