×

জাতীয়

নির্বাচন ঘিরে সরগরম ঢাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৪:২৯ পিএম

নির্বাচন ঘিরে সরগরম ঢাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন রক্ত সঞ্চালন। সরগরম ক্যাম্পাসের সর্বত্র ডাকসু নির্বাচনের সুর। নির্বাচনের এই জোয়ারে ভাসছেন ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই। গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভায় ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনী ও নির্বাচনী আচরণবিধি চূড়ান্ত করার পর এখন কারা হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি এ নিয়ে চলছে আলোচনা ও হিসাব-নিকাশ। দীর্ঘ আড়াই যুগ পর অনুষ্ঠেয় কাক্সিক্ষত এ নির্বাচনে কয়টা প্যানেল হচ্ছে, কোন প্যানেলে কারা নির্বাচন করছেন এসব আলোচনাই চলছে ক্যাম্পাসের মাঠে, চত্বরে, চায়ের আড্ডায়। সরজমিনে দেখা যায়, ডাকসু নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রণয়ন, প্রধান ও অন্যান্য রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনী আচরণবিধির খসড়া প্রণয়নসহ বিভিন্ন কাজ শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। ছাত্রনেতারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত এবং সাধারণ ছাত্রদের কাছে জনপ্রিয় ও বিজয়ী হবেন, এমন নেতাদেরই প্রার্থী করা হবে। ছাত্র রাজনীতির বাইরে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীকেও প্রার্থী করা হতে পারে। মূলত ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারটি প্যানেলে। এরমধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনগুলো এখন ব্যস্ত প্যানেল গোছাতে। প্রতিদিন কর্মিসভা, হলসভা, বৈঠক করছেন তারা। দু’চার দিনের মধ্যেই প্যানেল ঠিক হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ও অনাবাসিক সব নিয়মিত শিক্ষার্থীই ডাকসুর সদস্য। এজন্য তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আর্থিক প্রাপ্য পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া ডাকসু নির্ধারিত নিবন্ধন ফি দিয়ে অনিয়মিত শিক্ষার্থীরাও সদস্য হতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরও নিবন্ধন ফির বিনিময়ে ডাকসুর সদস্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই প্রক্রিয়া দুই ধরনের। একটি সাধারণ সদস্য ও আরেকটি আজীবন সদস্য। ডাকসুর কার্যনির্বাহী সংসদ চাইলে দেশের যেকোনো বিশিষ্ট নাগরিককে ডাকসুর আজীবন সদস্য ঘোষণা করতে পারে। তবে বিভিন্ন বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্স বা অন্যকোনোভাবে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখা শিক্ষার্থীরা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন না। এ ছাড়া ৩০ বছরের বেশি কেউ ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন না। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মতামতের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। যারা সদস্য হতে পারবেন, তারা প্রার্থীও হতে পারবেন। বয়সের সঙ্কট নেই ছাত্রলীগে : বয়সের সঙ্কট না থাকায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে হল কমিটির সব ছাত্রই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে দক্ষ, যোগ্য, সাংগঠনিক এবং জনপ্রিয় মুখকেই প্রার্থী দেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম এই সংগঠনটি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাবি শাখা সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-কৃষিশিক্ষা বিষয় সম্পাদক আসিফ উদ্দিন আহমেদ, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল, শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজার নাম আলোচনায় রয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন ভোরের কাগজকে বলেন, ছাত্রলীগের সবাই ২৯ বছরের নিচে হওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রলীগের সব শীর্ষ নেতাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে এখনো প্যানেল চ‚ড়ান্ত হয়নি। নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সার্বিক প্রস্তুতি অত্যন্ত ভালো। হল সংসদের প্রস্তুতিও ভালো। আদুভাইদের দখলে ছাত্রদল : ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির অধিকাংশ নেতাই নির্বাচনের অযোগ্য। ছাত্রত্ব না থাকা, বয়সের সীমাবদ্ধতার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না অনেকেই। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রের তালিকায় নেই। এ ছাড়া এদের বয়সও ৩০-এর উপরে। ফলে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান রাফসান, সূর্য সেন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহফুজ চৌধুরী, তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ, ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরে আলম ভুঁইয়া ইমন, শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বোরহান উদ্দীন নয়নের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের বাধার কারণে অনেক নেতাকর্মীর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়েছে। অনেকেই নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। প্রিয়মুখ খুঁজছে বাম প্রগতিশীল জোট : ডাকসু নির্বাচনে ভিন্ন কৌশলে হাঁটছে ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল জোট। ভিপি এবং জিএসের মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজনীতির বাইরে জনপ্রিয় কোনো শিক্ষার্থীকে প্রার্থী করা হতে পারে। প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া বিনয়ী, নম্র এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন শিক্ষার্থীকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি পদে মনোনয়ন দেয়ার আলোচনা চলছে। নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা, সাম্রাজ্যবিরোধী ছাত্র ঐক্য, পাহাড়ি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের জোটে আনা হবে। এ ছাড়া টিএসসির সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ও পাহাড়ি ছাত্র সংগঠনগুলোকেও প্যানেলে যুক্ত করতে আলোচনা চলছে। এদিকে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র হওয়ায় প্রার্থী হতে পারবেন না ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি জি এম জিলানী। এক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ঢাবি সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাস, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব গান্ধী রায়, ঢাবি সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক ইশতিয়াকের নাম আলোচনায় রয়েছে। জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী ভোরের কাগজকে বলেন, আমি নির্বাচনে অংশ নেব। ভিপি পদেই করতে চাই। অবশ্য জোটের সঙ্গে আলোচনার পর চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ ব্যাপারে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, হল সংসদের জন্য প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করা হচ্ছে। সেন্ট্রালের জন্য প্রস্তুতি চলছে। নিজেদের প্রার্থী ঠিক করে জোটের সঙ্গে আলোচনা করে প্যানেল করা হবে। দুচার দিনের মধ্যে প্যানেল চ‚ড়ান্ত হবে। প্যানেলের নারী প্রার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য থাকবে। তবে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটছে না মনে করেন বাম সংগঠনের এই নেতা। কোটা আন্দোলনকারীদের একক প্যানেল : সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে একক প্যানেল দেবে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফরম। কোটা আন্দোলনকারীরা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ৪০ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ১৮ জনের ঢাবির ছাত্রত্ব রয়েছে। এদের মধ্যে ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রত্ব না থাকায় নির্বাচনের অযোগ্য আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। এক্ষেত্রে যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, রাশেদ খান, ফারুক হাসান, মাহফুজ খান, বেলাল, সোহরাব হোসেন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। এ ব্যাপারে যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর ভোরের কাগজকে বলেন, আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ছাড়া আন্দোলনে যুক্ত সবাই প্রার্থী হতে পারবেন। তবে প্যানেল এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি। ক্যাম্পাসের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিচিত মুখ যারা রয়েছেন তাদেরও আমরা আহ্বান জানাব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App