অবশেষে মুক্তি পেলেন পাটকল শ্রমিক জাহালম
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:৪১ এএম
জাহালম। ফাইল ছবি।
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে নিরপরাধ পাটকল শ্রমিক জাহালম অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল রবিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ থেকে মুক্তি পান তিনি। জাহালমের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। এ সময় কারাফটকে জাহালমের ভাই সাহানুর মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আলোচিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় ভুল আসামি জাহালমকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।
কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, রাতে জাহালমের মুক্তি সংক্রান্ত কাগজপত্র আদালত থেকে কাশিমপুর কারাগারে এসে পৌঁছে। পরে তা যাচাই-বাছাই ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এর আগে গত ২০১৬ সালের ৬ জুন নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জাহালমকে। এরপর তাকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
মুক্তিলাভের পর এক প্রতিক্রিয়ায় জাহালম জানান, দুদুকের ভুলে তিনি বিনা কারণে তিন বছর জেল খেটেছেন। তাই দুদকের কঠিন বিচার চান। সঠিক তদন্ত করে যেন আসামি ধরা হয় এই আহবান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'আমি কখনও চিন্তা করিনি যে এত মামলা মোকাবেলা করে জীবনে কোনোদিন মুক্তি পাব। জেলে অনেক কষ্টে দিন কেটেছে। আমি ক্ষতিপূরণ চাই।' তিনি এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুবিচার দাবি করেন। এ ঘটনায় তিনি উচ্চ আদালতকে ধন্যবাদ জানান।
এ সময় তার ভাই সাহানুর মিয়া বলেন, যাদের ভুলের কারণে তার ভাই জেল খেটেছে তাদের বিচার এবং ক্ষতিপূরণ চাই। আমাদের পরিবার মামলা চালাতে গিয়ে আজ নি:স্ব, আমরা সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।
কারাফটক থেকে ভাই জাহালম বেরিয়ে আসায় খুশিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সাহানুর। পরে একটি মাইক্রোবাসযোগে তারা কারা এলাকা ত্যাগ করেন।
রবি বার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জাহালমকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। নিরীহ শ্রমিক জাহালমকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে রাখার ঘটনায় দুদকের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেন আদালত। আদালত বলেন, বিনা দোষে জাহালামকে কারাগারে রাখা আরেকটি জজ মিয়ার নাটকের মতো ঘটনা।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে : ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ প্রকাশিত শিরোনামের ওই প্রতিবেদনটি গত সোমবার আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অমিত দাসগুপ্ত।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার দুদকের মহাপরিচালক (আইন) মইনুল ইসলাম, দুদকের মামলার বাদী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়রে সচিবের একজন প্রতিনিধি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের মনোনীত প্রতিনিধিকে আদালত তলব করে। সকালে ওই চারজন হাইকোর্টে হাজির হন।
গত ২৮ জানুয়ারি দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি দৈনিকে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলায় নিরপরাধ জাহালমের জেলখাটা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আবু সালেকের (মূল অপরাধী) বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।