×

মুক্তচিন্তা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৩ পিএম

সৈয়দ নজরুল ইসলাম

প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৪৬-৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের ভিপি ছিলেন। সে সময়ই তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। ১৯৪৯ সালে সৈয়দ নজরুল ইসলাম পাকিস্তান সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসে (সিএসপি) কর বিভাগে চাকরি লাভ করেন।

১৯৫১ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপনায় যোগদান করেন। ১৯৫৩ সালে ল’ পাস করে ময়মনসিংহ আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন।

তিনি কীভাবে ভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েন সে ব্যাপারে নিজেই বলেছেন, ‘পাকিস্তান হওয়ার পর কোনো Policy declare না করেই তারা এখানে উর্দু চালাতে শুরু করল। স্ট্যাম্প, রেল টিকেট, টাকা, মানি অর্ডার ফরম ইত্যাদিতে।

এই সময় অধ্যাপক আবুল কাসেম ও এ কে এম আহসান দুজন ১৯ আজিমপুরে একসঙ্গে থাকতেন। তারাই এ ব্যাপারে প্রথম উদ্যোগ নেন। আমাদের সঙ্গে SMHall-GiWest House-এর একটা কামরায় একদিন তাঁরা এ নিয়ে আলাপ করলেন। আমরা এরপর ১৯ আজিমপুরে একটি বৈঠকে মিলিত হই।

শামসুল আলম (Assistant Sales Officer, EPIDC), আমি, আবদুল মতিন খান চৌধুরী, এ কে এম আহসান, অধ্যাপক আবুল কাসেম, নুরুল হুদা (ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল) সেখানে ঠিক করলাম যে, এর প্রতিবাদ করতে হবে। তবে এটাও ঠিক হলো যে, সেই প্রতিবাদের আগে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিকতা দিয়ে একটা পুস্তিকা বের করা উচিত। কাসেম সাহেব নিজে লিখতে সম্মত হলেন।

এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে বলা হলে তিনিও রাজি হলেন। আবুল মনসুর আহমদকে চিঠি দেয়া হলে তিনিও একটা লেখা দিলেন। আমরা সেটা বিক্রি করার সময় সবাই সেটা কিনতে চাইত না। অনেকেই আপত্তি করত।’ (সূত্র : ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ- কতিপয় দলিল, ২য় খ-, বদরুদ্দীন উমর : ঢাকা, বাংলা একাডেমি, ১৯৮৫ : পৃষ্ঠা ৩৩৫-৬)

১৯৪৭ সালে সৈয়দ নজরুল ইসলাম তৎকালীন পূর্ব বাংলার ব্যবস্থা পরিষদ সদস্য ও পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্যদের কাছে গমন করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। ৩০ ডিসেম্বর ১৯৪৭ তারিখে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম এতে অন্যতম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদ অধিবেশনে উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকে পরিষদের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দনাথ দত্ত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করলে ২৫ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে আলোচনার দিন তা প্রত্যাখ্যাত হয়।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ তারিখে ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়। ওই ধর্মঘট সফল করার ব্যাপারে অন্যদের সঙ্গে ছাত্রনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের অনন্য ভূমিকা ছিল। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে ব্যাপকভিত্তিক করার জন্য ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ গঠিত হয় দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ কমিটির একজন বলিষ্ঠ নেতা ছিলেন। কমিটি ১১ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে সারাদেশে হরতাল আহ্বান করে। এই হরতাল কর্মসূচিকে বাস্তবায়নের জন্য যারা নিরলসভাবে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন অন্যতম।

ওই হরতাল কর্মসূচিকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য যুক্ত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের স্বাক্ষরে ৩ মার্চ ১৯৪৮ তারিখে পত্রিকায় একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। বিবৃতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সই করেন। ভাষা আন্দোলনের সূচনালগ্নে সৈয়দ নজরুল ইসলামের অবদানের কথা বাংলাদেশ ও জাতির ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল স্মরণীয় বিষয়।

তাই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনাপর্বে যাদের অবিস্মরণীয় সাংগঠনিক তৎপরতায় বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ভিত্তি রচিত হয়েছিল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন তাদেরই একজন। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক চেতনাবোধের উদ্বোধন হয়েছিল তার এবং সে কারণে মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির নিঃস্বার্থ সেবকরূপে গড়ে উঠেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাতৃভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠার একজন একনিষ্ঠ কর্মী ও পরে নেতা হিসেবে গড়ে উঠেন এবং কালে তা পূর্ণতা লাভ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হন।

আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, জাতীয় জাগরণের ইতিহাস ও স্বাধীনতার ইতিহাসে তিনি একজন প্রাণপুরুষ হিসেবে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।

এম আর মাহবুব ও সালেক নাছির উদ্দিন : লেখকদ্বয় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস গবেষক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App