×

মুক্তচিন্তা

জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৪৭ পিএম

স্কুলজীবনেই বাবার টাকা লোপাট করে ‘সবার উপর’ সিনেমাটি ৭ বার দেখেছিলাম। আমি একা নই। আরো অনেকেই। অভিনেত্রী ছিলেন পাবনা শহরের হেমসাগর লেনের সুচিত্রা সেন। নায়ক উত্তম কুমার, সে কালের অধিকাংশ ছায়াছবিতে উত্তম-সুচিত্রা জুটি থাকলে ছবিটি বাজার পেতো। সিনেমার একটি গানের চরণ আছে, যেটি বর্তমান ঐক্যজোটের জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন। ‘জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া’। গেয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, পরিচালক অগ্রদূত।

‘নস্টালজিয়া’ শব্দটির যথাযথ বাংলায় হয়তোবা প্রতিশব্দ আছে, অতীতচারিতা, কিছুটা কাছাকাছি হয়তোবা। অতীত নিয়ে মন পোড়ানি, পুরনো সেই দিনের কথা, সেই সব ফেলে আসা দিনের কাছে ফেরার আকুতি। আজকাল সমগ্র পৃথিবীজুড়ে উগ্র জাতীয়তাবাদের যে বাড়বাড়ন্ত- বোধহয় তার অন্যতম চালিকাশক্তি ‘নস্টালজিয়া’।

যে অতীত নিয়ে আমাদের মন পোড়ানি তার নির্মাণ- ইতিহাসের শক্ত/কঠিন ভিতের উপরে যে দাঁড়াতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবু মানব সমাজে নস্টালজিয়া চতুর্পার্শ্বে ঘিরে থাকে দিবানিশি, বিশেষত যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৪০০ সাল নামক কবিতাটি পাঠ করতে গিয়ে লক্ষ করি, নস্টালজিয়ার বিপরীতের একটি আকুল আবেদন।

কবির নিবেদন, শত বছর পরও যেন তাকে আমরা মনে রাখি। কবি জানতেন বাঙালি জাতিটাই বিস্মৃতিপ্রবণ জাতি, তাই তিনি আগামী প্রজন্মের মানুষের কাছে আবেদন-নিবেদন করে জানিয়েছিলেন, তাঁকে যেন শত বছর পরেও আমরা মনে রাখি। হয়তো কবি জানতেন না তাঁকে ছাড়া বাঙালির উপায়ন্তর নেই। জানলে ওই করুণ আবেদনটি তাঁর ১৪০০ সাল কবিতায় করতেন কিনা অন্তত আমার জানা নেই। শুধু জানা আছে বাংলার সূর্যোদয়ে এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত মনে তাঁকে রাখতেই হবে। শিল্প, সাহিত্যে, চিত্রকলায় এবং পড়ালেখায়।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বলেননি কাউকে মনে রাখার কথা। তিনি শুধু জানতেন অক্ষরজ্ঞানহীন বাঙালিদের কীভাবে শিক্ষাদীক্ষায় আলোকিত করা যায়, তাঁর চেষ্টা ছিল, স্বপ্ন ছিল আজীবনের বাঙালিদের কতটা শিক্ষাসহ স্মৃতিপ্রবণ করা যায় শিক্ষার আলোতে, যদি কোনো বাঙালি সেই শিক্ষার আলোতে পূর্ণতা পায়, বিদ্যাসাগরের সেটাই ছিল ইচ্ছা।

মানুষের ইচ্ছার যে শেষ নাই, সেটি বলাই বাহুল্য কারো ইচ্ছা চাঁদে যাবার, কবি হবার, উকিল, ব্যারিস্টার এবং রাজনীতিবিদ হবার, হতেই পারেন বা যেতে পারেন, চাঁদে উকালতি ব্যবসার জন্য, ব্যারিস্টারি করার জন্য যে পরিমাণ আইনজ্ঞ হতে হয়, অনেকেই সেই পরিমাণ আইনজ্ঞ না হয়ে, সেকালের ‘মোক্তার’দের মতো বাধা কয়েকটি গৎ জানলেই, এমনকি ভুল ইংরেজি বলেই, ইংরেজ বিচারকদের বোঝাতে সক্ষম হতেন, তার মক্কেল নিরপরাধ।

যেহেতু সেটি তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল, এন্ট্রান্স পাস অথবা নন এন্ট্রান্স, বোধহয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর সময়কালে বাঙালির লেখাপড়া, লেখা, দেখে নিশ্চিত হয়েছিলেন, বাঙালি জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে, তার সঙ্গে ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। রামমোহন বাবু শিক্ষার পাশাপাশি কিছুটা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তবে প্রবলভাবে নয়। নারী শিক্ষার জন্য দুটি নামই আমাদের শিক্ষা জীবনে শুনিয়েছিলেন গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউটের বাংলার শিক্ষক বিমল ভৌমিক।

বোধকরি তিনিও নস্টালজিয়ায় ভুগতেন, কেননা তাঁর চোখের সামনেই দেশ ভাগ হলো। পাবনা শহরের ‘অরোরা’ সিনেমা হল হয়ে গেল বিহারিদের বাণী সিনেমা হল নতুন নামে, শহরের হামিদ রোডের পশ্চিম পাশের বর্ণমালা ইনস্টিটিউট, তার পশ্চিমে ইছামতী নদী, তারও পশ্চিমে সুভাষ পার্ক একদিন জিন্না পার্ক হয়ে গেল, নিজেদের পৈতৃক হলুদ রঙের তিনতলা বাড়ির আত্মীয়-ভাই-বোন, একদিন রাতের অন্ধকারে পাড়ি দিলেন পশ্চিমবঙ্গে, শুধু আমাদের বিমল স্যার মা আর স্ত্রীকে নিয়ে রয়ে গেলেন, তাঁর ওই পৈতৃক বাড়িতে, রাজনগরের অপূর্ব গোস্বামী- তিনিও রয়ে গেলেন পাবনা শহরেই। গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউশনের অঙ্কের শিক্ষক হয়ে। আরো রয়ে গেলেন ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক শ্রী মথুরা নাথ মুখোপাধ্যায়, (এমএসসি ক্যাল) বাড়ি শহরের কালচাঁদ পাড়ার বুধুরায় চৌধুরীদের পুকুরের পশ্চিম প্রান্তের নিজ দোতলায়।

আমাদের স্কুলে সংস্কৃত পড়াতেন ক্ষিতিশ পণ্ডিত সুশ্রী। টিকিধারী। সুপুরুষ। মহিউদ্দিন আহমেদ রাতের বেলা বিয়ে পড়াতেন কাজি হিসেবে আর দিনের বেলায় আরবি পড়াতেন ওই স্কুলেই। উর্দু পড়াতেন, জিন্না টুপি পরিহিত মৌলানা রাজিউদ্দিন আহমেদ। রাজিউদ্দিন স্যার প্রায়শই বলতেন, জিন্না সাহেব আমাদের মুসলমানদের জন্য বানিয়ে দিয়েছেন সোনার পাকিস্তান।

তিনি কখনোই বলেননি জিন্না সাহেবের সোনার পাকিস্তান বানাতে গিয়ে ১৯৪৬ সালে সমগ্র ভারতে কত লাখ লোক নিহত, আহত হয়েছিলেন, কত লাখ মানুষ পূর্ব বাংলা ছেড়ে, কত লাখ মানুষ পৈতৃক ভিটেমাটি ছেড়ে কলকাতার শিয়ালদহ ইস্টিশনে আশ্রয় নিয়েছিল, এমনকি বলেননি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, হুগলি, বিহার থেকে পূর্ব বাংলা রিফিউজি হিসেবে আশ্রয় পেয়েছিল তারাও হারিয়েছিলেন ঘরবাড়ি, আত্মীয়স্বজন।

‘নস্টালজিয়া’ কমবেশি সেকালের, বিশেষত ব্রিটিশ আমলের যে সব লোকজন ছিলেন। তাদের ভেতরে অনেকেই বলতে শুনেছি- আমাদের ব্রিটিশরাই ভালো ছিল। ছিল দেশে আইন-কানুন। ভালো ছিল বিচারব্যবস্থাসহ মানুষের ভেতরে ছিল ভয়। চুরি, ডাকাতি, ঘুষ খেলে শাস্তি অবধারিত। আমাদের পিতা শেখ মোহাম্মদ হাকিম উদ্দিন তাকেও দেখেছি নস্টালজিয়ায় মাঝে মাঝে ভুগতে।

তার যৌবনের শহর কলকাতাকে নিয়ে। এমনকি পার্ক সার্কাসের বাড়ির হলুদ রং এবং দমদম এয়ারপোর্টের পাশে ৫ কাঠা জলাভূমি তিনি কিনেছিলেন, সে কথা যখন বলতেন, তখন দেখতাম, চোখ ছলোছলো, তার পরেও সুখ্যাতি শুনেছি ব্রিটিশ শাসকদের। তবে কলকাতাই যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শহর সে কথা মেজ কাকা শেখ হাবিবুর রহমান প্রায়শই বলতেন।

তার প্রিয় ছিল, কানন বালার সদ্য মুক্তি পাওয়া সিনেমা এবং মোহামেডান-মোহনবাগান ফুটবল দলের ফুটবল খেলা। মেজ কাকার কাছেই শুনেছিলাম। ফুটবলার আবদুস সামাদ/বাচ্চিখান/হাবিবসহ অজ¯্র ফুটবলারের নাম। ছোট কাকা শেখ আবুল কাশেম, আবু সাঈদ, তিনি ছিলেন নাটকের লোক, কলকাতার বিভিন্ন নাট্য গোষ্ঠীর সঙ্গে অভিনয় করতেন, বিভিন্ন নাট্যমঞ্চে, তারও ছিল প্রচন্ড প্রচন্ড নস্টালজিয়া।

তাদের ভাষায় আরো শুনেছি ১৯৪৬-এর হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গায় কীভাবে কলকাতা থেকে পাবনায় পালিয়ে আসার করুণ কাহিনী। শুনেছি পশ্চিমবঙ্গের সেকালের পুলিশ কর্মকর্তারা জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হুকুম অমান্য করায় ওইদিনে নোয়াখালীর অপরদিকে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে যেতে হয়েছিল না ফেরার দেশে।

কীভাবে কেটেছিল সেই দুর্বিষহ দিন। একদিকে ছিল বন্দেমাতরম, অন্যদিকে জিন্দাবাদ। বেশ কয়েক বছর পর মধ্য পঞ্চাশে এই পূর্ববঙ্গে যে রাজনৈতিক সুবাতাস বইতে শুরু করেছিল সেই সুবাতাসের সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৪৮ সাল থেকেই। ভাষা আন্দোলনের পূর্বেই তৎকালের রাজনীতিবিদের শঙ্কিত হওয়ার অনেক কারণ তাদের মনের ভেতরে সঞ্চিত হতে শুরু করেছিল, তৎকালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতাদের মধ্যে অন্যতম শেখ মুজিব ছিলেন আইন বিভাগের ছাত্র এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীদের ভেতরে অনেকেই ছিলেন, যারা তখনো অনুভব করেননি, সদ্য প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের শাসকদের মনোভাব।

বিশেষত পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মদাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ- যিনি ঢাকায় এসে জানিয়েছিলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা- জনাব জিন্নার সেই উক্তির বিরুদ্ধে তৎকালের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সমবেতভাবে জিন্না সাহেবের উক্তির প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

কয়েক বছর যেতে না যেতেই ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত এবং ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠিত হবার পরে, পূর্ববঙ্গে রাজনীতির ধারাটা ক্রমেই বদলাতে শুরু করেছিল। বিশেষত নুরুল আমিনের মুসলিম লীগের ৫২’র ভাষা আন্দোলনে ছাত্র হত্যাকে কেন্দ্র করেই হয়েছিল নুরুল আমিন সরকারের ভরাডুবি।

ফলে যুক্তফ্রন্ট ভোটে বিজয়ী হলেও সেই বিজয়কে দীর্ঘস্থায়ী হতে না দিয়ে পাকিস্তানের রাজধানী করাচি শহরের একটি সুনির্দিষ্ট সরকারি বাস ভবন থেকে এক জরুরি সমনের মাধ্যমে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন তৎকালের রাষ্ট্রপ্রধান ইস্কান্দার মীর্জা। জনাব মীর্জার রাজত্বকাল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি, ১৯৫৮ সালের কোনো এক শুভদিনে তাকে বিদায় করেছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক জেনারেল সাহেব।

সেই জেনারেল সাহেবই ১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসের কোনো এক শুভদিনে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলেন ইস্কান্দার মীর্জার হাত থেকে। সম্ভবত ২৮ অক্টোবর। করাচির রেডিও পাকিস্তানের বাংলা খবরে জানা গিয়েছিল, পাকিস্তানের একজন নতুন প্রেসিডেন্টের নাম, আইয়ুব খান। জনাব খানের নামের আগে অনেকগুলো বিশেষণ থাকায় তাকে কেউ কেউ উপাধি দিয়েছিলেন লৌহ মানব।

সেই সময়ে পাকিস্তানের রেডিও পাকিস্তান থেকে নিয়মিতভাবে খবর পাঠ করতেন সম্ভবত তাদের ভেতরে ছিলেন নুরুল ইসলাম, মুজিবর রহমান খাঁ। সরকার কবির উদ্দিন এবং আরো অনেকেই। বাঙালি খবর পাঠকদের খবরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ জানতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্টের নাম। ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান।

সেকালে ঘরে ঘরে রেডিও না থাকলেও ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদ, ইত্তেফাক, সংবাদ এবং হামিদুল হক চৌধুরীর পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকা ঢাকা থেকে পাবনায় যেতে ২ দিন লাগতো। পাবনা শহরের বিখ্যাত অন্নদা গোবিন্দ লাইব্রেরিতে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যেতো, কে আগে পড়বে, লাইব্রেরিয়ান বিমল ভৌমিক ছিলেন পাবনা গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক, অপরদিকে বিনা বেতনে ছিলেন বিকেলের দিকে, লাইব্রেরিয়ান।

তখনকার দিনে আমাদের দোহারপাড়ায় ১২-১৪ পরিবারের মধ্যে শুধু মীর সাহেবদের একটি ‘মারফি’ রেডিও থাকায় গ্রামের প্রায় সবাই শুনতে যেতো, করাচি থেকে প্রচারিত বাংলা সংবাদ। সেই ১৯৫৮ সালে আমি ছিলাম পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। আমাদের শিক্ষক বিমল স্যারই একদিন ক্লাসে এসে জানালেন পাকিস্তানে একজন নতুন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তার নাম। বাংলার শিক্ষক, ইংরেজি এবং অঙ্কের শিক্ষক প্রায় সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের ভয়ে।

ক্লাস সেভেন, এইটে পড়াবার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে পাস করা আবদুস সামাদ নামে একজন শিক্ষক এসেছিলেন, তবে তিনি ইংরেজি পড়া না পারলে উত্তম মধ্যম এমনভাবে দিতেন, সেই উত্তম মধ্যমে আমি একবার অজ্ঞান হবার কারণে ভদ্রলোক পালিয়ে গিয়েছিলেন পরে কোটকাচারি যদি হয় সেই ভয়ে।

পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মনে ভয়ের উপদ্রব শুরু হয়েছিল ৬০ দশকের গোড়ার দিক থেকেই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক তুখোড় ছাত্রকে সিএসএস পরীক্ষায় সুযোগ দেয়া হলেও পরবর্তীতে ২০০ বাঙালি পরীক্ষার্থীর ভেতরে জনা তিন-চারেক সুযোগ পেতেন সিএসপি হবার। পশ্চিম পাকিস্তানের বাকি ছাত্ররা বিভিন্ন ক্যাডারে যেতেন। কথাগুলো জানিয়েছিলেন সাবেক সচিব মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন।

১৯৬৫ সালে আমি জগন্নাথ কলেজের ছাত্র হবার সুবাদে একদিন জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগের এবং কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাজিউদ্দিন রাজুর হাত ধরে ২ আনা পয়সার বিনিময়ে ছাত্রলীগের সদস্য হয়ে গেলাম আমিসহ আরো অনেকে। সেই ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তান হেরে গেলেও সেই রেডিও পাকিস্তান করাচি থেকে বাংলার সংবাদ পাঠক জানিয়েছিলেন- পাকিস্তান মেধাকরণ যুদ্ধে জিতেছে।

অচিরেই দিল্লি হয়ে হজরত নিজামউদ্দিনের মাজারে গিয়ে মোনাজাত শেষ করে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শ্রী লাল বাহাদুরের চেয়ার দখল করবে, পাকিস্তানের বীর সৈনিকের কথাটি ডাহা মিথ্যে। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। কলেজে যাওয়ার পথে জীবনে প্রথম টিয়ার গ্যাস খেয়েছিলাম ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে।

লৌহ মানব আইয়ুব খানকে ১৯৬৯ সালে বিদায় করেছিলাম আমরাই। এরপর ১৯৭০-৭১ মুক্তিযুদ্ধ। যাঁর ডাকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তাঁকে এবং তাঁর পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালে।

নস্টালজিয়া মাঝে মাঝে আমাকেও ভীষণভাবে পেয়ে বসে। একদা পাবনা শহরের দুটি সিনেমা হলে প্রায়শই দেখানো হতো। পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত ছায়াছবিগুলো যেমন মধ্য পঞ্চাশের বিখ্যাত ছায়াছবিগুলোর মধ্যে হারানো সুর/পথে হলো দেরী/সবার উপরে/শিল্পী/ঢুলি/চাঁপা ডাঙ্গার বউ। স্কুলজীবনেই বাবার টাকা লোপাট করে ‘সবার উপর’ সিনেমাটি ৭ বার দেখেছিলাম।

আমি একা নই। আরো অনেকেই। অভিনেত্রী ছিলেন পাবনা শহরের হেমসাগর লেনের সুচিত্রা সেন। নায়ক উত্তম কুমার, সে কালের অধিকাংশ ছায়াছবিতে উত্তম-সুচিত্রা জুটি থাকলে ছবিটি বাজার পেতো। তবে সবার ওপর সিনেমার বিশিষ্ট অভিনেতা, ছবি বিশ্বাসের বিখ্যাত একটি ওয়েলস- অনেকেরই হয়তো মনে আছে। ‘ফিরিয়ে দাও আমার ১২টি বছর’।

সবার উপরে সিনেমার গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, তাঁর পৈতৃক বাড়িও পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লায়। সিনেমার একটি গানের চরণ আছে, যেটি বর্তমান ঐক্যজোটের জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন। ‘জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া’। গেয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, পরিচালক অগ্রদূত।

মাকিদ হায়দার : কবি ও প্রাবন্ধিক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App